নেপালে হিন্দু রাষ্ট্রের দাবী: রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন

🎧 Listen in Audio
0:00

নেপালে হিন্দু রাষ্ট্রের দাবী তীব্রতর হচ্ছে। সেখানকার জনগণ রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবী তুলেছেন এবং পূর্ব রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের নেতৃত্বে পুরোনো দিনের স্মৃতি আবার স্মরণ হচ্ছে।

নেপালের ইতিহাস: নেপালে হিন্দু রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবী এবং রাজতন্ত্রের সমর্থনে চলা বিক্ষোভ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা কেবলমাত্র নেপালের গণতান্ত্রিক অবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট নয়, বরং তারা নেপালের পুরোনো রাজতন্ত্র ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবীও তুলেছেন। বর্তমানে নেপালের মানুষের মতে, তারা গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং পূর্ব রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাচ্ছেন, যিনি একসময় নেপালের শেষ হিন্দু রাজা ছিলেন।

নেপালের ইতিহাস এর রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ক্ষমতা সংগ্রামে পরিপূর্ণ। ২০০৮ সালের পূর্বে নেপাল ছিল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র, যতক্ষণ না মাওবাদী বিপ্লব এবং বামপন্থী আন্দোলন একটি বড় মোড় নেয়। এই আন্দোলনের ফলে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং দেশকে একটি গণতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত জ্ঞানেন্দ্র শাহ নেপালের রাজা ছিলেন, কিন্তু মাওবাদী বিদ্রোহের পর তাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয় এবং নেপালকে একটি গণতান্ত্রিক গণরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

নেপালের ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ

নেপালের ইতিহাস অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং গৌরবময়। এক সময় নেপাল ছিল ভারতের অংশ, কিন্তু এর দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল এবং সাহসী নেপালীরা আক্রমণকারীদের প্রতিরোধে সফল হয়েছিল। মোগল এবং ব্রিটিশরা কখনো নেপালকে তাদের সাম্রাজ্যের অংশ করার চেষ্টা করেনি, কারণ এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন অঞ্চল। নেপাল মোগল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ পর্যন্ত সকলকে তার সীমানায় আটকে রেখে তার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছে।

ব্রিটিশদের সাথে নেপাল একটি চুক্তি করেছিল, যার মাধ্যমে ব্রিটিশদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বিনিময়ে তারা কখনো নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। এ কারণেই নেপাল তার স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় সর্বদা বজায় রেখেছে।

২০০৮ সালের পর পরিস্থিতি: ক্ষমতা পরিবর্তন এবং নতুন চিন্তাধারা

২০০৮ সালে নেপালে একটি মাওবাদী আন্দোলনের পর রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং নেপাল একটি গণরাজ্যে পরিণত হয়। জ্ঞানেন্দ্র শাহ, যিনি সেই সময় পর্যন্ত নেপালের শেষ রাজা ছিলেন, তাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে হয়। এর পর থেকে নেপালে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু এর ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। অনেকেই মনে করেন মাওবাদী সরকার এবং বামপন্থী আদর্শ দেশের জন্য কিছু ভালো করেনি। এর বিপরীতে, মানুষ সেই পুরোনো দিনগুলিকে মনে রাখতে শুরু করেছে যখন রাজতন্ত্রের সময় নেপাল স্থিতিশীল ছিল, এবং তারা এটিকে ফিরিয়ে আনতে চায়।

জনগণের ক্রমবর্ধমান হতাশা এবং রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবী

নেপালের রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রী দলের সিনিয়র উপাধ্যক্ষ রবীন্দ্র মিশ্র বলেছেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে দেশে কোন স্থায়িত্ব আসেনি। মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, অস্থিরতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। দরিদ্রদের তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য টাকা নেই, এবং ধনীদের উপর কোন প্রভাব পড়ে না। এই অবস্থায় মানুষ রাজতন্ত্রের দিকে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছে।

রাজতন্ত্রের সমর্থকরা মনে করেন নেপালের জন্য রাজতন্ত্র শাসন একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল বিকল্প হতে পারে। এছাড়াও, তারা এটাও মনে করেন পুরোনো দিনে মানুষ তাদের পরিচয় এবং সম্মান নিয়ে জীবনযাপন করতো, যা এখন হারিয়ে গেছে।

কী হবে নেপালের ভবিষ্যৎ?

নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং রাজতন্ত্রের দাবী কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক অবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয়, বরং এটি বর্তমান শাসনের নীতি এবং তাদের ব্যর্থতার ফল। এখন দেখার বিষয় হল নেপালের ভবিষ্যৎ কোন দিকে অগ্রসর হবে। নেপাল কি তার গণরাজ্য হিসেবে এগিয়ে যাবে, নাকি রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সাথে পুরোনো পরিচয়ের দিকে ফিরে যাবে? এই প্রশ্ন নেপালের নাগরিক এবং বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment