ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা: যুদ্ধের আশঙ্কায় আমেরিকার সতর্কতা

🎧 Listen in Audio
0:00

পশ্চিম এশিয়া আবারও এমন এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে যেখানে যেকোনো সময় পরিস্থিতি যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে ইসরাইলের পক্ষ থেকে পাওয়া সংকেতগুলি পরিস্থিতিকে আরও বিস্ফোরক করে তুলেছে।

ওয়াশিংটন ডি.সি.: ইসরাইল শীঘ্রই ইরানে একটি সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে, যার ফলে অঞ্চলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমেরিকা আশঙ্কা করছে যে ইরান ইরাকে অবস্থিত কিছু আমেরিকান সামরিক বা কূটনৈতিক কেন্দ্রে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। এই কারণেই আমেরিকা তাদের অ-জরুরী সরকারি কর্মকর্তাদের ইরাক ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সেখানে বসবাসকারী নাগরিকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

পারমাণবিক কর্মসূচী টক্করের মূল কারণ

ইরান গত কয়েক বছর ধরে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে রয়েছে। জাতিসংঘ এবং আমেরিকা সহ অনেক পশ্চিমা দেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) সতর্ক করেছে যে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, যা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার আরও কাছে নিয়ে যাবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেব না, যতটা দূর যেতে হোক না কেন। এই বিবৃতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে ইসরাইল এখন কূটনৈতিক আলোচনার পরিবর্তে সামরিক পথ অবলম্বন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টাইমস অফ ইসরাইলের একটি প্রতিবেদনের মতে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য অনুশীলন তীব্রতর করেছে।

আমেরিকাও সতর্ক, নাগরিকদের সতর্কতা জারি

এদিকে, আমেরিকাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নাগরিক এবং কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর ইরাক, বাহরাইন এবং কুয়েতে অবস্থিত অ-জরুরি কূটনৈতিক কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ আমেরিকান কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

যদিও আমেরিকার বর্তমান সরকার বাইডেনের, তবুও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াও প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াশিংটনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না, আমরা এটা মঞ্জুর করব না। প্রয়োজন হলে আমরা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার থেকে পিছনে হটব না। ট্রাম্প প্রশাসন আগেও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক বিকল্পের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া: ‘কঠোর প্রতিশোধ’

ইরানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে তেহরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, ইসরাইল যদি কোনো আক্রমণ করে, তাহলে তার জবাব ‘তৎক্ষণাৎ এবং দৃঢ়’ হবে। এছাড়াও, হিজবুল্লাহ এবং ইরান সমর্থিত অন্যান্য মিলিশিয়া গোষ্ঠীকেও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

পরিস্থিতি যতই উত্তেজনাপূর্ণ হোক না কেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখনো সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি। খবর হচ্ছে, প্রাক্তন আমেরিকান দূত স্টিভ উইটকফ আবারও ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য তেহরান ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। এটি ছয়টি এরকম প্রচেষ্টার একটি হবে, যেখানে আমেরিকা ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে কোনো চুক্তিতে আসতে রাজি করানোর চেষ্টা করবে।

Leave a comment