নবজোৎ সিংহ সিদ্ধুর বড় বক্তব্য: পঞ্জাব রাজনীতিতে নতুন তোলপাড়

🎧 Listen in Audio
0:00

পঞ্জাবের রাজনীতিতে একবার আবার হইচই ফেলে নবজোৎ সিংহ সিদ্ধু বড় বক্তব্য দিয়েছেন। ক্রমাগত এই প্রশ্ন উঠে আসছে যে, তিনি কংগ্রেসে কতটা সক্রিয় এবং আগামী বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে তার ভূমিকা কী হবে।

নবজোৎ সিংহ সিদ্ধু: পঞ্জাবের রাজনীতিতে ‘শব্দের সুলতান’ বলে পরিচিত নবজোৎ সিংহ সিদ্ধু আবারও আলোচনায়, কিন্তু এবার কারণ কোনও নির্বাচনী বক্তব্য বা তীব্র আক্রমণ নয়, বরং একটি সরল ও আত্মমননপূর্ণ বক্তব্য। তিনি তার রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা কোথাও না কোথাও ভারতীয় রাজনীতির খোঁড়াখুঁড়িতেও প্রশ্ন তুলে ধরেছে।

আমি রাজনীতিতে ব্যবসা করতে আসিনি, বরং পরিবর্তন আনতে এসেছি, সিদ্ধু তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে এই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি রাজনীতিকে লাভ ও সৌদা-বাজির মঞ্চ নয়, বরং জনসেবা ও পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। এই বক্তব্য তখন এসেছে যখন তিনি কংগ্রেসের কর্মসূচী থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন এবং দল সম্প্রতি লুধিয়ানা ওয়েস্ট উপনির্বাচনের জন্য তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকেও তার নাম সরিয়ে দিয়েছে।

‘৩০ বছর ধরে মাফিয়া চালাচ্ছে পঞ্জাব’: সিদ্ধুর বড় অভিযোগ

নবজোৎ সিংহ সিদ্ধু তার বক্তব্যে পঞ্জাবের রাজনীতিতে কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ৩০ বছর ধরে পঞ্জাবের ক্ষমতা মাফিয়াগুলির ইশারায় চলেছে। সরকার যতই কোনও দলের হোক না কেন, আসল শক্তি পর্দার আড়ালে ছিল। এই কথা সরাসরি রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর আক্রমণ, যেখানে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা প্রায়শই অদৃশ্য শক্তি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের বলি হয়ে যায়।

সিদ্ধু তার সমালোচকদের উপরও কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার উপর অভিযোগ করা হয় যে, আমি উচ্চস্বরে কথা বলি। কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করি, আমার কন্ঠের চেয়ে উঁচু কি আমার নীতিবোধ নয়? আমি আজ পর্যন্ত কোনও সৌদা করিনি, না কখনও আমার নীতির সাথে আপোষ করেছি। তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, যেখানে অনেক নেতা ক্ষমতার জন্য আপোষ করে নেন, সেখানে সিদ্ধু এখনও তার আদর্শ এবং আত্মসম্মান নিয়ে দৃঢ়।

কংগ্রেসে পিছিয়ে, কিন্তু সম্পর্ক অটুট

সিদ্ধুর কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক এখন একটি জটিল রহস্যে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন এবং দল তাকে পঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতিও করেছিল, কিন্তু এই পদ তিনি মাত্র দুই মাসেই ত্যাগ করেছিলেন। আজ যদিও তিনি দলের কোনও পদে নেই, কিন্তু তার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে এখনও রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর ছবি রয়েছে। এই নয়, তিনি এখনও সময়ে সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সাথে দেখা করে চলেছেন। এর মানে হলো, দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি, কিন্তু সিদ্ধু দলের প্রতি স্পষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, নবজোৎ সিংহ সিদ্ধু কি রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ সরে দাঁড়াচ্ছেন, নাকি এটি মাত্র একটি আত্মমননের প্রক্রিয়া? সিদ্ধুর রাজনীতি সবসময় ‘জনমত’, ‘সততা’ এবং ‘পরিবর্তন’ এই শব্দগুলির চারপাশে ঘোরে। কিন্তু বাস্তব রাজনীতি প্রায়শই এই নীতিগুলির বাইরে চলে যায়। সম্ভবত এটাই কারণ যে সিদ্ধু কংগ্রেসের সাথে পুরোপুরি নেই এবং অন্য কোনও মঞ্চেও সক্রিয় নন।

নবজোৎ সিংহ সিদ্ধুর রাজনৈতিক যাত্রা এখন পর্যন্ত সংগ্রাম ও অনিশ্চয়তায় ভরা। তিনি বারবার ক্ষমতার কাছে পৌঁছেছেন, কিন্তু তিনি কখনও স্থায়িত্ব বেছে নেননি, না কোনও রাজনৈতিক লাভ করেছেন। তার কণ্ঠস্বর গুঞ্জন করেছে, কিন্তু তা মূলধারায় অশ্রবণীয়ও থেকে গেছে।

Leave a comment