ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) সোনা ঋণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। এই নিয়মগুলি ১লা এপ্রিল ২০২৬ থেকে কার্যকর হবে এবং ব্যাংকগুলির পাশাপাশি অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির (NBFCs) উপরও প্রযোজ্য হবে। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো সোনা ঋণ গ্রহণকারী সাধারণ মানুষকে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রদান করা, পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের मनमानীতা রোধ করা।
নতুন নিয়মগুলির ফলে ছোট ও মাঝারি শ্রেণীর মানুষ, যারা জরুরি প্রয়োজনের জন্য সোনার বিনিময়ে ঋণ নেন, তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। আসুন জেনে নেই এই নিয়মগুলির মাধ্যমে কী পরিবর্তন আসবে এবং সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হবে।
সোনা ঋণে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সহজ প্রক্রিয়া
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সোনা ঋণের পরিমাণ আগের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। এখন গ্রাহকরা তাদের জামানত রাখা সোনার মোট মূল্যের ৮৫% পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন, যা আগে ছিল ৭৫%। এর অর্থ হল, যদি আপনার সোনার মূল্য ৩ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে আপনি ২.৫৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। এই পরিবর্তন তাদের জন্য বড় সুবিধা যারা জরুরি প্রয়োজন, যেমন চিকিৎসা ব্যয় বা সন্তানের পড়াশোনার জন্য ঋণ নিতে চান।
এছাড়াও, ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সোনা ঋণের জন্য এখন আয়ের প্রমাণপত্র বা ক্রেডিট স্কোরের প্রয়োজন হবে না। এই নিয়ম বিশেষ করে তাদের জন্য উপকারী যারা নিম্ন আয়ের শ্রেণীর অন্তর্গত বা যাদের আয়ের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রমাণ নেই। এর ফলে ছোট দোকানদার, কৃষক এবং গৃহিণীরাও সহজেই ঋণ পেতে পারবেন। এই পদক্ষেপ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
সোনার সাথে রূপার উপরও ঋণের সুবিধা
RBI সোনা ঋণের সংজ্ঞাকে আরও ব্যাপক করেছে। এখন কেবলমাত্র সোনার আভূষণ ও মুদ্রার উপর নয়, বরং রূপার আভূষণ ও মুদ্রার উপরও ঋণ নেওয়া যাবে। এই সুবিধা তাদের জন্য বিশেষ হবে যারা সোনার সাথে সাথে রূপার গয়না রাখেন। রূপার আভূষণের মূল্যায়ন একইভাবে স্বচ্ছভাবে করা হবে, যেমনটি সোনার ক্ষেত্রে হয়। এই নিয়ম ছোট শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে, যেখানে রূপার গয়না সাধারণত রাখা হয়।
তবে, সোনা ও রূপার জন্য কিছু সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সর্বাধিক ১ কিলোগ্রাম সোনার আভূষণ এবং ৫০ গ্রাম সোনার মুদ্রা জামানত রাখতে পারবেন। যদি গয়নায় রত্ন বা হীরক জড়িত থাকে, তাহলে তাদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে, যার ফলে ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই নিয়মগুলি নিশ্চিত করে যে ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা উভয়েরই স্বার্থের যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে।
ঋণদাতাদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা
RBI নতুন নিয়মে ঋণদাতাদের দায়িত্ব আরও কঠোর করেছে। এখন ব্যাংক ও NBFC গুলিকে ঋণ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সোনার মান, ক্যারেট এবং ওজনের মতো বিবরণ স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত করতে হবে। যদি গ্রাহক ঋণের সম্পূর্ণ পরিমাণ পরিশোধ করে, তাহলে ঋণদাতাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জামানত রাখা সোনা বা রূপা ফিরিয়ে দিতে হবে।
এছাড়াও, যদি জামানত রাখা সোনা বা রূপা হারিয়ে যায় বা তাতে কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে ঋণদাতাকে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই নিয়ম গ্রাহকদের নিরাপত্তা প্রদান করে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের প্রক্রিয়া আরও দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।