মার্কিন-ভারত বাণিজ্য চুক্তি: জিএম ফসল ও ট্যারিফ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি

মার্কিন-ভারত বাণিজ্য চুক্তি: জিএম ফসল ও ট্যারিফ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা বর্তমানে অচল অবস্থায় আটকে রয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, আমেরিকা কিছু এমন শর্ত আরোপ করেছে যা ভারত সরকার বর্তমানে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে অতি প্রত্যাশিত বাণিজ্য চুক্তি বর্তমানে স্থগিত হয়ে গেছে। এর কারণ হল ভারত সরকারের কঠোর নীতি, যার অধীনে দেশের ১৪০ কোটি নাগরিক ও কৃষকের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমেরিকা ভারতের উপর কিছু কৃষি পণ্যের উপর ট্যারিফ কমাতে চাপ সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে জেনেটিক্যালি মডিফাইড ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো সংবেদনশীল পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সে তার খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকদের ভবিষ্যৎ ও ভোক্তা স্বাস্থ্যের সাথে কোনো আপোষ করবে না।

আমেরিকার দাবী, ভারতের আপত্তি

সূত্র অনুযায়ী আমেরিকা চায় ভারত যেন ভুট্টা, সয়াবিন, আপেল ও অন্যান্য কৃষি পণ্যের উপর আমদানি শুল্কে ব্যাপক ছাড় দেয়। এর মধ্যে অনেক পণ্যই জেনেটিক্যালি মডিফাইড (GM), যা ভারতের বর্তমান নীতি অনুযায়ী আমদানির অনুমতি নেই। আমেরিকা ভারতের কাছে আরও চায় যেন সে GM পণ্যের কোনো সার্টিফিকেট না চেয়ে আমদানির সীমা খুলে দেয়। কিন্তু ভারত সরকার এই প্রস্তাবে বিরোধিতা করছে।

সরকারের মতে, যদি এই পণ্যগুলিকে দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তাতে শুধুমাত্র স্থানীয় কৃষকদের ক্ষতি হবে না, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সে আমেরিকার সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক মজবুত করতে চায়, কিন্তু তা ১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনো ক্ষেত্রেই করা হবে না।

অপারেশন সিন্দুর বিতর্ক উত্তাপ বাড়িয়েছে

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনার একটি কারণ হল "অপারেশন সিন্দুর" বিতর্ক। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে তিনি এই সামরিক অভিযান বন্ধ করেছিলেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দাবিকে মিথ্যা বলেছেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে এবং বাণিজ্যিক আলোচনায়ও এই বিতর্ক মাঝখানে এসে পড়েছে।

জিএম ফসল নিয়ে বিরোধ

জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসল নিয়ে ভারতের অবস্থান সর্বদা সতর্ক ছিল। আমেরিকা চায় ভারত যেন GM ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির অনুমতি দেয়। এর মধ্যে কিছুকে ইথানলের সাথে মিশিয়ে ব্লেন্ডিং প্রোগ্রামের অধীনে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত এই প্রস্তাব ব্লেন্ডিং এর সীমা ইতিমধ্যেই পূর্ণ হওয়ার কথা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সয়াবিনের ক্ষেত্রে আমেরিকা চায় যেন তা ভারতেই তেলে প্রক্রিয়া করা হয়, কিন্তু ভারত সরকারের উদ্বেগ রয়েছে যে এর ফলে GM পণ্য ভারতীয় খাদ্য বাজারে প্রবেশ করতে পারে, যা নীতির বিরুদ্ধে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যাক্স প্রস্তাবেও মতবিরোধ

ভারত সরকার আমেরিকান বাণিজ্য প্রতিনিধিদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত ১০ শতাংশের বেসলাইন ট্যারিফকে বিশেষ ছাড় হিসেবে মানে না, কারণ এটি সকল দেশের জন্য সমান। ভারত চায় টেক্সটাইল, অটো পার্টস, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী ও ওষুধের উপর শূন্য ট্যারিফের ব্যবস্থা হোক। অন্যদিকে, আমেরিকা বর্তমানে এই ব্যাপারে প্রস্তুত নয় যে ভবিষ্যতে কোন নতুন ট্যাক্স আরোপ করা হবে না।

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের উপর মেঘমালা

যদি ৯ জুলাইয়ের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে আমেরিকা কর্তৃক ভারতকে প্রদত্ত রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ সাসপেনশন শেষ হতে পারে। এর অর্থ হল ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে আমেরিকায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হতে পারে। আমেরিকা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানি বাজারগুলির মধ্যে একটি। তাই এই পরিবর্তন ভারতের টেক্সটাইল, অটো, ফার্মা ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে আশা

ভারত সরকারের নজর এখন ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চলা বাণিজ্য আলোচনার উপরও কেন্দ্রীভূত। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আমেরিকার সাথে চুক্তি না হয়, তাহলে ভারত এই বাজারগুলিতে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে। যদিও এই নতুন বাজারগুলিতে প্রবেশ করতে সময় লাগতে পারে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হবে।

উদ্যোগ জগত কি বলছে?

ভারতীয় উদ্যোগ সংস্থা (CII) ও ফিক্কির মতো বাণিজ্য সংগঠনগুলি সরকারের এই অবস্থানের প্রশংসা করেছে যে তিনি দেশের কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থের সাথে আপোষ করছেন না। কিন্তু তারা একই সাথে বলেছে যে কোনো না কোনো পর্যায়ে আমেরিকার সাথে পুনরায় আলোচনার প্রয়োজন হবে, যাতে বাণিজ্যে স্থায়িত্ব বজায় থাকে।

সরকারের কৌশল

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিয়মিতভাবে এই বিষয়গুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছেন। ভারত ইতিমধ্যেই তেল সরবরাহ নিয়ে তার উৎসগুলিতে বৈচিত্র্য এনেছে, এবং বাণিজ্য চুক্তিও এই কৌশল অনুসারে তৈরি করা হচ্ছে। সরকার এই দিকে চেষ্টা করছে যাতে দেশের ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই নিরাপদ থাকে এবং বিশ্ব বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতাও বজায় থাকে।

Leave a comment