প্রয়াগরাজে ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ এখন তার শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আস্থা, আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির এই মহাসাঙ্গমে এখন পর্যন্ত ৬২ কোটিরও বেশি ভক্ত পবিত্র গঙ্গায় স্নান করেছেন এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, অর্থাৎ মহাশিবরাত্রির শুভ দিনে হতে চলা শেষ রাজকীয় স্নানের মধ্যে এই সংখ্যা ৬৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভক্তদের জন্য এই অমৃত স্নান কোনও দৈব উপলক্ষ্যের চেয়ে কম নয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে সংগমে স্নান করলে সকল পাপ ধ্বংস হয়, পুণ্য লাভ হয় এবং মোক্ষের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
মহাকুম্ভের শেষ স্নানের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মে গঙ্গাকে মোক্ষদায়িনী ও পাপবিমোচনী বলা হয়েছে। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, মহাকুম্ভের সময় গঙ্গায় স্নান করলে সাত জন্মের পাপ ধ্বংস হয় এবং ব্যক্তি দিব্য শক্তি লাভ করে।
"স্নানেন গঙ্গা তব পাপসংহতিঃ
জনমান্তরং মুক্তিমুপৈতি মানবঃ।"
অর্থাৎ, গঙ্গাস্নানে মানুষ সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।
গঙ্গাস্নানের পদ্ধতি: কিভাবে পুণ্যলাভ হবে?
১. স্নানের পূর্বে সংকল্প করুন: গঙ্গায় স্নান করার আগে "ॐ নমঃ শিবায়" জপ করে সংকল্প করুন যে আপনি আত্মিক শুদ্ধির জন্য স্নান করছেন।
২. তিনবার ডুব দিন: শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে তিনবার গঙ্গায় ডুব দিলে দেহ, মন ও আত্মার শুদ্ধি হয়।
৩. গঙ্গা মন্ত্র জপ করুন
স্নানের সময় এই মন্ত্র অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
"গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাভেরী জলে অসমিন সন্নিধিং কুরু।।"
৪. স্নানের পর দান করুন: মহাকুম্ভে স্নানের পর দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের অন্ন, বস্ত্র ও দক্ষিণা দান করার বিশেষ গুরুত্ব বলা হয়েছে।
গঙ্গাস্নানের অদ্ভুত উপকারিতা
• পাপ থেকে মুক্তি: সাত জন্মের পাপের প্রশমন হয়।
• মোক্ষ লাভ: পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• মানসিক শান্তি: নেতিবাচক শক্তি দূর হয়ে ইতিবাচকতা ছড়িয়ে পড়ে।
• দেহ ও আত্মার শুদ্ধি: আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ ঘটে।
• শিবের কৃপা: মহাশিবরাত্রিতে গঙ্গাস্নান করলে শিবের বিশেষ কৃপা লাভ হয়।
প্রশাসন ভক্তদের কাছে এই বিশেষ আবেদন জানিয়েছে
জনসমাগমের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে এবং ভক্তদের কাছ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী পালন করার আবেদন জানিয়েছে।
• নিরাপত্তা নিয়মাবলী মেনে চলুন এবং প্রশাসনের নির্দেশাবলী উপেক্ষা করবেন না।
• স্নানের পর অবিলম্বে ঘাট ছেড়ে যান যাতে অন্যান্য ভক্তরা সুগমভাবে স্নান করতে পারেন।
• গঙ্গাকে পরিষ্কার রাখুন, কোনও ধরণের আবর্জনা, প্লাস্টিক অথবা অন্য কোনও ধরণের বর্জ্য নদীতে ফেলবেন না।
• অসুবিধা এড়াতে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত স্নানঘাটেই স্নান করুন।
মহাকুম্ভ ২০২৫-এর শেষ স্নান একটি অনন্য আধ্যাত্মিক উপলক্ষ্য, যার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে বিধিপূর্বক স্নান করলে ভক্তরা অক্ষয় পুণ্য লাভ করেন এবং তাদের জীবন ইতিবাচক শক্তি দিয়ে পূর্ণ হয়। এই পবিত্র উপলক্ষ্যের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে ভক্তদের শাস্ত্রীয় নিয়মাবলী পালন করা উচিত।
নোট: এই লেখা ধর্মীয় বিশ্বাস ও শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে রচিত। এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। পাঠক নিজের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করবেন।