ভারত-সাইপ্রাস অর্থনৈতিক সহযোগিতা: NSE ও সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

ভারত-সাইপ্রাস অর্থনৈতিক সহযোগিতা: NSE ও সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

ভারত ও সাইপ্রাসের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

স্টক এক্সচেঞ্জ: ভারত ও সাইপ্রাসের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুটি দেশের স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি কেবলমাত্র মূলধন বাজার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং আর্থিক গবেষণা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে।

এনএসই ও সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে চুক্তি

ভারতের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) এবং সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের কোম্পানিগুলিকে একে অপরের মূলধন বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে। এর অর্থ হল, ভারতীয় কোম্পানিগুলো সাইপ্রাসে এবং সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলো ভারতে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এর ফলে মূলধনের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীরা নতুন সম্ভাবনার সন্ধান পাবে।

এনএসই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আশীষ কুমার চৌহান এই চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই চুক্তি কেবলমাত্র বিনিয়োগ বৃদ্ধিই করবে না, বরং ইউরোপীয় ও ভারতীয় কোম্পানিগুলির মধ্যে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্বকেও আরও শক্তিশালী করবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাইপ্রাস সফর

এই চুক্তিটি এমন সময়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ জুন সাইপ্রাস সফরে ছিলেন। এই সময় তিনি সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডেসের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বৈঠকে দুটি দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, সমুদ্র বাণিজ্য, উদ্ভাবন এবং ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকের পরে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এই চুক্তিকে কৌশলগত অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিনিয়োগের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন

এই চুক্তির অধীনে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা সাইপ্রাসের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে এবং সাইপ্রাসের বিনিয়োগকারীরা ভারতে মূলধন বিনিয়োগ করতে পারবে। সাইপ্রাসের প্রধান বিনিয়োগ সংস্থা BAO লিমিটেড ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফান্ড থেকে ১০ কোটি ডলার ভারতে বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগ জনসাধারণের ইকুইটি, উদীয়মান প্রযুক্তি এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানের সাথে সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিতে করা হবে।

এর ফলে কেবল ভারতীয় কোম্পানিগুলোই মূলধন পাবে না, সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলোও ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।

ইউরোপের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে

ভারত ও সাইপ্রাসের মধ্যে এই চুক্তি ইউরোপের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করবে। সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র এবং ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত। এই চুক্তির ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলি ইউরোপীয় মূলধন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সরাসরি প্রবেশাধিকার পাবে।

অন্যদিকে, সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলি ভারতের বিশাল জনসংখ্যা, দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

স্টার্টআপ ও ফিনটেক খাত নতুন মঞ্চ পাবে

দুটি দেশের মূলধন বাজারের মধ্যে সহযোগিতার সর্বাধিক লাভ স্টার্টআপ ও ফিনটেক খাত পাবে। ভারতে ইউনিকর্ন স্টার্টআপের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সাইপ্রাসের আর্থিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা মিলে এই ধরণের স্টার্টআপগুলিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিতে পারে।

এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভারতীয় স্টার্টআপগুলি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী পাবে এবং সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলি ভারতের বাজারে সম্প্রসারণের মঞ্চ পাবে।

ডিজিটাল পেমেন্ট, গ্রিন গ্রোথ ও বন্দর উন্নয়নেও দৃষ্টি

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার বক্তব্যে জানিয়েছেন যে, ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট, বেসামরিক বিমান চলাচল, বন্দর ও গ্রিন গ্রোথ খাতে দ্রুত বিকাশের ফলে সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলি ভারতে অংশীদারিত্বের অসংখ্য সুযোগ পাবে। তিনি এই চুক্তিকে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে করা একটি চুক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তির প্রতীক

আজ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হয়ে উঠেছে। তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনীতি এবং শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা ভারতকে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে পছন্দের গন্তব্য করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাইপ্রাসের মতো ইউরোপীয় দেশের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভারতের বিশ্বব্যাপী কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে।

 

Leave a comment