কোচিং ছাড়াই IAS! সর্জনা যাদবের অনুপ্রেরণামূলক সাফল্যের গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) কর্তৃক পরিচালিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা বিশ্বের কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ সফল হয়। এই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বেশিরভাগ লোক কোচিং ক্লাসের সাহায্য নেয় এবং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে। কিন্তু এটা কি সত্যিই জরুরি? কোচিং ছাড়াই কি এই পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে একজন আইএএস কর্মকর্তার সাফল্যের গল্পে, যিনি কোনো কোচিং ছাড়াই শুধুমাত্র নিজের কঠোর পরিশ্রম ও স্ব-অধ্যয়নের মাধ্যমে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আজ আমরা আপনাদের জানাবো এমন একজন আইএএস কর্মকর্তার কথা যিনি কোনো কোচিং ছাড়াই ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর সাফল্যের এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর জন্য উদাহরণ হতে পারে। আমরা কথা বলছি সর্জনা যাদবের, যিনি স্ব-অধ্যয়নের মাধ্যমে ইউপিএসসি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন এবং দেশজুড়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সর্জনা যাদবের প্রারম্ভিক যাত্রা

সর্জনা যাদব দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি ট্রাই-এ রিসার্চ অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফুল টাইম চাকরির পাশাপাশি সর্জনা ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, কিন্তু প্রথম দুই প্রচেষ্টায় তিনি সফল হতে পারেননি। কিন্তু সর্জনা ছিলেন নাছোড়বান্দা। তিনি তাঁর ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সেগুলি সংশোধন করে তাঁর প্রস্তুতি আরও উন্নত করেন।

চাকরি ছেড়ে ফুল টাইম ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি

সর্জনা তাঁর তৃতীয় চেষ্টার জন্য একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 2018 সালে তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে দেন, যাতে তিনি সম্পূর্ণরূপে ইউপিএসসি-র প্রস্তুতিতে তাঁর সময় এবং শক্তি ব্যয় করতে পারেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয় এবং 2019 সালে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে 126 তম স্থান অর্জন করেন। এটি যে কোনও প্রার্থীর জন্য একটি বড় সাফল্য, বিশেষ করে যখন তিনি কোনও কোচিং ছাড়াই এই সাফল্য অর্জন করেন।

কোচিং নাকি স্ব-অধ্যয়ন - কোনটি ভালো?

সর্জনা যাদবের সাফল্যের পর একটি প্রশ্ন সামনে আসে - ইউপিএসসি-র প্রস্তুতির জন্য কোচিং কি জরুরি? সর্জনার মতে, এটি সম্পূর্ণরূপে প্রার্থীর ব্যক্তিগত পছন্দ এবং তার প্রস্তুতির কৌশলের উপর নির্ভর করে। যদি কোনও প্রার্থীর কাছে সঠিক অধ্যয়ন সামগ্রী থাকে এবং তিনি তাঁর প্রস্তুতির জন্য সঠিক পথে কাজ করেন, তবে কোচিংয়ের প্রয়োজন নেই। তিনি মনে করেন, যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর পড়াশোনায় নিয়মানুবর্তী হন, তবে তিনি স্ব-অধ্যয়ন করেও সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

সর্জনা বলেন, "যদি আপনার মনে হয় যে আপনি ক্লাসের পরিবেশে ভালো ফল করতে পারবেন, তাহলে কোচিং একটি সঠিক বিকল্প হতে পারে। কিন্তু যদি আপনি নিজেকে একটি সঠিক পথে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত করেন, তবে স্ব-অধ্যয়ন সবচেয়ে কার্যকর উপায়।"

প্রস্তুতির কৌশল এবং বই নির্বাচন

ইউপিএসসি-র প্রস্তুতিতে বই নির্বাচন এবং সেগুলি সঠিকভাবে অধ্যয়ন করা খুবই জরুরি। সর্জনা যাদবের মতে, বেশি বই পড়লে কোনও লাভ হয় না। এর পরিবর্তে, প্রার্থীর উচিত সীমিত সংখ্যক বই বারবার পড়া। তাঁর বক্তব্য, "একটি বা দুটি বই ভালোভাবে পড়ুন, বারবার সেগুলি অধ্যয়ন করুন এবং সেগুলির উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন।"

তিনি আরও বলেন যে, গুগল-এ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য এবং টিউটোরিয়াল সহজেই পাওয়া যায়, যা শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয়ে তাদের সন্দেহ দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, সর্জনার মতে, ইন্টারনেটে উপলব্ধ ভিডিও এবং রিসোর্সও এই পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরও উন্নত করতে পারে।

আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামের শক্তি

সর্জনা যাদবের সাফল্যের সবচেয়ে বড় বার্তা হল, যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর লক্ষ্যের প্রতি সৎ এবং কঠোর পরিশ্রমী হন, তবে তিনি সাফল্য পাবেনই। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, "যে ব্যক্তি তাঁর প্রস্তুতিতে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস রাখে এবং যে তাঁর লক্ষ্যের প্রতি নিবেদিত থাকে, সে যেকোনো বাধাকে অতিক্রম করতে পারে।"

সর্জনার এই গল্প সেই সকল ছাত্রদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা কোনো কারণে সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তাঁর মতে, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং নিজের কৌশলে পরিবর্তন আনা সাফল্যের চাবিকাঠি।

ইউপিএসসি পরীক্ষা শুধুমাত্র জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, এটি ধৈর্য, ​​সংগ্রাম এবং কৌশলেরও পরীক্ষা। সর্জনা যাদবের সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে যে, যদি চেষ্টা এবং নিষ্ঠা থাকে তবে যেকোনো পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়া সম্ভব। এই গল্পটি পড়ার পর প্রত্যেক প্রার্থী বিশ্বাস করবে যে, তারাও তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।

সর্জনার মতো, আপনিও যদি আপনার প্রস্তুতিকে সঠিক পথে নিয়ে যান এবং ক্রমাগত চেষ্টা করেন, তাহলে একদিন আপনিও ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হতে পারবেন।

```

Leave a comment