উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২৮শে ডিসেম্বর প্রয়াগরাজ সফর করবেন, যেখানে তিনি মহাকুম্ভ মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখবেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে মুখ্যমন্ত্রী প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং মহাকুম্ভের আয়োজন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর মহাকুম্ভ মেলার সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে, কারণ এই আয়োজন লক্ষ লক্ষ ভক্তের আশা পূরণের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের দিক স্পষ্ট করবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২৮শে ডিসেম্বর সকাল প্রায় ১০:৩০ টায় হেলিকপ্টারে প্রয়াগরাজ পৌঁছাবেন। তাঁর প্রথম কর্মসূচি সেক্টর ২০-তে অবস্থিত আখড়া নগরে, যেখানে তিনি ধর্ম ধ্বজা পূজা ও প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শ্রী পঞ্চ নির্মোহী আনি, শ্রী পঞ্চ নির্বাণী আনি এবং শ্রী পঞ্চ দিগম্বর আনি আখড়ার শিবিরে উপস্থিত থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই তিনটি আখড়ার পতাকা স্থাপন করা হবে। এই ধর্মীয় কাজ মহাকুম্ভের সূচনার প্রতীক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আখড়া প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক
ধর্ম ধ্বজা পূজার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আখড়ার প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এই বৈঠকে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা হবে, যেখানে মেলা আয়োজন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে মতবিনিময় হবে। এই বৈঠকটি নিশ্চিত করবে যে মহাকুম্ভের আয়োজনে কোনও প্রশাসনিক সমস্যা না হয় এবং সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলে।
মহাকুম্ভের প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত কর্মসূচি অনুযায়ী, তিনি প্রায় ১২:১৫ মিনিটে প্রয়াগরাজ মেলা কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে পৌঁছাবেন, যেখানে মহাকুম্ভের প্রস্তুতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে মেলা কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের প্রায় ১৭টি বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী মহাকুম্ভের ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করবেন, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে আয়োজনের সময় কোনও প্রকার ত্রুটি না থাকে।
মহাকুম্ভের কাজ পরিদর্শন
পর্যালোচনা বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মহাকুম্ভের বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন করবেন। এই সময় তিনি মেলা এলাকায় নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ খতিয়ে দেখবেন। তাঁর এই পরিদর্শন মহাকুম্ভের সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হবে, যাতে সব কাজ সময়মতো শেষ করা যায় এবং ভক্তদের কোনো অসুবিধা না হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর পঞ্চমবার
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই সফর এই মাসের পঞ্চম সফর। এর আগে তিনি চারবার মহাকুম্ভের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের ফলে মহাকুম্ভের প্রশাসনিক কাজে গতি এসেছে এবং এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে প্রতিটি বিষয়ের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কর্মকর্তারা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন, যাতে মেলার সমস্ত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে।
মহাকুম্ভের নিরাপত্তার জন্য ২১৮ জন প্রশিক্ষণরত আইপিএস মোতায়েন
মহাকুম্ভের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ২১৮ জন প্রশিক্ষণরত আইপিএস অফিসারকে মোতায়েন করা হবে। এই আধিকারিকরা মেলা এলাকায় নিরাপত্তা, পরিবহন এবং ভিড় ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিতে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এডিজি আইন-শৃঙ্খলা অমিতাভ যশ জানিয়েছেন যে, এই প্রশিক্ষণরত আইপিএস অফিসারদের মোতায়েন করার ফলে মহাকুম্ভের ব্যবস্থাপনার উন্নতি হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা যাবে।
মহাকুম্ভে দোকানের ক্রমবর্ধমান দর
মহাকুম্ভের সময় দোকান বরাদ্দের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াও চলছে। বুধবার দোকানগুলির দরপত্রে উল্লম্ফন দেখা যায় এবং সর্বোচ্চ দর ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এই সংখ্যাটি মঙ্গলবারের তুলনায় বেশি ছিল। প্রথম দিনে ৩৫টি দোকানের দরপত্র জমা পড়েছিল, যেখানে দ্বিতীয় দিনে ৪৫টি দোকানের দরপত্র জমা পড়ে। মেলা প্রশাসনের অস্থায়ী কার্যালয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে এবং বৃহস্পতিবারও দোকানগুলির দরপত্র আহ্বান করা হবে।
মহাকুম্ভের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি
সমস্ত বিভাগের কর্মকর্তারা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মহাকুম্ভের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সঙ্গম লোয়ার মার্গ পরিষ্কার করা, বালির ঢিবি সরানো এবং অন্যান্য কাজ চূড়ান্ত করা হচ্ছে, যাতে মুখ্যমন্ত্রীর সফর নির্বিঘ্নে হতে পারে এবং মহাকুম্ভের সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ২৮শে ডিসেম্বরের সফর মহাকুম্ভ মেলার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নির্দেশনা ও পরিদর্শনের মাধ্যমে মহাকুম্ভ মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো ও নিরাপদ হবে। কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপ এবং প্রশিক্ষণরত আইপিএস অফিসারদের মোতায়েনের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা যাবে যে মেলা এলাকায় কোনো ধরনের সমস্যা হবে না এবং এই আয়োজন ভারত ও সারা বিশ্বের ভক্তদের জন্য এক ঐশ্বরিক ও জাঁকজমকপূর্ণ অভিজ্ঞতা হবে।
