পাটলীপুত্র বিশ্ববিদ্যালয় (পিপিইউ) বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করেছে, যার শেষ তারিখ ২৫ জুন, ২০২৫।
বিহারের রাজধানী পটনায় অবস্থিত পাটলীপুত্র বিশ্ববিদ্যালয় (পিপিইউ) সম্প্রতি তাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশ কিছু উচ্চপদস্থ পদের জন্য আবেদন আহ্বান করেছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত ৫০০০ টাকা আবেদন ফি। যেখানে একদিকে চাকরির আশায় আবেদনকারীরা আবেদনপত্র পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষকদের একটা অংশ একে তাদের আত্মসম্মানের উপর আঘাত বলে মনে করছেন।
পিপিইউ নিয়োগ ২০২৫-এর সম্পূর্ণ তথ্য
পাটলীপুত্র বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত পদের জন্য ২৫ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করেছে। এই নিয়োগগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা এবং শিক্ষাগত মানের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আবেদন আহ্বান করা পদগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
ডীন অফ স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার (ডিএসডব্লিউ)
- প্রক্টর
কোঅর্ডিনেটর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিসিডিএস)
- পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
- কলেজ পরিদর্শক
- পেনশন কর্মকর্তা
- পিএইচডি ওএসডি
- প্রমোশন সেল ইনচার্জ
- লিগ্যাল সেল ইনচার্জ
- ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা
- লাইব্রেরি ইনচার্জ
- অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
- ডেপুটি রেজিস্ট্রার
এই পদগুলির জন্য ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা হচ্ছে, যা ডিজিটাল প্রক্রিয়া সমর্থনের একটি পদক্ষেপ বলে মনে করা যেতে পারে।
ফি নিয়ে বিতর্ক
যদিও নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং ডিজিটাল প্রকৃতির প্রশংসা করা হচ্ছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হচ্ছে ৫০০০ টাকা আবেদন ফি। অধিকাংশ আবেদনকারী এবং শিক্ষকদের মতে, এই ফি অনুচিত, অসংবেদনশীল এবং সুযোগের সমতাবিরোধী।
শিক্ষক সংঘ ও শিক্ষাবিদদের প্রতিক্রিয়া
বিহারের বিভিন্ন শিক্ষক সংঘ এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তব্য হল যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীদের সুযোগ দান করা, ফির দীর্ঘ প্রাচীর তৈরি করা নয়।
একজন শিক্ষক নেতা বলেছেন
“৫০০০ টাকা ফি এমন শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক যারা বছরের পর বছর শিক্ষাদানে নিয়োজিত। এটি আমাদের আত্মসম্মানের বিরুদ্ধে এবং আমাদের অযোগ্য বলে মনে করার মতো।”
पूर्व कुलपतियों और वरिष्ठ शिक्षाविदों का मत
পিপিইউ-এর একজন প্রাক্তন উপাচার্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলে বলেছেন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সকল সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাঁর মতে, যদি ফি বেশি হয়, তাহলে অনেক যোগ্য প্রার্থী শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে আবেদন করতে পারবে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভা নির্বাচন ব্যবস্থার উপরও প্রশ্ন উঠতে পারে।
কুলসচিবের বক্তব্য
বিতর্কের মধ্যে, পিপিইউ-এর কুলসচিব অধ্যাপক এনকে ঝা পরিস্থিতি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন,
“এই ব্যবস্থা প্রথমবারের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হল শুধুমাত্র গুরুতর প্রার্থীদের আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করা। এতে আবেদনকারীর সংখ্যা সীমিত থাকবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ হবে।”
যদিও তাঁর এই যুক্তি শিক্ষাক্ষেত্রের অনেক বিশেষজ্ঞকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আবেদন ফিকে ফিল্টার টুল হিসাবে ব্যবহার করা ন্যায়সঙ্গত নয়, বিশেষ করে যখন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতা প্রতিষ্ঠা করা।
ছাত্র ও প্রার্থীদের মতামত
এই সিদ্ধান্তে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তরুণদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। অনেক প্রার্থীর মতে, প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে তীব্র, এমতাবস্থায় অধিক আবেদন ফি তাদের জন্য আরও একটি বাধা হয়ে উঠেছে। কিছু ছাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন যে, এই ফি তাদের পুরো মাসের প্রস্তুতি সামগ্রী বা কোচিং ফির সমান।
যে প্রশ্নগুলি উঠছে
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদে নিয়োগ শুধুমাত্র ফি দিতে সক্ষমদেরই করা উচিত?
এই নীতি কি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কিন্তু মেধাবী প্রার্থীদের সাথে বৈষম্য করে না?
কি এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যার মাধ্যমে গুরুতর প্রার্থীদের শনাক্তকরণ ফির পরিবর্তে অন্যান্য পদ্ধতিতে করা যেতে পারে?
শিক্ষাব্যবস্থায় সমতার দাবি
আজ যখন সারাদেশে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ এবং সমান সুযোগের কথা বলা হচ্ছে, তখন এই ঘটনা একটি সতর্কবার্তা হিসাবে দেখা দিয়েছে। পাটলীপুত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কি আবেদন ফি নিয়ে তাদের নীতির উপর পুনর্বিবেচনা করবে নাকি এই সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।
ভবিষ্যৎ পথ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি, কিন্তু বর্ধমান প্রতিবাদ এবং সংবাদমাধ্যমে আলোচনা দেখে এটা নিশ্চিত যে এই বিষয়ে শীঘ্রই কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসবে।
যদি প্রতিবাদ বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষক সংঘ তাদের অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে এই বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। রাজ্য সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশন (ইউজিসি)-এর হস্তক্ষেপের দাবিও করা হতে পারে।