ইসরাইলি আকাশ আঘাতে ইরানি সামরিক কর্মকর্তা নিহত

🎧 Listen in Audio
0:00

ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ্যে এসেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে যে তারা লক্ষ্যবস্তু একটি আকাশ আঘাতে ইরানি সামরিক কর্মকর্তা সাইদ ইজাদিকে (Saeed Izadi) নিহত করেছে।

ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ: পশ্চিম এশিয়ায় চলমান গোপন যুদ্ধের মধ্যে ইসরাইল আবারও তার সামরিক কৌশল এবং গোয়েন্দা ক্ষমতার প্রদর্শন করে ইরানের ভূখণ্ডে অত্যন্ত নির্ভুল ও উচ্চ-স্তরের একটি আকাশ আঘাত চালিয়েছে। এই অভিযানে ইরানের কুখ্যাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)-এর সাথে যুক্ত কুদস বাহিনীর দুইজন প্রধান কমান্ডার সাইদ ইজাদি এবং বেনাম শাহরিয়ারিকে নিহত করা হয়েছে। উভয় কর্মকর্তাই হামাসের সাথে ইরানের সম্পর্কের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতেন।

সাইদ ইজাদি: হামাস ও ইরানের সম্পর্কের কড়ি

সাইদ ইজাদি, যিনি কুদস বাহিনীর ফিলিস্তিনি বিভাগের প্রধান ছিলেন, তাকে কোম শহরের আশেপাশে আকাশ আঘাতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে যে ইজাদি কেবলমাত্র হামাসের কাছে আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের প্রধান উৎস ছিলেন না, বরং তিনি ইরান ও গাজা অবস্থিত হামাস নেতৃত্বের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও ছিলেন।

আইডিএফ-এর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাইদ ইজাদি, যিনি হামাসের সাথে মিলে ইসরাইলকে অস্থির করার অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন, আর নেই। তার নির্মূলকরণ একটি কৌশলগত বিজয়। তিনি হামাসের সাথে ইরানের অংশীদারিত্বের পরিচালক ছিলেন। এই পদক্ষেপ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কম করার দিকে একটি সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ।

বেনাম শাহরিয়ারি: অস্ত্রের পরিবহনের মাস্টারমাইন্ড

ইজাদির সাথে সাথে ইসরাইলি আক্রমণে কুদস বাহিনীর আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বেনাম শাহরিয়ারিকেও নিহত করা হয়েছে। শাহরিয়ারি অস্ত্রের আন্তর্জাতিক পাচার ইউনিটের প্রধান ছিলেন, যিনি ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক এবং লেবাননে ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ করতেন। আইডিএফ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে শাহরিয়ারির মৃত্যু ইরানি অঞ্চলে গভীর গোয়েন্দা নজরদারি এবং কার্যকরী নির্ভুলতার ফল।

সে এই নেটওয়ার্কের অংশ ছিল যা ইসরাইল বিরোধী প্রক্সি গোষ্ঠীগুলিকে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট সিস্টেম সরবরাহ করত। শাহরিয়ারির ভূমিকা হিজবুল্লাহ এবং হামাস উভয়ের জন্যই কৌশলগতভাবে ‘অমূল্য’ বলে বিবেচিত হত।

ইরান-হামাস সম্পর্কের উপর বড় ধাক্কা

এই দুটি উচ্চ-স্তরের হত্যাকাণ্ডের ফলে ইরান ও হামাসের মধ্যে চলমান সহযোগিতায় গভীর ধাক্কা লেগেছে। সাইদ ইজাদি কেবলমাত্র তহবিলের চ্যানেল পরিচালনা করতেন না, বরং গোপন বৈঠক, প্রশিক্ষণ মডিউল এবং অস্ত্র সরবরাহের জন্য লজিস্টিক অপারেশনের পরিকল্পনাও করতেন। তিনি লেবানন থেকে পরিচালিত হামাস উইংকে গাজায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কৌশলও দিতেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ইজাদির মৃত্যু কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির অবসান নয়, বরং এর ফলে একটি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ককে ধাক্কা লেগেছে যা বহু বছর ধরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণের ভিত্তি স্থাপন করে আসছিল।

পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ডের ধারায় নতুন অধ্যায়

এই আক্রমণের আগেও ইসরাইল গাজা পটিতে অনেক হামাস কমান্ডারকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ২০ জুন গাজায় মুজাহিদিন ব্রিগেডের সাউথ গাজা ব্রিগেড প্রধান আলি সাঈদ ওয়াসফি আল-আগাকে একটি ড্রোন আক্রমণে নিহত করা হয়েছিল। আগা হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদ আবু শরিয়ার উত্তরাধিকারী হতে যাচ্ছিলেন, যাকে একই মাসে আগে এক অভিযানে নিহত করা হয়েছিল।

আল-আগা ইসরাইলি ঘাঁটিতে আক্রমণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন এবং তিনি সন্ত্রাসী সংগঠনে যুবকদের নিয়োগেও জড়িত ছিলেন। এই ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড ইসরাইলের এই নীতির সত্যতা প্রমাণ করে যে তারা ‘বিধ্বংসের মাধ্যমে প্রতিরোধ’ (Deterrence through Dismantling) কৌশল অনুসরণ করছে। যদিও এখনও পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে নিরাপত্তা সূত্রের মতে, এই আক্রমণ তেহরানের জন্য বড় ধাক্কা।

Leave a comment