মহারাষ্ট্রে ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ: বিজেপি বিধায়কের অভিযোগে কারা আইজি-র বিরুদ্ধে তীব্র আলোড়ন

🎧 Listen in Audio
0:00

মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তখনই আলোড়ন সৃষ্টি হয় যখন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র বিধায়ক সুরেশ ধাস রাজ্যের জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তা ও বিশেষ পুলিশ মহানিরীক্ষক (আইজি) জালিন্দর সুপেকারের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা অবৈধ উৎকর্ষের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন।

মুম্বই: মহারাষ্ট্রে দুর্নীতির নতুন ও চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা সামনে এসেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র বিধায়ক সুরেশ ধাস কারা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বিশেষ পুলিশ মহানিরীক্ষক (আইজি) জালিন্দর সুপেকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। বিধায়ক ধাসের দাবি, তিনি কিছু কয়েদীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন যেখানে বলা হয়েছে আইজি সুপেকার ৩০০ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছেন।

সুরেশ ধাস এই অভিযোগগুলি নিয়ে রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেছেন যে কারা বিভাগে ব্যবস্থাপিত দুর্নীতি চলছে, যার ফলে কয়েদিরা মানসিক ও আর্থিকভাবে শোষিত হচ্ছে।

বিধায়ক ধাসের দাবি: কয়েদীদের কাছ থেকে ব্যাপক উৎকর্ষ

লাতুর জেলার বিধায়ক সুরেশ ধাসের কথা অনুযায়ী, তিনি বহু কয়েদী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে কারা আইজি সুপেকার একটি সংগঠিত পদ্ধতিতে এক লক্ষ টাকা নগদ ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন 'উপহার' হিসেবে দাবি করার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ধাসের মতে, এটি কোনও সাধারণ দুর্নীতি নয়, বরং ব্যবস্থাপিত উৎকর্ষের চক্রান্তের অংশ।

তিনি বলেছেন, আমি বহু অভিযোগ পেয়েছি যেখানে বলা হয়েছে সুপেকারের ইশারায় কয়েদীদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ উৎকর্ষ করা হয়। একটি অভিযোগে ৩০০ কোটি টাকা উৎকর্ষের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর।

বৈষ্ণবী হাগবণে মামলার উল্লেখ

বিধায়ক ধাস পুনের বিতর্কিত বৈষ্ণবী হাগবণে আত্মহত্যা মামলার উল্লেখ করে বলেছেন যে সুপেকারের নাম সেই মামলায়ও পরোক্ষভাবে উঠে এসেছিল। ধাসের দাবি, যখন কেউ নিজের আত্মীয়ের বউয়ের কাছ থেকে টাকা দাবি করে তখন সে কতটা নৈতিকতার স্তরে দাঁড়িয়ে আছে, তা ভাবার বিষয়। তিনি বলেছেন বৈষ্ণবীকে আত্মহত্যার জন্য বাধ্য করার কাজে সুপেকারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও জড়িত ছিলেন।

সুপেকারের পাল্টা আঘাত – সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক প্রেরিত

জালিন্দর সুপেকার বিধায়ক সুরেশ ধাসের অভিযোগগুলি সম্পূর্ণরূপে খণ্ডন করে বলেছেন যে এগুলি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক প্রেরিত, মিথ্যা ও উদ্ভাবিত অভিযোগ। তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এগুলি আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র।” সুপেকার এটাও স্পষ্ট করেছেন যে তিনি বৈষ্ণবী হাগবণের স্বামী শশাঙ্কের চাচা ঠিকই, কিন্তু তার সেই মামলায় কোনও সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সুপেকারকে নাশিক, ছত্রপতি সম্ভাজিনগর ও নাগপুর কারাগারের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এটিকে প্রশাসনিক পরিবর্তন বলা হয়েছিল, কিন্তু এখন বিধায়ক ধাসের অভিযোগের পর এটিকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। বিশেষ পুলিশ মহানিরীক্ষক হিসেবে পুনে সদর দপ্তরে কর্মরত সুপেকারের রেকর্ড এখনও পর্যন্ত বিতর্কমুক্ত ছিল না, কিন্তু প্রথমবার কোনও বিধায়ক এত সরাসরি ও স্পষ্ট ভাষায় দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন।

রাজনীতি উত্তপ্ত, তদন্তের দাবি তীব্র

এই সমস্ত ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। বিরোধী দলের নেতারা সরকারের কাছে সুপেকারের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির মধ্যেও সুরেশ ধাসের বক্তব্যের পর অন্যান্য নেতারা এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন। বিধায়ক ধাস এই বিষয়ে বিধানসভায় বিশেষ আলোচনা ও বিধানমণ্ডল কমিটি কর্তৃক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি এই মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয় তাহলে কারা বিভাগে চলমান দুর্নীতির স্তর উন্মোচিত হবে এবং বহু বড় নাম সামনে আসবে।

Leave a comment