বলিউডে অনেক সুপারস্টার আছেন, কিন্তু যখন মহানদের কথা বলা হয়, তখন রাজেশ খান্না এবং শাহরুখ খানের নাম সবার আগে আসে। কিন্তু এই দুই তারকার আগেও একজন সুপারস্টার ছিলেন, যিনি নিজের প্রতিভার জোরে মানুষের মন জয় করেছিলেন।
Bollywood: ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস অনেক তারকা এবং অভিনেতায় ভরা, কিন্তু যদি প্রথম সুপারস্টারের কথা বলি, তাহলে প্রথমেই প্রীতিরাজ কাপুরের নাম আসে। তিনি কেবল কাপুর পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না, বরং ভারতীয় চলচ্চিত্রে নিজের অনন্য অবদানের জন্যও পরিচিত ছিলেন। তার গল্প একজন এমন যুবকের, যিনি সাহস এবং প্রতিভার বলে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে নিজের এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন।
শুরুটা অসাধারণ এক ঘটনা
১৯২৮ সালের কথা, যখন একজন লম্বা-চওড়া যুবক বম্বে টকিজের অফিসে ঢুকে পড়ল। সে সময় সেখানে একজন কঠোর পাহারাদার ছিল, যে কাউকে ভিতরে যেতে দিত না। কিন্তু এই যুবক তার মাতৃভাষা পাশতো ব্যবহার করে পাহারাদারকে বোকা বানিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। এই যুবক ছিলেন কেউ নয়, প্রীতিরাজ কাপুর। এই অনন্য প্রবেশের ফলে তিনি বিনা বেতনে এক্সট্রার কাজ পেলেন। প্রথম দিনগুলো কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
কঠোর পরিশ্রমের ফল
প্রীতিরাজ কাপুর ১০ দিন কাজ করলেন এবং এগারো দিনে তাকে পরের ছবির জন্য নায়ক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করা হল। তাঁর করিশ্মা এবং আত্মবিশ্বাসের বলে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি নায়কের ভূমিকা পেয়ে গেলেন। এই যাত্রা কেবল তার জন্যই নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রথম ছবির গল্প
প্রীতিরাজ কাপুরের প্রথম ছবির নির্মাণের সময় একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। একটি নতুন ছবির শুটিং শুরু হতে চলেছিল, কিন্তু নায়ক অনুপস্থিত ছিল। ক্ষুব্ধ পরিচালক নায়িকাকে সেইসব এক্সট্রা শিল্পীদের কাছে পাঠালেন যারা অপেক্ষা করছিলেন। পরিচালক বললেন, তিনি তাদের মধ্য থেকে নিজের প্রধান চরিত্র বেছে নেবেন। নায়িকা সঙ্গে সঙ্গেই প্রীতিরাজের দিকে ইঙ্গিত করলেন, এবং এভাবেই তিনি থিয়েটার মঞ্চ, বড় পর্দা এবং ব্যক্তিগত জীবনে একজন অসাধারণ শিল্পী হিসেবে তার যাত্রা শুরু করলেন।
থিয়েটার এবং চলচ্চিত্রে সাফল্য
প্রীতিরাজ কাপুরের থিয়েটারেও একটি বিশেষ পরিচয় ছিল। 'পাঠান' এবং 'শাইলক' নাটকে অভিনয় করে তিনি সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার দক্ষতা তাকে নির্বাক যুগের একজন প্রধান অভিনেতা করে তুলেছিল। ১৯৩১ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় কথাচিত্র 'আলম আরা'-তে অভিনয় করেন, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি নতুন দিক নির্দেশ করে।
রাজাদের চরিত্রে পরিচয়
প্রীতিরাজ কাপুর অনেক ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। সোহরাবে মোদির ছবি 'সিকান্দার'-এ তিনি গ্রীকের চরিত্রে অভিনয় করে ১৯৪১ সালে আলোচনায় আসেন। পরে বহু বছর পর 'সিকান্দার-এ-আজম'-এ তিনি নিজেই পোরাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। যদিও তাকে সবচেয়ে বেশি 'মুঘল-এ-আজম'-এ বাদশাহ আকবরের চরিত্রের জন্যে স্মরণ করা হয়। তিনি রাজা দশরথ, রাবণ, অর্জুন এবং কর্ণের মত চরিত্রও অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনীত সকল রাজার চরিত্র চলচ্চিত্রে তাঁর অভাবনীয় দক্ষতার প্রমাণ।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অবদান
প্রীতিরাজ কাপুরের জীবন কেবল চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতৃপুরুষদের একজন ছিলেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন।
প্রীতিরাজ কাপুর সবসময় তার কর্মজীবনে সততা এবং নীতিগততাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল একজন অভিনেতার শুধু অভিনয় করা উচিত নয়, বরং সমাজের সমস্যাগুলি বুঝতে এবং সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করা উচিত। তিনি তার সন্তানদেরও এটাই শিক্ষা দিয়েছিলেন, যার ফলে তার ছেলেরাও চলচ্চিত্র শিল্পে নিজেদের পরিচয় তৈরি করেছে।
সম্মান এবং পুরস্কার
১৯৬৯ সালে প্রীতিরাজ কাপুরকে ভারত সরকার পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করে, যা তার শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি অবদানের স্বীকৃতি। এছাড়াও, ১৯৭১ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান।