বিহারে নীতীশ সরকার স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে মোট ২৭,৩৭৫ জন আশা কর্মীর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচন গ্রামসভা পদ্ধতিতে হবে।
Bihar Asha Vacancy 2025: বিহার সরকার রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আরও জোরদার করার জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে চলমান স্বাস্থ্য সংস্কার পরিকল্পনার অধীনে এখন ২৭,৩৭৫ জন নতুন আশা কর্মীর নিয়োগ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।
আশা কর্মীর এই নিয়োগ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবার আওতা শেষ ব্যক্তির কাছে নিশ্চিত করবে না, বরং গ্রামীণ ও শহরাঞ্চল উভয় এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবুজ সংকেত দেখিয়েছেন
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডেয় মঙ্গলবার একটি উচ্চপদস্থ বৈঠকের পর এই নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এই নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হবে এবং এর জন্য তিন মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় মোট ২১,০০৯ জন এবং শহরাঞ্চলে ৫,৩১৬ জন আশা কর্মীর নির্বাচন করা হবে। তদুপরি, ১,০৫০ জন আশা সুবিধাদাতারও নিয়োগ করা হবে।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার রূপরেখা
গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচন প্রক্রিয়া গ্রামসভার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে এই দায়িত্ব ওয়ার্ড পার্ষদদের দেওয়া হয়েছে, যারা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করবে। নির্বাচনের সময় যোগ্যতা, সামাজিক অংশগ্রহণ এবং আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ত্বরান্বিত হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নির্দেশনায় বিভাগটি ক্রমাগত খালি পদের নিয়োগের জন্য সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পদের জন্য ৩৫,০০০ এর বেশি পদের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আশা কর্মীর এই নতুন নিয়োগ একই পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য হল প্রাথমিক স্তর থেকে বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠন করা।
আশা কর্মীরা গ্রাম ও মহল্লায় স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে, টিকাকরণ, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই সেবাগুলির মান এবং আওতায় ব্যাপক উন্নতি দেখা যাবে।
হাসপাতালের অবস্থা নিয়েও আলোচনা
বৈঠকে মন্ত্রী রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে দেওয়া সুবিধারও পর্যালোচনা করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে ডায়ালিসিস, জরুরি চিকিৎসা, প্যাথলজি পরীক্ষা ইত্যাদি সেবায় কোনো ঘাটতি থাকবে না। এছাড়াও তিনি ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রমা সেন্টার এবং আই হেলথ ফ্যাসিলিটির অবস্থার পর্যালোচনা করে মন্ত্রী তাদের আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
করোনা কালে স্থাপিত অক্সিজেন প্ল্যান্টের যথাযথ তত্ত্বাবধান ও মেরামতের উপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মন্ত্রী পাণ্ডেয় বলেছেন যে এই প্ল্যান্টগুলির কার্যক্ষমতা বজায় রাখার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা উচিত যাতে কোনো জরুরি অবস্থায় অক্সিজেনের অভাব না হয়।
এম্বুলেন্স সেবার সম্প্রসারণ হবে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম্বুলেন্স সেবা আরও কার্যকর করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে রোগীদের সময়মতো রেফার এবং নিরাপদ পরিবহনের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যাতে দূরবর্তী গ্রামীণ এলাকা থেকেও মানুষ সহজেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মনোজ কুমার সিংহ, নির্বাহী পরিচালক সুহর্ষ ভগত, স্বাস্থ্য অবকাঠামো নিগমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ধর্মেন্দ্র কুমার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আপ্তসচিব অমিতাব সিংহসহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাজ্যের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে কৌশল তৈরি করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার বাস্তবায়নের পর্যালোচনা করা হয়েছে।