বিহার রাজনীতি: লালু-রাবড়ীর আমন্ত্রণ, নীতীশের দ্বিধা, এবং এনডিএ-র ফাটল

বিহার রাজনীতি: লালু-রাবড়ীর আমন্ত্রণ, নীতীশের দ্বিধা, এবং এনডিএ-র ফাটল
সর্বশেষ আপডেট: 12-03-2025

বিহারের রাজনীতিতে উথাল-পাতালের ধারা অব্যাহত। আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ী দেবীর দেওয়া ‘রাজনৈতিক আমন্ত্রণ’ ক্ষমতার কড়িগুলিতে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।

পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে উথাল-পাতালের ধারা অব্যাহত। আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ী দেবীর দেওয়া ‘রাজনৈতিক আমন্ত্রণ’ ক্ষমতার কড়িগুলিতে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। অন্যদিকে, তাঁদের পুত্র ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের অবস্থান তাঁদের পিতামাতার থেকে আলাদা বলে মনে হচ্ছে। এদিকে, এনডিএ-তে আসন বণ্টন নিয়ে টানাপড়েন চলছে এবং কংগ্রেসও এককভাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিহারের রাজনীতিতে এই উথাল-পাতাল অনেক নতুন সমীকরণের জন্ম দিতে পারে।

নীতীশকে আমন্ত্রণ, কিন্তু তেজস্বীর আক্রমণ

লালু যাদব পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে মহাজোটে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে, নীতীশ কুমার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেননি, বরং তা হালকাভাবে এড়িয়ে গেছেন। আকর্ষণীয় ব্যাপার হল, যেখানে লালু-রাবড়ী নীতীশ কুমারের জন্য মহাজোটের দরজা খোলা রাখছেন, সেখানে তেজস্বী যাদব নীতীশ সরকারের উপর অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তেজস্বী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বৃদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, এখন সরকার নৌকরশাহ চালাচ্ছে।

এনডিএ-তে আসন বণ্টনের টানাপড়েন

এনডিএ-তে আসন বণ্টন নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। জেডিইউ, বিজেপি, এইচএএম, আরএলএসপি এবং এলজেপি (আর)-এর মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করা কঠিন হচ্ছে। নীতীশ কুমারের লক্ষ্য ১২০-র বেশি আসন জয় করা, কিন্তু বিজেপি এই গণিতে একমত নয়। এই টানাপড়েনের মধ্যে লালু যাদব এনডিএ-র ফাটলের সুযোগ নিতে চাইছেন।

কি পুনরায় নীতীশের সিদ্ধান্ত বদলাবে?

নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখে এই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, তিনি কি পুনরায় পক্ষান্তর করতে পারেন? এর আগেও তিনি বার বার বিজেপি ও আরজেডির মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য যে, "বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি পার্লামেন্টারি বোর্ড ঠিক করবে" জেডিইউ-কে অস্বস্তিতে ফেলেছে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা বিজয় সিংহ বলেছেন, "অটলজীর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে বিহারে বিজেপির পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন।" এই বক্তব্যগুলি জেডিইউ ও বিজেপির মধ্যে ফাটল আরও গভীর করেছে।

লালুর রাজনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যতের কৌশল

বিহারে কংগ্রেসের কৌশলও মহাজোটের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। কংগ্রেস এখন এককভাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার ফলে আরজেডির অবস্থান দুর্বল হতে পারে। যদি কংগ্রেস মহাজোট থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে বিরোধী ঐক্যে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। লালু যাদব যদিও অসুস্থ, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বিহারের জনগণের কাছে মহাজোটকে একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে চান।

তিনি ‘সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তাড়ানোর’ কথা বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে বড় মোর্চা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে, তেজস্বী যাদব যুব ও কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলিতে ফোকাস করছেন, যাতে তিনি তাঁর আলাদা রাজনৈতিক অবস্থান স্থাপন করতে পারেন।

কি বিহারের রাজনীতিতে আবার বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে?

বিহারের রাজনীতিতে জোট ও দলবদলের খেলা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। লালু যাদবের কৌশল, নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বিজেপি-জেডিইউ-এর পারস্পরিক সমীকরণ ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কে জয়ী হবে তা নির্ধারণ করবে। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বিহারের রাজনীতিতে আগামী কয়েক মাসে অনেক বড় পরিবর্তন দেখা যাবে।

Leave a comment