সৌদি সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইরানের ক্ষোভ। প্রিন্সের প্রশংসায় ক্ষুব্ধ ইরান বলেছে- ‘মারা যাব, কিন্তু আমেরিকার কাছে মাথা নত করব না’।
ট্রাম্প ভিজিট: আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে উপসাগরীয় দেশগুলি (গালফ কান্ট্রিজ) সফরে রয়েছেন। সৌদি আরবে পৌঁছেই তিনি ক্রাউন প্রিন্সের উন্মুক্ত প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্প প্রিন্সকে "অসাধারণ মানুষ" এবং "মহান নেতা" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি তাঁকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তার এই বক্তব্য সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কের উষ্ণতা প্রকাশ করেছে, কিন্তু ইরানের কাছে এটি মোটেই পছন্দ হয়নি।
ইরানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ রাইসি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি ট্রাম্পের হুমকিতে ভয় পাবেন না। তাঁর সরাসরি বক্তব্য ছিল, "মারা যাব, কিন্তু এই দাপুটের কাছে মাথা নত করব না।"
ট্রাম্পের বিশাল চুক্তি- সৌদির সাথে অর্ধশত কোটি ডলারের চুক্তি
ট্রাম্পের এই সফরের উদ্দেশ্য কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং অর্থনৈতিকও। আমেরিকা সৌদি আরবের সাথে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্যাকেজ চূড়ান্ত করেছে। এই চুক্তি বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অবকাঠামো এবং শক্তি খাতের জন্য। ট্রাম্প এটিকে আমেরিকা-সৌদি সম্পর্ককে শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় ধাপ বলে উল্লেখ করেছেন।
সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় শিথিলতা, আল-আশরা'র সাথে সাক্ষাতের বিতর্ক
সৌদি সফরকালে ট্রাম্প সিরিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য এখন পূর্ণ হয়েছে এবং সিরিয়াকে আবার নিজেকে দাঁড় করানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।
ট্রাম্প সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-আশরা'র সাথেও সাক্ষাত করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আল-আশরা একসময় আল-কায়েদার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং আমেরিকার কারাগারে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন। এই সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
ইরানের স্পষ্ট সতর্কবার্তা
যেখানে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক শক্তিশালী করছেন, সেখানে ইরান তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ইরানের রাষ্ট্রপতি একটি লাইভ টেলিভিশন শোতে ট্রাম্পকে উত্তর দিয়ে বলেছেন, "তারা মনে করে, চিৎকার করে আমাদের ভয় দেখাতে পারবে, কিন্তু আমরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পছন্দ করব, দাপুটের কাছে মাথা নত করব না।"
ইরানের এই কঠোর অবস্থান দেখায় যে আমেরিকার চাপের কৌশল সেখানে কাজ করছে না। ট্রাম্পের উপসাগরীয় সফরকে ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কিন্তু তেহরানের দাবি, তারা চাপে আসবে না।
ট্রাম্পের উপসাগরীয় সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই উপসাগরীয় সফরের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে:
- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা
- কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা
- ইরানের প্রভাব কমানো
- আমেরিকার অর্থনীতির জন্য বৃহৎ চুক্তি নিশ্চিত করা
ট্রাম্পের সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে এই চুক্তিগুলি ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করার তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এর মাধ্যমে তিনি উপসাগরীয় দেশগুলিকে ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চান।