গুগলের কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাইআউট অফার

গুগলের কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাইআউট অফার
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

গুগল তাদের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মীদের কাছে বাইআউট অফার দিয়েছে। এর অর্থ, কোম্পানি কর্মীদের জানিয়েছে যে, যদি তারা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন তাহলে তাদের যথেষ্ট অর্থসংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

নতুন দিল্লি: বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল আবারও তাদের কর্মীদের নিয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার বিষয়টি ছাঁটাই নয়, বরং একটি স্বেচ্ছাসেবী বাইআউট অফার, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান। কোম্পানি তাদের আমেরিকা অবস্থিত কিছু নির্দিষ্ট বিভাগের কর্মীদের জানিয়েছে যে, যদি তারা কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদের এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে।

এই পদক্ষেপটি এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন গুগল AI, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে, কিন্তু একই সাথে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যয় কমানোর দিকেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

কোন বিভাগগুলিকে বাইআউট অফার দেওয়া হয়েছে?

গুগল যেসব ইউনিটকে বাইআউট অফার দিয়েছে, সেগুলি হল:

  • জ্ঞান ও তথ্য (K&I)
  • কেন্দ্রীয় প্রকৌশল
  • বিপণন
  • গবেষণা
  • যোগাযোগ

এই বিভাগগুলির মধ্যে, বিশেষ করে জ্ঞান ও তথ্য ইউনিটের কথা বলা যায়, যেখানে প্রায় ২০,০০০ কর্মী কর্মরত আছেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই ইউনিটটি পুনর্গঠিত হয় এবং নিক ফক্সকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফক্স তার সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ মেমোতে স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই ইউনিটে এখন শুধুমাত্র সেই লোকেরাই থাকতে পারবেন যারা কোম্পানির কৌশল এবং দিকনির্দেশনার সাথে চলতে প্রস্তুত।

বাইআউট অফার কী?

বাইআউট অফার হল এক ধরণের স্বেচ্ছাসেবী চাকরি ত্যাগের প্রস্তাব, যেখানে কর্মীকে কোম্পানির পক্ষ থেকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয়। এটি তখন হয় যখন কোম্পানি ছাঁটাই করতে চায় না কিন্তু কর্মী সংখ্যা কমাতে চায়।

এতে, যদি কর্মীরা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদের:

  • এককালীন নগদ অর্থ
  • নোটিশ পিরিয়ডের বেতন
  • কিছু ক্ষেত্রে বোনাস
  • স্বাস্থ্য বীমা সময়কাল বৃদ্ধি করার মতো সুবিধা দেওয়া হতে পারে।

গুগল কেন এই পদক্ষেপ নিয়েছে?

গুগলের এই কৌশলের পিছনে প্রধান কারণ হল ব্যয় কমানো এবং দক্ষতা বৃদ্ধি। কোম্পানি এখন সেই কর্মীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে যারা দ্রুত, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত। অন্যদিকে, যারা তাদের ভূমিকায় ভালো পারফর্ম করতে পারছে না বা যারা কোম্পানির দিকনির্দেশনার সাথে মিলছে না, তাদের জন্য "স্বেচ্ছাসেবী প্রস্থান" এর পথ খোলা হচ্ছে।

গুগলের নতুন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা Anat Ashkenazi ২০২৪ সালের অক্টোবরেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ২০২৫ সালে কোম্পানির একটি বড় ফোকাস হবে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ।

২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে কর্মী সংখ্যা কমানোর ধারা

গুগল ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে ১২,০০০ কর্মীর ছাঁটাই করেছিল। এটি ছিল কোম্পানির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছাঁটাই। এর পর থেকে কোম্পানি ক্রমাগত তাদের দলের আকার কমিয়ে আনছে।

একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গুগল এখন তাদের সম্পদ AI, ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং অনুসন্ধান অ্যালগরিদমের মতো মূল ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত করছে। এর ফলে পুরানো বা অগুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কর্মরত কর্মীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।

কোন কর্মীদের উপর কোম্পানির নজর?

নিক ফক্স কর্তৃক প্রকাশিত মেমোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে "কোম্পানি সেই কর্মীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে যারা উদ্ভাবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নতুন প্রযুক্তি শেখা চায় এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।"

যারা কোম্পানির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না, তাদের জন্য এখন বিকল্প রয়েছে:

  • চাকরি ছেড়ে দিন এবং বাইআউট অফার গ্রহণ করুন
  • অথবা আপনার পারফরম্যান্স উন্নত করুন এবং কোম্পানির দিকনির্দেশনার সাথে খাপ খাইয়ে নিন

রিমোট কর্মীদের উপরও চাপ বৃদ্ধি

গুগল এটাও বলেছে যে রিমোট কর্মীরা যারা অফিস থেকে ৫০ মাইলের ব্যাসার্ধে থাকে, তাদের এখন নিয়মিত অফিসে আসতে হবে। এর অর্থ হল "ওয়ার্ক ফ্রম হোম" সুবিধা এখন সীমিত করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তটি ইঙ্গিত করে যে কোম্পানি এখন দলকে একত্রিত করতে চায় যাতে কার্যপ্রণালী আরও কার্যকর হয় এবং কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় আরও ভালো হয়।

কতজন কর্মী প্রভাবিত হবেন?

বর্তমানে এটি স্পষ্ট করা হয়নি যে এই স্বেচ্ছাসেবী প্রস্থান কর্মসূচির আওতায় কতজন কর্মী বাদ পড়বে। কিন্তু যদি কোম্পানির পূর্ববর্তী রেকর্ড এবং কৌশলগুলি দেখা যায়, তাহলে এই সংখ্যা শত বা হাজারে হতে পারে।

গুগলের এই পরিকল্পনা বর্তমানে কেবল আমেরিকাভিত্তিক কর্মীদের জন্য। এশিয়া, ইউরোপ বা ভারতে কর্মরত কর্মীদের এই পরিকল্পনার বাইরে রাখা হয়েছে।

গুগলের AI এবং ক্লাউডের উপর বর্ধিত নির্ভরতা

এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল AI এবং ক্লাউড প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ। গুগল ২০২৫ সালে তাদের অধিকাংশ সম্পদ এবং মূলধন AI ইনফ্রাস্ট্রাকচারে কেন্দ্রীভূত করছে। এর জন্য কোম্পানিকে পুরানো কাজ এবং বিভাগ থেকে লোকজনকে বাদ দিতে হচ্ছে যাতে নতুন প্রতিভাবান ব্যক্তি এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা যায়।

কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

গুগলের এই সিদ্ধান্তের প্রতি কর্মীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কিছু কর্মী বাইআউট অফারকে একটি ভাল বিকল্প বলে মনে করছেন, কারণ তাদের সম্মানজনকভাবে কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে কিছু এটিকে চাপের মধ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন, যেখানে খারাপ পারফরম্যান্সের কথা বলে কর্মীদের বাইরে যাওয়ার পথ দেখানো হচ্ছে।

Leave a comment