অসম সরকার অবৈধ বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছে। ৪৯ জন ঘোষিত বিদেশী নাগরিককে সীমান্তে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্মা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অসম: অসমে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও তীব্র হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বিদেশী আদালত (Foreigners Tribunal) কর্তৃক "ঘোষিত বিদেশী" (Declared Foreigners) হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে। এদেরকে এখন অসম-বাংলাদেশ সীমান্তের "নো ম্যান্স ল্যান্ড" (No Man’s Land) এ নিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে অসমে বসবাসরত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বড় ধাক্কা। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনকে ভারতের বাইরে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতি ও সামাজিক আলোচনাকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
অসমে ডাম্পিং অপারেশনের ঘটনা কী?
অসম সরকার একটি ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে, যেখানে বিদেশী আদালত কর্তৃক বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত সকল অবৈধ বাংলাদেশীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ২৭ ও ২৯ মে পশ্চিম ও দক্ষিণ অসম থেকে কমপক্ষে ৪৯ জন ঘোষিত বিদেশী নাগরিককে গ্রেপ্তার করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের দাবি, এরা অনেক বছর ধরে ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছিল এবং এখন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ডাম্পিং অপারেশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ও গুয়াহাটি হাই কোর্টেও রিট দায়ের করা হয়েছে, যেখানে পরিবারের সদস্যরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ এবং অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কী বক্তব্য?
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে রাজ্য সরকার কোন অবৈধ নাগরিককে ক্ষমা করার মেজাজে নেই। তিনি বলেন, "গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০,০০০ লোক নিখোঁজ হয়েছে, যাদেরকে বিদেশী আদালত বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখন আমরা তাদের শনাক্তকরণ এবং ফিরিয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছি। যত তাড়াতাড়ি তাদের গ্রেপ্তার করা হবে, তাদের সীমান্তে ফেলে দেওয়া হবে। আমরা সম্পূর্ণরূপে আইন অনুযায়ী কাজ করছি।"
শর্মা জানিয়েছেন দুই ধরণের লোক অবৈধ—এক, যারা সম্প্রতি অনুপ্রবেশ করেছে এবং দুই, যাদেরকে ট্রাইব্যুনাল বিদেশী ঘোষণা করেছে। তিনি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে যাদেরকে বিদেশী ঘোষণা করা হয়েছে এবং যারা কোন আপিল করেননি, তাদেরকে ফিরিয়ে পাঠানো উচিত।
অসম সরকারের কৌশল
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আগামী দিনগুলিতে ডাম্পিং অপারেশন আরও তীব্র হবে। সরকার এখন সকল অবৈধ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সীমান্তে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনায় কাজ করছে। তবে, শর্মা এটাও স্পষ্ট করেছেন যে যদি কেউ হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, তাহলে তাকে ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
শর্মা আরও বলেছেন, "যদি কারও বিরুদ্ধে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়, তাহলে আমরা সেটা মেনে নিচ্ছি এবং তাকে থাকতে দেওয়া হবে। কিন্তু যারা আপিল করেন না, তাদের ভারতে থাকার কোন অধিকার নেই।"
রিট ও আইনগত লড়াই
এই অভিযানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ও গুয়াহাটি হাই কোর্টে বেশ কিছু রিট দায়ের করা হয়েছে। গুয়াহাটি হাই কোর্ট অসম সরকারকে দুই ভাই—আবু বকর সিদ্দিক ও আকবর আলী—এর ঠিকানার তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এদেরকে ২০১৭ সালে বিদেশী ঘোষণা করা হয়েছিল এবং গোলপাড়া ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। রিটকারী আদালতে দাবি করেছেন যে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ২৪ মে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের ঠিকানার কোন তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।