বলুচিস্তানে বিএলএ'র ট্রেন হাইজ্যাক ও জিম্মি সংকট: দীর্ঘদিনের বিদ্রোহের নতুন অধ্যায়

🎧 Listen in Audio
0:00

বলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় কিন্তু জনসংখ্যায় কম ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ, যেখানে শান্তি বিরল। ১১ মার্চ বিএলএ সন্ত্রাসবাদীরা একটি ট্রেনে হাইজ্যাক করে ১০০ জন যাত্রীকে জিম্মি করে।

পাকিস্তান: পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের মধ্যে বলুচিস্তান সবচেয়ে বড় প্রদেশ, কিন্তু এর জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, তবুও এটি উপেক্ষিত রয়েছে। এখানে উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত ধীর এবং দশক ধরে এটি অশান্তি ও বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে।

বিএলএ'র আক্রমণ: ট্রেন হাইজ্যাক এবং জিম্মি সংকট

১১ মার্চ ২০২৫ সালে, বলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানের কুয়েতা-পেশোয়ার যাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাইজ্যাক করে। তারা প্রায় ১০০ জন যাত্রীকে জিম্মি করে। এই ঘটনা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

বলুচ বিদ্রোহ: কখন কখন আওয়াজ উঠেছিল?

১৯৪৮ সাল থেকেই বলুচ জাতীয়তাবাদীরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে।
১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩ এবং ১৯৭৩-৭৭ সালে ব্যাপক পরিসরে স্বাধীনতা আন্দোলন চলেছিল।
২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অবিরত বিদ্রোহ চলছে।
২০০৬ সালে পাকিস্তানি সেনা বলুচ নেতা আকবর বুগতিকে হত্যা করে, যার ফলে বিদ্রোহ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক আক্রমণটিও বলুচ জাতীয়তাবাদীদের দীর্ঘ সংগ্রামের অংশ।

বলুচিস্তানের রোষের প্রধান কারণগুলি

গুয়াদার বন্দর: চীনের সহায়তায় এই বন্দরটি উন্নত করা হচ্ছে, যা বলুচ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
অর্থনৈতিক শোষণ: বলুচিস্তানের খনিজ সম্পদের দখল করে পাকিস্তান তার অর্থনীতি চালাচ্ছে, কিন্তু বলুচ জনগণ এর কোনও সুবিধা পাচ্ছে না।
সামরিক দমন: পাকিস্তানি সেনা অবিরতভাবে বলুচ নাগরিকদের উপর আক্রমণ করে চলেছে, যার ফলে সেখানে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ সংযোগ এবং বলুচ বিদ্রোহ

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন বলুচ নেতারাও স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এই দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করেন, যার ফলে বিদ্রোহ আরও তীব্র হয়।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বলুচ সংগ্রাম তার চরমে পৌঁছে, যা চতুর্থ বলুচিস্তান সংগ্রাম নামে পরিচিত।
১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়া-উল-হক সামরিক অভ্যুত্থান করে ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং বলুচ বিদ্রোহীদের ক্ষমা করে সংগ্রামের অবসান ঘটান।

বলুচিস্তানের জোরপূর্বক পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি

১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান গঠিত হয়, তখন বলুচিস্তানের তিনটি বিকল্প ছিল - ভারতে যোগদান, পাকিস্তানে বিলীন হওয়া বা স্বাধীন থাকা। বলুচিস্তানের খান স্বাধীনতা বেছে নেন, কিন্তু জিন্নাহর চাপ এবং পাকিস্তানের সামরিক শক্তির কারণে ২৬ মার্চ ১৯৪৮ সালে এটি পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Leave a comment