ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই আমেরিকার আক্রমণের পর রাষ্ট্রপতি পুতিনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তেহরান রাশিয়ার কাছ থেকে স্পষ্ট সমর্থন চেয়েছে। পুতিন প্রথমবারের মতো আমেরিকার কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
ইরান-রাশিয়া সমর্থন: ইরানে আমেরিকার সামরিক অভিযান এবং ইসরায়েলের আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি বিশেষ চিঠি পাঠিয়েছেন। এই চিঠি নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি মস্কো গিয়েছিলেন এবং তিনি পুতিনের সাথে দেখা করেছেন। খামেনেই এই চিঠির মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে আরও দৃঢ় সমর্থনের আবেদন করেছেন।
রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক
রাশিয়া ইরানের একটি ঐতিহ্যগত কৌশলগত অংশীদার। পারমাণবিক চুক্তি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্ক বিশেষভাবে শক্তিশালী ছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া একটি ভেটো ক্ষমতাধর এবং পূর্বে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর যে চুক্তি হয়েছিল, তার সমর্থন করেছিল। এটি সেই চুক্তি যা আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০৮ সালে তার প্রথম মেয়াদে একতরফাভাবে ত্যাগ করেছিলেন।
খামেনেই-এর অসন্তোষ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মস্কো সফর এমন সময় হয়েছে যখন আমেরিকা ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর থেকে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালিয়েছে। খামেনেই মনে করেন যে রাশিয়ার সমর্থন এখনও পর্যাপ্ত নয়। তিনি তার মন্ত্রীকে এই বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন যে পুতিনকে এখন আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
যদিও রাশিয়া ইসরায়েল কর্তৃক পরিচালিত আক্রমণের সমালোচনা করেছে, তবে তারা এখনও পর্যন্ত আমেরিকার আক্রমণের উপর কোন সরাসরি মন্তব্য করেনি। পুতিন গত সপ্তাহে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়ে এ অঞ্চলে শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন যে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আরও বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে পারে।
মধ্যস্থতার প্রস্তাব
পুতিন বলেছেন যে তিনি আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছেন যে রাশিয়া এবং ইরান এই বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বয় করছে। পাশাপাশি তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন যে ইসরায়েল মস্কোকে আশ্বস্ত করেছে যে ইরানের বুশহের পারমাণবিক কেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের কোনো ক্ষতি হবে না।
পুতিন সমর্থন জানিয়েছেন
আরাঘচির সাথে দেখা করার সময় রাষ্ট্রপতি পুতিন প্রথমবারের মতো আমেরিকার আক্রমণের স্পষ্ট নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে করা কর্মকাণ্ড কেবল অন্যায় নয়, বরং এর কোনও আইনি বা কৌশলগত ভিত্তি নেই। পুতিন ইরানকে আশ্বস্ত করেছেন যে রাশিয়া ইরানি জনগণ এবং সরকারের পাশে থাকবে। তিনি বলেছেন যে এই বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করা হবে যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরানের অবস্থান স্পষ্ট হয়।
সत्ता পরিবর্তনের উপর রাশিয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া
পুতিন ইরানে সत्ता পরিবর্তনের আমেরিকা এবং ইসরায়েলের অনুমানকে সম্পূর্ণরূপে খণ্ডন করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে সत्ता পরিবর্তনের অধিকার কেবলমাত্র ইরানি জনগণের এবং এর মধ্যে কোনও বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। তিনি এই বিষয়েও জোর দিয়েছেন যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বহিরাগত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা প্রয়োজন।
রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্যের নীতি
রাশিয়া একদিকে আমেরিকার সাথে সরাসরি সংঘাত এড়াতে চায়, অন্যদিকে তার কৌশলগত অংশীদার ইরানকেও একা রাখতে চায় না। এ কারণেই সে বর্তমানে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই তার ভূমিকা পালন করছে। পুতিন এই প্রসঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতান্যাহু, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরানি রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেকিশিয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সাথেও আলোচনা করেছেন।