পহেলাগাম হামলার পর সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানের উপর ভারতের কঠোর পদক্ষেপ

🎧 Listen in Audio
0:00

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সিন্ধু জল চুক্তি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্র, জল এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।

সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Waters Treaty): হালে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে একটি বড় এবং ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ভারত সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করে দিয়েছে। এই চুক্তিটি ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এর অধীনে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার জল বণ্টন সংক্রান্ত নিয়মাবলী নির্ধারিত হয়েছিল।

কী সিন্ধু জল চুক্তি?

১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে জল সংক্রান্ত বিরোধগুলি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।

এই চুক্তির অধীনে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার নদীগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল:

পশ্চিমা নদী (সিন্ধু, ঝেলুম, চেনাব) – এই নদীগুলির জল পাকিস্তান ব্যবহারের জন্য পেয়েছিল।

পূর্বা নদী (রাবি, বেয়াস, সতলজ) – ভারত এই নদীগুলির জলের সম্পূর্ণ অধিকার পেয়েছিল।

এই চুক্তিতে বিরোধ সমাধানের জন্য তিন স্তরের পদ্ধতিও নির্ধারিত হয়েছিল:

  • পরস্পর আলোচনা
  • স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের মাধ্যমে সমাধান
  • প্রয়োজন হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া যাবে।

ভারতের এখন পর্যন্ত অবস্থান

গত ৬৫ বছরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বহুবার যুদ্ধ ও উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু ভারত কখনোই এই চুক্তিটি বাতিল বা স্থগিত করেনি। এবার প্রথমবারের মতো ভারত এই জল চুক্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের উপর কী প্রভাব পড়বে?

১. কৃষিক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব: পাকিস্তানের প্রায় ৮০% কৃষিজমি সিন্ধু নদীর জলের উপর নির্ভরশীল। জল সরবরাহ কমে গেলে ফসল নষ্ট হতে পারে।

২. খাদ্য সংকটের আশঙ্কা: সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে খাদ্য উৎপাদন কমে যেতে পারে, যার ফলে পাকিস্তানে খাদ্য সংকট আরও গভীর হতে পারে।

৩. নগর জল সংকট: লাহোর, করাচী, মুলতান প্রভৃতি বড় শহরগুলির জল সরবরাহও প্রভাবিত হবে।

৪. বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রভাব: তারবেলা এবং মঙ্গলা প্রভৃতি বিদ্যুৎ প্রকল্প সিন্ধু নদীর জলের উপর নির্ভরশীল। জলের অভাবের ফলে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিতে পারে।

৫. অর্থনীতিতে ধাক্কা: পাকিস্তানের জাতীয় আয়ের ২৩% কৃষিক্ষেত্র থেকে আসে এবং ৬৮% জনসংখ্যা কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। এর ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতিও প্রভাবিত হবে।

ভারতের জন্য এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য কী?

ভারত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ এবং আলোচনা একসাথে চলতে পারে না। সিন্ধু জল চুক্তি বন্ধ করা একটি কৌশলগত চাপ সৃষ্টির দিকে বড় ধাপ, যা পাকিস্তানকে নীতিগত পরিবর্তনের জন্য বাধ্য করতে পারে।

Leave a comment