মুকেশ আম্বানির ‘আমনগর’ প্রকল্প: কিভাবে ভারত আম রপ্তানিতে বিশ্বনেতা হতে পারে?

মুকেশ আম্বানির ‘আমনগর’ প্রকল্প: কিভাবে ভারত আম রপ্তানিতে বিশ্বনেতা হতে পারে?
সর্বশেষ আপডেট: 07-06-2025

বিশ্বে আমের সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ হলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত চতুর্থ স্থানে রয়েছে। প্রতি বছর ভারতে প্রায় ২.৬ কোটি টন আম উৎপাদন হয়, কিন্তু এর মাত্র ০.১৩%ই আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছায়।

ব্যবসা: ভারতে আমের উৎপাদন এবং রপ্তানির এই ভারসাম্যহীনতার কারণ অনেকগুলি—ক্ষয়িষ্ণু কোল্ড চেইন অবকাঠামো, ক্ষুদ্র ও অসংগঠিত কৃষক, জটিল সরকারি নিয়ম এবং রপ্তানির জন্য উপযুক্ত জাতের আমের অপ্রতুল উৎপাদন। কিন্তু এখন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির একটি বৃহৎ কৃষিক্ষেত্র প্রকল্পের মাধ্যমে এই চিত্র পরিবর্তনের আশা জেগে উঠেছে।

প্রতি বছর ভারতে প্রায় ২.৬ কোটি টন আম উৎপাদন হয়, কিন্তু এর মাত্র ০.১৩%ই আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছায়। এর বিপরীতে, মেক্সিকো, যার উৎপাদন ভারতের চেয়ে অনেক কম, তার ২২.৫% আম রপ্তানি করে এবং এর মাধ্যমে ৫৭৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,৮০০ কোটি টাকা) আয় করে।

‘আমনগর’ প্রকল্প কি?

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গুজরাটের জামনগরে ‘আমনগর’ নামে একটি বিশাল আম উৎপাদন প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পটি ৬০০ একর জমিতে বিস্তৃত এবং এতে ১.৩ লক্ষেরও বেশি আম গাছ রোপণ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যাপার হল, এখানে ২০০-র বেশি জাতের আম চাষ করা হচ্ছে—যার মধ্যে কেবল ভারতীয় জাতই নয়, বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় জাতও রয়েছে।

রিলায়েন্স এই প্রকল্পে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবহার করছে। কোম্পানির লক্ষ্য কেবল উচ্চমানের আম উৎপাদন করা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

ভারত পিছিয়ে কেন?

ফিনফ্লো নামক একটি কৃষি-তথ্য কোম্পানির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতের আম শিল্পের বড় সমস্যাগুলি হল:

  • কোল্ড চেইনের অভাব: ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত আমকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখার ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত, যার ফলে প্রায় ৪০% আম নষ্ট হয়ে যায়।
  • ক্ষুদ্র ও অসংগঠিত কৃষক: কৃষকরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে উৎপাদন করেন, যার ফলে মান নিয়ন্ত্রণ এবং মানকীকরণ কঠিন হয়।
  • সরকারি নিয়ম ও প্রক্রিয়া: রপ্তানির সাথে জড়িত নিয়মগুলি জটিল, যার ফলে ক্ষুদ্র কৃষকরা এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
  • জাতের অসামঞ্জস্য: ভারতের ঐতিহ্যগত জাত (যেমন দশহরি, লঙ্গড়া, হাপুস) বিদেশী বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যেখানে ‘টমি অ্যাটকিন্স’, ‘কেন্ট’, ‘অ্যাটোলফো’ জাতের আমের চাহিদা বেশি।

কিভাবে আম্বানি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারেন?

ফিনফ্লোর প্রতিবেদনের মতে, আম্বানির ‘আমনগর’ প্রকল্প ভারতের আম শিল্পের জন্য ঠিক যেমন পরিবর্তন আনতে পারে যেমন Jio টেলিযোগাযোগ খাতে এনেছিল। রিলায়েন্স কেবলমাত্র উৎপাদনকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শুরু করেনি, বরং ফসল সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা, সঞ্চয়, প্যাকেজিং এবং রপ্তানি চ্যানেলগুলিও তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে কেন্দ্রীভূত করে আম্বানি একটি এমন মডেল তৈরি করেছেন যা কেবল উৎপাদন বৃদ্ধি করে না, বরং আন্তর্জাতিক মান অনুসারে গুণমানও নিশ্চিত করে। এর ফলে ভারত বিশ্ববাজারে আমের একটি বড় খেলোয়াড় হতে পারে।

মেক্সিকো থেকে ভারত কী শিখতে পারে?

মেক্সিকোর সাফল্য কেবলমাত্র সৌভাগ্য নয়। সেখানকার সরকার:

  • আমের নতুন জাতের উন্নয়নে উৎসাহ দিয়েছে
  • SENASICA-র মতো সংস্থার মাধ্যমে কৃষি রপ্তানির নিয়ম সহজ করেছে
  • সরবরাহ শৃঙ্খলের আধুনিকীকরণ করেছে
  • কৃষকদের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে
  • ভারতও যদি এই একই কৌশল অবলম্বন করে—সহজ নিয়ম, উন্নত প্রযুক্তি, কেন্দ্রীভূত উৎপাদন এবং বিপণন—তাহলে আমের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতা হতে পারে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং সুযোগ

বিশ্ববাজারে আমের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে আমের চাহিদা ৬.৫ কোটি টন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কাছে একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তার জন্য দেশজুড়ে ‘আমনগর মডেল’ এর মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি রিলায়েন্সের মডেল সফল হয়, তাহলে এটি ভারতের হাজার হাজার কৃষককে সংযুক্ত করতে পারে, কৃষিক্ষেত্রকে সংগঠিত করতে পারে এবং দেশকে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে ১ নম্বরে আনতে পারে।

Leave a comment