বিখ্যাত ও প্রেরণাদায়ক গল্প: আলি বাবা চল্লিশ চোর

🎧 Listen in Audio
0:00

উপস্থাপিত করা হলো বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক গল্প, আলি বাবা চল্লিশ চোর

বহু বছর আগে পারস্য দেশে আলি বাবা ও কাসিম নামের দুই ভাই বাস করত। পিতার মৃত্যুর পর থেকে দুই ভাই মিলে তাদের পিতার ব্যবসা দেখাশোনা করত। বড় ভাই কাসিম ছিল খুব লোভী। সে প্রতারণা করে পুরো ব্যবসা নিজের করে নেয় এবং আলি বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর আলি বাবা কোনো বস্তিতে গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে একটি কুঁড়েঘরে দারিদ্র্যের জীবন কাটাতে থাকে। সে প্রতিদিন জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে আনত এবং বাজারে বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালাত।

একদিন আলি বাবা জঙ্গলে কাঠ কাটার সময় ৪০ জন ঘোড়সওয়ারকে সেখানে আসতে দেখে। সমস্ত ঘোড়সওয়ারের কাছে ছিল ধন-সম্পদের থলি এবং খঞ্জর। এটা দেখে সে বুঝতে পারে যে এরা সবাই চোর। আলি বাবা একটি গাছের আড়ালে লুকিয়ে তাদের দেখতে থাকে। এরপর সমস্ত ঘোড়সওয়ার একটি পাহাড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন চোরদের সর্দার পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে ‘খুল যা সিম-সিম’। এরপর পাহাড়ের মধ্যে একটি গুহার দরজা খোলে। সমস্ত ঘোড়সওয়ার সেই গুহার ভেতরে চলে যায়। ভেতরে গিয়ে তারা বলে ‘বন্ধ হো যা সিম-সিম’ এবং গুহার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

এটা দেখে আলি বাবা হতবাক হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেই দরজা আবার খোলে এবং সেখান থেকে সেই ঘোড়সওয়াররা বেরিয়ে যায় এবং সেখান থেকে চলে যায়। আলি বাবা এটা জানার জন্য উৎসুক হয়ে পড়ে যে আসলে এই গুহার ভেতরে কী আছে এবং তারা সবাই এখানে কী করছিল। এরপর সে গুহার ভেতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সেই পাহাড়ের সামনে যায় এবং বারবার চোরদের সর্দারের কথা বলতে থাকে - “খুল যা সিম সিম, খুল যা সিম সিম”। গুহার দরজা খুলে যায়। আলি বাবা গুহার ভেতরে যায় এবং দেখে যে সেখানে সোনার মোহর, রুপোর মোহর, গহনা ইত্যাদি রাখা আছে। চারদিকে শুধু ধন-সম্পদ আর ধন-সম্পদ। এটা দেখে তার আনন্দের সীমা থাকে না। সে জানতে পারে যে চোরেরা তাদের চুরি করা সমস্ত জিনিস এখানে এসে লুকিয়ে রাখে। আলি বাবা সেখান থেকে একটি থলিতে সোনার মোহর ভরে বাড়ির দিকে রওনা হয়।

বাড়িতে গিয়ে আলি বাবা পুরো ঘটনা তার স্ত্রীকে জানায়। একসাথে এত মোহর দেখে তার স্ত্রী অবাক হয়ে যায় এবং মোহরগুলো গুনতে বসে। তখন আলি বাবা বলে যে এত মোহর যে গুনতে গুনতে রাত হয়ে যাবে। আমি গর্ত খুঁড়ে এগুলো লুকিয়ে রাখি, যাতে কেউ আমাদের সন্দেহ করতে না পারে। আলি বাবার স্ত্রী বলে – আমি এগুলো গুনতে পারব না, তবে আন্দাজের জন্য ওজন করতে পারি। আলি বাবার স্ত্রী দৌড়ে কাসিমের বাড়ি যায় এবং তার স্ত্রীর কাছে গম মাপার জন্য একটি দাঁড়িপাল্লা চাইতে যায়। এটা দেখে কাসিমের স্ত্রী সন্দেহ করে। সে ভাবে যে এই গরীব লোকগুলোর কাছে হঠাৎ করে এত শস্য এলো কোথা থেকে। সে ভেতরে যায় এবং দাঁড়িপাল্লার নিচে আঠা লাগিয়ে নিয়ে এসে দেয়।

রাতে আলি বাবার স্ত্রী সমস্ত মোহর ওজন করে এবং সকালে তাদের দাঁড়িপাল্লা ফেরত দিয়ে আসে। কাসিমের স্ত্রী দাঁড়িপাল্লা উল্টে দেখে যে তাতে সোনার একটি মোহর লেগে আছে। সে এই কথা তার স্বামীকে জানায়। কাসিম এবং তার স্ত্রী এটা জেনে হিংসায় জ্বলে যায়। দুজনেরই সারারাত ঘুম আসে না। সকাল হতেই কাসিম আলি বাবার বাড়ি যায় এবং তার ধনের উৎস জিজ্ঞাসা করতে থাকে। এটা শুনে আলি বাবা বলে যে তোমার কোনো ভুল হয়েছে। আমি তো একজন সামান্য কাঠুরে। কাসিম বলে যে তোমার স্ত্রী গতকাল আমাদের বাড়ি থেকে মোহর মাপার জন্য দাঁড়িপাল্লা নিয়ে গিয়েছিল। এই দেখো দাঁড়িপাল্লায় মোহর লেগে আছে। সব সত্যি কথা বলো, নয়তো আমি সবাইকে বলে দেব যে তুমি চুরি করেছ। এটা শুনে আলি বাবা সত্যি সত্যি সব ঘটনা বলে দেয়।

কাসিমের মনে লোভ জেগে ওঠে। সে ধন-সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং পরের দিন গুহায় পৌঁছে যায়। সে তার সাথে একটি গাধাও নিয়ে যায়, যাতে সে তাতে ধন-সম্পদ বোঝাই করে আনতে পারে। গুহার সামনে পৌঁছে সে আলি বাবার বলা মতো একই কাজ করে। তার ‘খুল যা সিম-সিম’ বলার সাথে সাথেই গুহার দরজা খুলে যায়। ভেতরে পৌঁছে চারদিকে ধন-সম্পদ দেখে সে হতবাক হয়ে যায়। সে বস্তায় করে সোনার মুদ্রা ভরে এবং বাইরে বেরোনোর সময় কী বলতে হবে সেটাই ভুলে যায়। গুহা থেকে বেরোনোর জন্য কাসিম অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো রাস্তা খুঁজে পায় না। সে গুহার ভেতরে বন্দী হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর যখন চোরদের দল সেখানে পৌঁছায়, তখন তারা দেখে যে বাইরে একটি গাধা বাঁধা আছে। তারা বুঝতে পারে যে এখানে কেউ এসেছে। চোরেরা ভেতরে যায় এবং কাসিমকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলে।

এদিকে যখন কাসিম বাড়ি ফেরে না, তখন তার স্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং আলি বাবার বাড়ি গিয়ে তার বড় ভাইকে খুঁজে আনার জন্য বলে। আলি বাবা খুঁজতে খুঁজতে গুহার কাছে পৌঁছায়, তখন সেখানে সে তার ভাইয়ের গাধাকে ঘাস চড়তে দেখে। সে বুঝতে পারে যে কাসিম ভেতরে গিয়েছিল এবং চোরেরা তাকে ধরে ফেলেছে। আলি বাবা যখন গুহার ভেতরে যায়, তখন সে কাসিমের মৃতদেহ খুঁজে পায়। আলি বাবা মৃতদেহটি বাড়ি নিয়ে আসে এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘোষণা করে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। কাসিমের স্ত্রীর অনুরোধে আলি বাবা এবং তার স্ত্রী কাসিমের ব্যবসা দেখাশোনা করতে শুরু করে এবং তার সাথে থাকতে শুরু করে।

অন্যদিকে, যখন চোরেরা গুহায় আসে এবং কাসিমের মৃতদেহ দেখতে পায় না, তখন তারা বুঝতে পারে যে ধন-সম্পদের রহস্য অন্য কেউও জানে। তারা গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর নেয় যে কয়েকদিনের মধ্যে কার বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে। চোরেরা আলি বাবার বাড়ি খুঁজে পায়। চোরেরা তার বাড়ির বাইরে একটি ক্রশ চিহ্ন দিয়ে দেয়, যাতে রাতের বেলা তাদের বাড়ি চিনতে সুবিধা হয়। এদিকে, আলি বাবা যখন তার বাড়ির বাইরে ক্রশ চিহ্ন দেখে, তখন সে বুঝতে পারে যে চোরেরা তাদের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। সে একই রকম চিহ্ন সবার বাড়ির বাইরে লাগিয়ে দেয়। রাতে যখন চোরেরা আসে, তখন সবার বাড়িতে একই রকম চিহ্ন দেখে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং ফিরে যায়।

চোরদের সর্দার চুপ করে বসে থাকার মতো মানুষ ছিল না। সে তার একজন লোককে সেই মহল্লায় পাঠিয়ে জানতে চায় যে সম্প্রতি কে সেখানে ধনী হয়েছে। এতে সে আলি বাবার ব্যাপারে জানতে পারে। সে তার বাড়ি ভালো করে চিনে নেয় এবং রাতে তেল ব্যবসায়ী সেজে তার বাড়ি পৌঁছায়। সে তার সাথে তেলের ৪০টি পিপে নিয়ে যায়, যার মধ্যে ৩৯টিতে চোর ছিল এবং একটিতে তেল ছিল। সে ভেবেছিল যে রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তারা সবাই মিলে আলি বাবাকে মেরে ফেলবে। সে আলি বাবার সাথে বন্ধুত্ব করে এবং রাতে তার বাড়িতে থাকার অনুমতি চায়। আলি বাবা তাকে খাবার খাওয়ায় এবং রাতে থাকার অনুমতি দেয়।

আলি বাবার স্ত্রী তেল ব্যবসায়ীর উপর সন্দেহ করে। সে সমস্ত পিপে টোকা মেরে দেখে এবং বুঝতে পারে যে একটি পিপেতে তেল আছে এবং বাকিগুলোতে মানুষ আছে। সে তখনই একটি উপায় বের করে। সে তেলের পিপে থেকে তেল বের করে গরম করে বাকি পিপেগুলোতে ঢেলে দেয়। সমস্ত চোরের মৃত্যু হয়। রাতে যখন সর্দার চোরদের বেরোনোর সংকেত দেয়, তখন একটিও চোর বাইরে বের হয় না। সে পিপে খুলে দেখে, তখন দেখে যে সমস্ত চোর মারা গেছে। এটা দেখে সে এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে নিজের জীবন বাঁচাতে সে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সকালে আলি বাবার স্ত্রী এই সমস্ত কথা আলি বাবাকে জানায়, যা জেনে সে খুব খুশি হয়। এখন সেই চল্লিশ চোরের সমস্ত ধনের একমাত্র মালিক ছিল আলি বাবা। সে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠে এবং সুখে শান্তিতে তার স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের সাথে বসবাস করতে থাকে।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে – লোভ মানুষের শত্রু। লোভ করলে সব কাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই কখনো লোভ করা উচিত নয়।

বন্ধুরা subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং সারা বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের প্রচেষ্টা হলো, এইভাবেই আকর্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক গল্পগুলি সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনিগুলির জন্য subkuz.com পড়তে থাকুন।

```

Leave a comment