বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে ইউটিউবার ও সমাজকর্মী মনীষ কাশ্যপ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন।
পাটনা: বিহারের রাজনৈতিক উত্তাপ আবারও তীব্র হয়েছে, আর এবার শিরোনামে রয়েছেন ইউটিউবার থেকে নেতা হওয়া মনীষ কাশ্যপ, যিনি বিজেপি থেকে পদত্যাগ করে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন এক ধাক্কা এনে দিয়েছেন। তিনি আবেগঘন স্বরে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এই ঘোষণা করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি বিহারে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে মনীষ কাশ্যপের এই পদক্ষেপকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেসবুক লাইভের সময় তার ভাষা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ছিল না, বরং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উদ্বেগের সাথে জড়িত ছিল। তিনি বলেছেন যে, যখন তিনি নিজেই দলে থাকাকালীন জনতার সাহায্য করতে পারছিলেন না, তখন তাকে এখন স্তরে লড়াই করতে হবে।
মোদীজী, অলৌকিক কাজ করে দিন: এক আবেগঘন অনুরোধ
মনীষ কাশ্যপ তার লাইভ ভিডিওতে বারবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে আবেদন করেছেন। তিনি বারবার বলতে দেখা গেছে, মোদীজী অলৌকিক কাজ করে দিন, একবার বিহার ঘুরে আসুন। তিনি গামছা বিছিয়ে এই দাবি জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী বিহারে এসে এখানকার স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অভিবাসন ইত্যাদি সমস্যা দেখবেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন যে, তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করুন এবং কোনও সরকারি হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করুন। তার মতে, সড়ক ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি কাজের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কিন্তু টোল ট্যাক্স, তেলের দাম এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তোলাও জরুরী।
মনীষ ব্যঙ্গাত্মক স্বরে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, যদি গুজরাটে সাদা নম্বর প্লেটে টোল ট্যাক্স না লাগে, তাহলে বিহারে কেন লাগে? কেন বিহারেই পেট্রোল-ডিজেল সবচেয়ে মোটা? এই প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি বিজেপির নীতির উপর পরোক্ষ আক্রমণ করেছেন।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঙ্গিত: ‘ব্র্যান্ড বিহার’ এর সন্ধান
মনীষ কাশ্যপ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি আর চুপ করে বসে থাকবেন না। তিনি জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলবেন, কিন্তু এবার হয়তো দলের সীমার বাইরে বেরিয়ে। তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, তিনি একটি নতুন প্ল্যাটফর্মের সন্ধানে আছেন অথবা নিজের কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ শুরু করতে পারেন। তিনি জনতার কাছে মতামত চেয়েছেন যে, তাকে কোথা থেকে নির্বাচন লড়াই করা উচিত, এবং তিনি কি কোনও দলের সাথে যুক্ত হয়ে লড়াই করবেন নাকি নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
এই বক্তব্য মনীষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, তিনি এখন নিজেকে বিহারের রাজনীতিতে একজন স্বাধীন ও সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি এটাও বলেছেন যে, তিনি ‘ব্র্যান্ড বিহার’ সম্পর্কে কথা বলতে চান, অর্থাৎ এমন একটি বিহার যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এনডিএ-র দুর্গ ভেঙে দেবো: বড় দাবি, সরাসরি চ্যালেঞ্জ
মনীষ কাশ্যপ চম্পারণ এবং মিথিলা ইত্যাদি এনডিএ-র শক্তিশালী দুর্গ সম্পর্কেও বড় দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এখন তিনি এই অঞ্চলে এনডিএ-র দুর্গ ধ্বংস করে দেবেন। তিনি বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে-র উপর সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন যে, যদি মন্ত্রী কিছুটা গুরুত্ব দেখাতেন তাহলে মুজ্জফরপুরের মেয়ের মৃত্যু ঠেকানো যেত।
তিনি এটাও বলেছেন যে, বিহারের স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, যার উন্মোচন তিনি খুব শীঘ্রই করবেন। মনীষের মতে, তার লড়াই কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে নয়, বরং সেই দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার সাথে, যা জনতার মৌলিক চাহিদাকে উপেক্ষা করছে।
আত্মত্যাগ নাকি রাজনৈতিক পরিকল্পনা?
মনীষ কাশ্যপ বারবার বলেছেন যে, তিনি দলের জন্য তন-মন-ধন দিয়ে অবদান রেখেছেন, কিন্তু তাকে শুধুমাত্র উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে বর্জন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নন, বরং একজন সচেতন নাগরিক, যিনি তার রাজ্যের জন্য উন্নত ব্যবস্থা চান। এটা বলা কঠিন যে মনীষের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আবেগপ্রবণ ছিল নাকি এর পিছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। কিন্তু এটা অবশ্যই স্পষ্ট যে, তিনি আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে নিজেকে একজন স্বাধীন রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার শুরু করে দিয়েছেন।