ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক আক্রমণ চালিয়েছে। নাতানজ সহ একাধিক পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ইরানি শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। তেহরানে বিস্ফোরণ, ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা এবং ইরাক আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
Israel-Attack Iran: ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা শুক্রবার চরমে পৌঁছেছে, যখন ইসরায়েলি সেনা ইরানের উপর এক অভূতপূর্ব আকাশ আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে রাজধানী তেহরান সহ একাধিক শহরে অবস্থিত ইরানি সেনা ও পারমাণবিক কর্মসূচী সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযানে ইরানের অনেক জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও রেভল্যুশনারি গার্ডসের উচ্চপদস্থ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।
বেনজামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন, 'অভিযান এখনো শেষ হয়নি'
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এই আক্রমণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইরানের পারমাণবিক হুমকি রোধ করার জন্য এই অভিযান প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি জানান, ইসরায়েল নাতানজ শহরে ইরানের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণ করেছে, যেখানে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের কাজ চলছিল। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানের জন্য পারমাণবিক বোমা তৈরি করছেন এমন বিজ্ঞানীদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে। নেতানিয়াহু বলেন, এই অভিযান "যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ চালু থাকবে।"
'এখনই যদি থামানো না যায়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম বাঁচবে না' - নেতানিয়াহু
নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে বলেন, ইরান এত পরিমাণে ইউরেনিয়াম জমা করেছে যে তারা যেকোনো সময় পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ইরানের এখন ৯টি বোমা তৈরির ক্ষমতা আছে এবং তারা আগামী এক মাস বা এক বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারত। ইসরায়েল স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা কোনো অবস্থাতেই ইরানকে পারমাণবিক শক্তি হতে দেবে না, কারণ এটি তাদের জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি।
হুসেইন সালামি সহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত
দ্য টাইমস অফ ইসরায়েল এবং ইরানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আক্রমণে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধান কমান্ডার হুসেইন সালামিও নিহত হয়েছেন। তার সাথে ইরানি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি এবং আরও অনেক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাও এই আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এই কর্মকর্তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী এবং পারমাণবিক পরিকল্পনার তত্ত্বাবধান করছিলেন। রেভল্যুশনারি গার্ডস ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক সংস্থা হিসেবে পরিচিত, যা পারমাণবিক কর্মসূচী এবং দেশের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করে।
অভিযানের কোড নাম: Rising Lion
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এই অভিযানের নাম দিয়েছে 'Rising Lion'। এই অভিযানের প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান ইরানের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় সঠিক আঘাত হানে। IDF-এর বিবৃতি অনুযায়ী, এই আক্রমণ উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং এটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ধারাবাহিক হুমকির প্রতিউত্তর।
আমেরিকা দূরত্ব বজায় রেখেছে, কিন্তু সতর্কতাও জারি করেছে
আমেরিকার কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই আক্রমণে আমেরিকার কোনো জড়িত নেই। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরায়েল নিজের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আমেরিকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো নিজের সেনাবাহিনীর সুরক্ষা। পাশাপাশি তিনি ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছেন যেন তারা আমেরিকার স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু না করে।
নাতানজে বড় ধরনের বিস্ফোরণ
ইরানের নাতানজ শহরে, যেখানে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, সেখানে জোরালো বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। দ্য টাইমস অফ ইসরায়েলের মতে, নাতানজে বিস্ফোরণের শব্দ দূর-দূরান্তে শোনা গেছে। এই স্থানে ইরানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ করছিলেন।
ইরাক আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, ইরানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে
ইসরায়েলি আক্রমণের পর ইরাক তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং সকল বিমানবন্দরে উড়ান বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, ইরানও তেহরানের ইমাম খোমেইনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল উড়ান অস্থায়ীভাবে স্থগিত করে দিয়েছে। সুরক্ষা উদ্বেগের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সমগ্র ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা, আক্রমণের আশঙ্কা
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ সমগ্র দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণের আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সমগ্র দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
IDF বলেছে - 'ইরানি শাসন সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিচ্ছিল'
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে বলেছে যে ইরানি শাসন গত কয়েক বছর ধরে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। IDF-এর বক্তব্য, ইসরায়েলের সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য এই আক্রমণ অপরিহার্য ছিল। সেনাবাহিনীর প্রধান স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেছেন, হাজার হাজার সৈনিককে মোতায়েন করা হয়েছে এবং সকল সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে ইসরায়েলকে যারা চ্যালেঞ্জ জানাবে, তাদের ভারী মূল্য দিতে হবে।