আন্দামান সাগরে বিশাল তেল ভান্ডারের সম্ভাবনা: ভারতের অর্থনীতি ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের দিকে

আন্দামান সাগরে বিশাল তেল ভান্ডারের সম্ভাবনা: ভারতের অর্থনীতি ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের দিকে
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বর্ধমান উত্তেজনার ফলে বিশ্বব্যাপী কাঁচা তেলের দাম নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

ভারতে তেলের মজুত: পশ্চিম এশিয়ায় চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাত আবারও বিশ্ববাজারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও গভীর হয়, তাহলে কাঁচা তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৫০ ডলার পর্যন্তও যেতে পারে। ভারত, যা তার তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশ আমদানি করে, তার জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিন্তু এই সংকটের মধ্যেই একটি বড় স্বস্তির খবর এসেছে, যা দেশকে শক্তি স্বনির্ভরতার দিকে একটি নতুন পথ দেখিয়েছে।

আন্দামান সাগর থেকে আশার আলো

কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারতের আন্দামান সাগরে বৃহৎ কাঁচা তেলের ভান্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদি এই আবিষ্কার সফল হয়, তাহলে ভারতের শক্তি নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। মন্ত্রী এই সম্ভাব্য ভান্ডারের তুলনা গায়ানায় হেস কর্পোরেশন ও সিএনওওসি-এর আবিষ্কারের সাথে করেছেন, যা বর্তমানে বিশ্বের প্রধান তেল ভান্ডারগুলির মধ্যে একটি।

গায়ানার মতো বৃহৎ তেল ভান্ডার

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট দেশ গায়ানায় প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন ব্যারেল কাঁচা তেল ও গ্যাসের অনুমানিত ভান্ডার রয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে গায়ানা তেল রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। আন্দামানেও যদি একই ধরণের ভান্ডার পাওয়া যায়, তাহলে ভারত কেবলমাত্র নিজের চাহিদা পূরণই করবে না, বরং শক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও উত্থিত হবে।

শক্তি নির্ভরতা দূর হবে

বর্তমানে ভারত রাশিয়া, সৌদি আরব, ইরাক এবং আমেরিকা যেসব দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচা তেল আমদানি করে। প্রতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামার সরাসরি প্রভাব পড়ে ভারতের অর্থনীতি ও সাধারণ জনগণের জীবনে। দেশীয় তেল ভান্ডারের আবিষ্কার ভারতকে এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

২০ ট্রিলিয়ন ডলারের দিকে এগিয়ে যাবে ভারতীয় অর্থনীতি

হরদীপ সিং পুরীর মতে, যদি আন্দামানে গায়ানার মতো আবিষ্কার হয়, তাহলে ভারতের অর্থনীতি ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক সংখ্যা নয়, বরং ভারতকে বিশ্বব্যাপী শক্তি মানচিত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ।

রণনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভ

তেলের আবিষ্কার কেবলমাত্র শক্তি খাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকেও শক্তিশালী করবে। ভারত, যা বর্তমানে শক্তির ক্ষেত্রে উপভোক্তা দেশ, তা উৎপাদনকারী দেশের ভূমিকায় আসতে পারে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী মঞ্চে তার অবস্থান শক্তিশালী হবে এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যেও পরিবর্তন আসবে।

কী কী চ্যালেঞ্জ?

যেখানে এই খবর উৎসাহজনক, সেখানে চ্যালেঞ্জও কম নয়। আন্দামান অঞ্চলে অনুসন্ধান ও খনন প্রক্রিয়া প্রযুক্তিগতভাবে জটিল এবং এর জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞতার প্রয়োজন। এছাড়াও, পরিবেশগত ও সমুদ্রীয় পরিবেশগত ব্যবস্থার সুরক্ষা করাও সরকারের দায়িত্ব হবে।

ইরান-ইসরায়েল সংকট থেকে শিক্ষা

এই সম্ভাবনা এমন এক সময়ে উঠে এসেছে যখন বিশ্বব্যাপী তেল বাজার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার প্রভাবে রয়েছে। এটি ভারতের জন্য একটি শিক্ষা যে দীর্ঘমেয়াদী শক্তি নিরাপত্তার জন্য দেশীয় ভান্ডারের অনুসন্ধান এবং সেগুলিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি ভারত সময়মতো দেশীয় তেল ভান্ডারের দখল নিতে সক্ষম হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সংকটের মুখে তাকে আর জোর করে থাকতে হবে না।

শক্তি স্বনির্ভরতার দিকে বড় পদক্ষেপ

ভারত সরকার ইতিমধ্যেই নবায়নযোগ্য শক্তি, গ্রিন হাইড্রোজেন, জীবনী শক্তি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনকে উৎসাহিত করে শক্তি বৈচিত্র্যের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্দামান সাগর থেকে সম্ভাব্য তেল ভান্ডার এই ধারার মধ্যে একটি সিদ্ধান্তমূলক ঘটনা হতে পারে। এর ফলে কেবলমাত্র পেট্রোল-ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না, বরং শক্তি ভিত্তিক আমদানি বিলও অনেক কমে যাবে।

Leave a comment