তুরস্কের পাকিস্তান সমর্থন: ভারতে ব্যাপক বর্জন আন্দোলন

তুরস্কের পাকিস্তান সমর্থন: ভারতে ব্যাপক বর্জন আন্দোলন
সর্বশেষ আপডেট: 15-05-2025

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে তুরস্ক খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানের সমর্থন করেছে এবং এমনকি ড্রোন-সহ সামরিক সরঞ্জামও সরবরাহ করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় নাগরিকদের মনোভাব ক্ষুণ্ণ করেছে। ফলস্বরূপ, দেশজুড়ে তুরস্ক বর্জনের ঢেউ তীব্র হয়ে উঠেছে। ভারতীয়রা কেবল তুরস্কে ভ্রমণ করা বন্ধ করেনি, বরং বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করার সংকল্প নিয়েছে। জনগণের বার্তা স্পষ্ট – যে দেশ শত্রুর সঙ্গে থাকে, তার স্বাগত নেই!

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতি যুদ্ধসদৃশ হয়ে উঠেছে, যেখানে উভয় দেশের মধ্যে ড্রোন হামলা পর্যন্ত হয়েছে। এমন সময়ই চমকপ্রদ খবর বেরিয়ে এসেছে যে, পাকিস্তানকে হামলার জন্য ড্রোন তুরস্ক সরবরাহ করেছে। এটি সেই তুরস্ক যাকে ভারত সময়ে সময়ে সাহায্য করেছে।

তুরস্কের এই পদক্ষেপকে এখন ভারতীয় জনতা বন্ধুত্বের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছে। মানুষ খোলাখুলিভাবে রাগ প্রকাশ করছে এবং তুরস্কের ভ্রমণ ও বাণিজ্যের দেশব্যাপী বর্জন শুরু হয়ে গেছে। এখন এই বিরোধ কেবল কূটনৈতিক নয়, জন আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুরস্কের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা

তুরস্কের অর্থনীতিতে ভারতীয় পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। গত ছয় দিনে ভারত থেকে তুরস্ক ও আজারবাইজান ভ্রমণের প্রায় ৫০-৬০% বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।

এমএমটি-র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, ভারতীয় জনতা তুরস্কের সম্পূর্ণ বর্জন করেছে। তিনি বলেছেন, "আমরা আমাদের দেশ ও সেনার সাথে পুরো শক্তি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এবং তুরস্ক-আজারবাইজান ভ্রমণ বুকিং বাতিলের সমর্থন করি।" এই কারণেই তাদের প্ল্যাটফর্মে তুরস্ক ও আজারবাইজান সংক্রান্ত সকল ভ্রমণ অফার স্থগিত করা হয়েছে।

জেএনইউও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে – তুরস্কের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট সমর্থন জানিয়ে ইনোনু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চলমান সকল চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে।

জেএনইউ তাদের আনুষ্ঠানিক এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছে,

“Nation First — আমরা সর্বদা আমাদের দেশের সাথে আছি।”

ক্যাট বর্জন অভিযানকে আরও শক্তিশালী করেছে, তুরস্ক-আজারবাইজান-চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

ভারতের প্রধান ব্যবসায়িক সংগঠন, কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (ক্যাট) চীন, তুরস্ক ও আজারবাইজান বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। ক্যাটের অভিযোগ, এই দেশগুলি পাকিস্তানকে খোলাখুলি সমর্থন করেছে, যার ফলে ব্যবসায়ীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ক্যাট ভ্রমণ ও ট্যুর অপারেটর সংগঠনের সাথে মিলে এই বর্জন অভিযানকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছে। এর জন্য তারা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও শ্রেণীর সাথে যোগাযোগ করে এই আন্দোলনকে আরও তীব্র করবে।

ক্যাটের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদনী চৌক থেকে সাংসদ শ্রী প্রবীণ খান্ডেলওয়াল জানিয়েছেন যে, ২০২৪ সালে তুরস্কে মোট বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৬২.২ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক ছিল। এই সংখ্যা দেখায় যে, ভারতের বর্জন তুরস্কের পর্যটন শিল্পে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তুরস্কের বাণিজ্যে বড় ধাক্কা – ভারত আমদানিতে ব্রেক বসিয়েছে

২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারত তুরস্ক থেকে মোট ২,৪৮২টি পণ্য আমদানি করেছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৩.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে লবণ ও প্লাস্টারিং উপকরণ (২৩৫ মিলিয়ন ডলার), অকার্বনিক রাসায়নিক (১৮৮ মিলিয়ন ডলার), খনিজ জ্বালানী ও তেল (১.৮ বিলিয়ন ডলার), পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরের যন্ত্রাংশ (৩১১ মিলিয়ন ডলার), প্রাকৃতিক ও মূল্যবান মুক্তা (১৩২ মিলিয়ন ডলার) এবং পশুপালন পণ্য (১৪৯ মিলিয়ন ডলার)।

তবে, এখন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আপেল সহ তুরস্ক থেকে অনেক পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, তুরস্ক পাকিস্তানকে ড্রোন সরবরাহ করে ভারতের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। এই বাণিজ্য ও ভ্রমণ বর্জন তুরস্কের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a comment