বর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি থেকে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার কাঁচা সূর্যমুখী, সয়াবিন এবং পাম তেলের মতো খাদ্যতেলের আমদানি শুল্ক ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করেছে।
নয়াদিল্লি: সাধারণ জনগণকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বড় স্বস্তি দিতে কেন্দ্রীয় সরকার কাঁচা খাদ্যতেলের আমদানি শুল্ক (Basic Custom Duty) ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করেছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন খুচরা বাজারে খাদ্যতেলের দাম অবিরতভাবে উচ্চ পর্যায়ে ছিল এবং খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ জনজীবনকে প্রভাবিত করছিল।
কোনটিতে নতুন শুল্ক প্রযোজ্য হবে?
সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাঁচা সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলে প্রযোজ্য ২০% আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০% করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের পরে এখন কাঁচা এবং পরিশোধিত খাদ্যতেলের মধ্যে আমদানি শুল্কের পার্থক্য ৮.৭৫% থেকে বেড়ে ১৯.২৫% হয়েছে, যা ঘরোয়া পরিশোধন শিল্পের জন্য একটি বড় স্বস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মূল্যবৃদ্ধি থেকে মুক্তির কৌশল
খাদ্য ও জনবিতরণ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সিদ্ধান্তের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদের খাদ্যতেলের উচ্চমূল্য থেকে স্বস্তি দেওয়া এবং ঘরোয়া পরিশোধনকে উৎসাহিত করা। গত কয়েক বছরে খাদ্যতেলের দামে অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি হয়েছে, যার ফলে ভোক্তার উপর বোঝা বেড়েছে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারে অবিরত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
শিল্পকে দেওয়া নির্দেশাবলী: দাম অবিলম্বে কমাতে হবে
সরকার শুধুমাত্র শুল্ক কমিয়ে থেমে নেই, বরং খাদ্যতেল শিল্প সংগঠনগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা এই শুল্ক কমানোর সুবিধা অবিলম্বে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সচিবের সভাপতিত্বে প্রধান শিল্প সংগঠন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সকল স্টেকহোল্ডারকে এটি নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে যাতে কম খরচের সুবিধা সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌঁছে।
প্রতি সপ্তাহে MRP শিট শেয়ার করতে হবে
সরকার খাদ্যতেল কোম্পানিগুলিকে বলেছে যে তারা তাদের ব্র্যান্ডের পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (MRP) এর আপডেট তথ্য প্রতি সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের সাথে ভাগ করে নেবে। এছাড়াও, সরকার কোম্পানিগুলিকে পিটিডি (Price To Distributor) এবং MRP ডেটা রিপোর্টিংয়ের জন্য একটি বিশেষ ফরম্যাটও সরবরাহ করেছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং মূল্য কমানোর সুবিধা আসলেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়।
ঘরোয়া পরিশোধন শিল্পকে উৎসাহ পাবে
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ঘরোয়া পরিশোধন শিল্পও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন যেহেতু কাঁচা খাদ্যতেলে আমদানি শুল্ক কম এবং পরিশোধিত তেলে এটি বেশি, তাই দেশের ভিতরে তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলিকে উৎসাহিত করা হবে। এতে শুধুমাত্র ঘরোয়া শিল্পই গতি পাবে না, বরং বিদেশ থেকে প্রস্তুত পরিশোধিত তেল আমদানির প্রয়োজনীয়তাও কমে যাবে।
কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
গত এক বছরে খাদ্যতেলের দাম এবং তার উপর প্রযোজ্য আমদানি শুল্কের পর্যালোচনা করে সরকার বুঝতে পেরেছে যে ভোক্তাকে সর্বাধিক সুবিধা দিতে আমদানি শুল্ক কমানো প্রয়োজন। অনেকবার দেখা গেছে যে বিশ্বব্যাপী কাঁচা তেলের দাম কমার পরেও ভারতে এর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছিল না, কারণ উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং দীর্ঘ সরবরাহ শৃঙ্খলের কারণে খরচ কমছিল না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকার আশা করছে যে খুচরা খাদ্যতেলের দাম ৮-১০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে, এটি সম্পূর্ণরূপে এই বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যে কোম্পানিগুলি সরকারের নির্দেশাবলী কতটা আন্তরিকতার সাথে পালন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আর্থিক এবং ভোক্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব হতে পারে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে যদি কোম্পানিগুলি এই দিকে অবহেলা করে তাহলে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোক্তা অধিকার কর্মী সুনীল কুমার বলেন, এই সিদ্ধান্ত স্বাগতযোগ্য, কিন্তু এটাও জরুরী যে খুচরা বিক্রেতা এবং বিতরণকারীরাও MRP-তে হওয়া কমানোর কার্যকর করে।
আগামী পদক্ষেপ?
সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এটি এককালীন স্বস্তি নয়, বরং মূল্য নিয়ন্ত্রণের একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ। মন্ত্রণালয় আগামী সময়েও খাদ্যপণ্যের দামের নজরদারি করবে এবং প্রয়োজন হলে আরও স্বস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।