১৯২৫-এর নীমুচানা গণহত্যা: রাজস্থানের জালিয়ানওয়ালাবাগ

🎧 Listen in Audio
0:00

১৯২৫ সালে আলোয়ার নীমুচানা গ্রামে দ্বিগুণ ভূমি করের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী গ্রামবাসীদের উপর রাজ্যের সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছিল, যার ফলে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। এটিকে 'রাজস্থানের জালিয়ানওয়ালাবাগ' বলা হয়।

রাজস্থান: রাজস্থানের আলোয়ার জেলার নীমুচানা গ্রামে ১৪ই মে ১৯২৫-এর দিনটি ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। সেদিন দ্বিগুণ ভূমি কর (Double Tax) এবং জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে থাকা গ্রামবাসীদের উপর আলোয়ার রাজ্যের সেনাবাহিনী নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করেছিল। এই ভয়াবহ গুলিবিদ্ধ ঘটনায় ২৫০ জনেরও বেশি নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারিয়েছিল।

এই ঘটনা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে এটিকে 'রাজস্থানের জালিয়ানওয়ালাবাগ' বলা হতে থাকে। আজও গ্রামের বাড়িঘর এবং দেয়ালে গুলির চিহ্ন বিদ্যমান, যা সেই যন্ত্রণাদায়ক দিনের সাক্ষ্য বহন করে।

দ্বিগুণ ভূমি কর এবং 'বেগা প্রথা'র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল

সেই সময় কৃষকদের উপর দ্বিগুণ ভূমি কর এবং 'বেগা প্রথা'র মতো শোষণমূলক ব্যবস্থার বোঝা চাপানো হচ্ছিল। বেগা প্রথার অধীনে কৃষকদের বাধ্যতামূলকভাবে রাজ্যের জন্য বিনামূল্যে শ্রম দিতে হতো। এতে বিরক্ত গ্রামবাসীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ শুরু করেছিল।

কিন্তু আলোয়ার রাজ্য কৃষকদের এই আওয়াজকে দমন করার জন্য গ্রামটিকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে এবং গুলি চালানোর আদেশ দেয়।

যখন ২৫০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং গ্রামটি পোড়ানো হয়

গুলির বর্ষণে সম্পূর্ণ নীমুচানা গ্রাম কেঁপে উঠেছিল। ২৫০ জনেরও বেশি কৃষক ঘটনাস্থলেই মারা গেছে এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। শুধু তাই নয়, গ্রামের ১৫০ টিরও বেশি বাড়ি আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এমনকি গবাদিপশুকেও রেহাই দেওয়া হয়নি।

এই নৃশংসতা শুধু রাজস্থানের জন্য নয়, সমগ্র দেশের জন্যই একটি বড় ধাক্কা ছিল।

গান্ধীজি বলেছিলেন 'দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ'

নীমুচানা কাণ্ডের পর সমগ্র দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মহাত্মা গান্ধী এই ঘটনাকে 'দ্বিতীয় জালিয়ানওয়ালাবাগ' বলে অভিহিত করেছিলেন এবং ১৯২৬ সালের কানপুর কংগ্রেস অধিবেশনে এর তীব্র নিন্দা করেছিলেন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলও মুম্বাইতে একটি জনসভায় এই নৃশংসতার প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।

দেশজুড়ে উঠে আসা আওয়াজ এবং জনতার প্রবল বিরোধিতার কারণে আলোয়ার রাজ্যকে দ্বিগুণ ভূমি কর প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। পাশাপাশি 'বেগা প্রথা' এবং অন্যান্য অত্যাচারী ব্যবস্থাও বাতিল করতে হয়েছিল।

নীমুচানা কৃষক আন্দোলনের এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে

নীমুচানা গুলিবিদ্ধ ঘটনা স্বাধীনতা আন্দোলনে কৃষকদের ত্যাগ ও সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এটি শুধু একটি গ্রামের নয়, সমগ্র ভারতের সেই আওয়াজের কাহিনী যা দমন ও শোষণের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়াই করেছিল।

নীমুচানার ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, যখন জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন ক্ষমতাকে নতি স্বীকার করতেই হয়।

আজও অবশিষ্ট আঘাত, স্মৃতিস্তম্ভের দাবী অসম্পূর্ণ

আজও নীমুচানা গ্রামের বাড়িঘর এবং দেয়ালে গুলির চিহ্ন দেখা যায়। প্রতি বছর ১৪ই মে গ্রামবাসী শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় এবং সেই দিনটিকে স্মরণ করে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, একশ বছর কেটে যাওয়া সত্ত্বেও এই ঐতিহাসিক স্থানটি 'জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ' (National Monument) এর মর্যাদা পায়নি।

গ্রামবাসী এবং সামাজিক কর্মীরা বারবার সরকারের কাছে জালিয়ানওয়ালাবাগের ধাঁচে এখানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ (Martyr Memorial) নির্মাণের দাবি জানিয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই শুধুমাত্র আশ্বাসই পাওয়া গেছে।

Leave a comment