ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় সোনার দাম নতুন উচ্চতায়

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় সোনার দাম নতুন উচ্চতায়
সর্বশেষ আপডেট: 14-06-2025

ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে বর্ধমান উত্তেজনার প্রভাব এখন বিশ্ববাজারে, বিশেষ করে সোনার দামে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

Gold price: বিশ্ববাজারে অস্থিরতার ধারা আবারও ফিরে এসেছে। এবার কারণ হল ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে গভীরতর সামরিক উত্তেজনা, যা পুরো বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ বিকল্পের সন্ধানে ঠেলে দিয়েছে। এমন পরিবেশে আবারও সোনা বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দের হিসেবে উঠে এসেছে। ফলস্বরূপ, দেশীয় বাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে।

জাতীয় রাজধানী দিল্লি সহ দেশের প্রধান শহরগুলিতে শুক্রবার ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ১,০১,৫৪০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই সংখ্যা ভারতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ এমসিসিতেও সোনা প্রথমবার ১ লক্ষ টাকা প্রতি ১০ গ্রামের সীমা অতিক্রম করেছে। এটি কেবলমাত্র একটি আকস্মিক বৃদ্ধি নয় বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মিশ্র প্রভাব।

কেন বেড়েছে সোনার দাম

সোনার দামে এই তীব্র বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের অনেক সামরিক ও পারমাণবিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করেছে, যার ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংঘর্ষ বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের অনিরাপত্তার অনুভূতিতে ভরে দিয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই যুদ্ধ বা সংকটের অবস্থা তৈরি হয়, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি করে নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, এবং সোনা বহু বছর ধরে ‘সেফ হেভেন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

এর সাথে সাথে আমেরিকায় চলমান মুদ্রাস্ফীতির হারের তথ্য আশা অনুযায়ী কম ছিল, যার ফলে আশা করা হচ্ছে যে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সময়ে সুদের হার কমিয়ে আনতে পারে। যখন সুদের হার কমে, তখন ডলার দুর্বল হয় এবং সোনা শক্তিশালী হয়। এটাই কারণ বিশ্বব্যাপী সোনার দামে বৃদ্ধি দেখা গেছে।

কেন সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়

ইতিহাসে যখনই বাজার অস্থির হয়েছে বা কোনো বৃহৎ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখনই সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। এর কোনো সুদ আয় নেই কিন্তু এটি মূল্যে স্থিরতা এবং সম্পদের সুরক্ষা দেয়। এটাই কারণ, चाहে বিশ্বব্যাপী মন্দা হোক বা করোনা মহামারী जैसा সংকট, সোনা সবসময় উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে শেয়ার বাজার অস্থির, টাকা দুর্বল হচ্ছে এবং ক্রুড অয়েলের দামে প্রচুর উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে, সেখানে সোনায় বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের সন্তোষ ও নিরাপত্তা দিচ্ছে।

ব্যাংক ও ব্রোকারেজ ফার্মসের অনুমান

বিশ্লেষকদের মতে, সোনার দামে এই বৃদ্ধি আরও এগিয়ে যেতে পারে। ব্যাংক অব আমেরিকার মতে, আগামী ১২ মাসে সোনার আন্তর্জাতিক দাম ট্রয় আউন্স প্রতি ৪,০০০ ডলার পর্যন্ত যেতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাক্সও একই কথা বলছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির দ্বারা সোনার আক্রমণাত্মক ক্রয়ের ফলে দাম ২০২৫ সালের শেষের দিকে ৩,৭০০ ডলার এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি ৪,০০০ ডলার প্রতি আউন্স পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

যদি এই অনুমান সঠিক প্রমাণিত হয়, তাহলে ভারতে সোনার দাম আগামী ১২ মাসে ১০ গ্রাম প্রতি ১.২৫ লক্ষ টাকার উপরে যেতে পারে।

দাম বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ কী কী

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির ক্রয়: বিগত কয়েক মাসে চীন, তুরস্ক ও ভারত সহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহৎ পরিমাণে সোনা কিনেছে। এই ব্যাংকগুলি ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার সুরক্ষিত করার জন্য সোনার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
  • ডলার সূচকে দুর্বলতা: আমেরিকান ডলারের তুলনায় অন্যান্য মুদ্রায় শক্তিশালীতা দেখা যাচ্ছে। ডলার দুর্বল হলে সোনার দাম সাধারণত বেড়ে যায়, কারণ এটি অন্যান্য মুদ্রায় সস্তা হয়ে যায়।
  • মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা: বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা এমন সম্পদে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন যা মুদ্রাস্ফীতির সময়ে মূল্য ধরে রাখে। সোনা এই অবস্থায় আদর্শ বিকল্প হয়ে ওঠে।

ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য কী কৌশল

সোনার দাম বৃদ্ধি ছোট বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে, কিন্তু এতে সরাসরি বিনিয়োগ করা সবসময় লাভজনক নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে ছোট বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সোনায় বিনিয়োগ করুন। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে গোল্ড ইটিএফ, সভারেন গোল্ড বন্ড এবং ডিজিটাল গোল্ডের মতো বিকল্প নিরাপদ ও ব্যবহারিক বলে মনে করা হয়।

এখন সোনা কেনা বুদ্ধিমানের কাজ কিনা

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোনও বিনিয়োগকারীর পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলে বর্তমান দামেও সোনা কেনা ভুল হবে না। কিন্তু যারা অল্প সময়ের লাভের জন্য বিনিয়োগ করতে চান, তাদের কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কারণ দাম অস্থায়ীভাবে বেড়েছে এবং যুদ্ধ বা উত্তেজনার অবস্থায় তীব্র হ্রাসের সম্ভাবনাও রয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কিনা

সোনার দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনেও পড়ে। বিয়ে-শাদীর মতো অনুষ্ঠানে সোনার চাহিদা বেড়ে যায় এবং যদি দাম উচ্চে থাকে, তাহলে গ্রাহকদের বেশি খরচ করতে হবে। এছাড়াও, গহনাকারীদের জন্যও ইনভেন্টরি ও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার প্রভাব তাদের লাভের উপর পড়তে পারে।

Leave a comment