ললিতপুরে অবৈধ মাটি খননে দুই শ্রমিকের মৃত্যু

🎧 Listen in Audio
0:00

ললিতপুরের বিগারি গ্রামে অবৈধ মাটি খননের সময় দুই শ্রমিক মাটিতে চাপা পড়ে মারা গেছে। গ্রামবাসীরা খনন মافিয়া-দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

ললিতপুর: রবিবার রাতে ললিতপুর জেলার তালবেহট অঞ্চলে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখানে বিগারি গ্রামে মাটি খননের সময় দুই শ্রমিক মাটিতে চাপা পড়ে মারা গেছে। এই দুর্ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং পুনরায় অবৈধ খনন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল?

এই দুঃখজনক ঘটনা উত্তর প্রদেশের ললিতপুর জেলার তালবেহট অঞ্চলের বিগারি গ্রামে ঘটে। রাতের বেলায় কিছু শ্রমিক মাটি খননের কাজ করছিল। অমর সিংহ (২০ বছর) এবং নরেশ (২৩ বছর), যারা গণেশপুরা খান্দি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন, তাদের সঙ্গীদের সাথে মাটি তুলছিলেন। ঠিক তখনই হঠাৎ করে উপর থেকে প্রচুর পরিমাণ মাটি নিচে নেমে আসে। দুই শ্রমিকই সেই মাটির নিচে চাপা পড়ে যান। আশেপাশের লোকজন এবং পুলিশ মিলে তাদের উদ্ধার করে, কিন্তু ততক্ষণে তাদের মৃত্যু হয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনা এতোটা হঠাৎ ঘটে যে কারও সামাল দেওয়ার সুযোগ হয়নি।

পুলিশ ও গ্রামবাসী উদ্ধার করে মৃতদেহ

যখন এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, আশেপাশে থাকা লোকজন তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। গ্রামবাসী ও পুলিশ মিলে মাটি সরাতে শুরু করে যাতে নিচে চাপা পড়া লোকদের উদ্ধার করা যায়। অনেক পরিশ্রম ও সময়ের পরে দুই শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। সেখানে উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাটি এতোটা দ্রুত ঘটে যে কারও কিছু বুঝার বা বাঁচার সুযোগ হয়নি। মৃতদেহগুলিকে পরবর্তী তদন্তের জন্য তৎক্ষণাৎ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ – অবৈধ খনন চলছিল

দুর্ঘটনার পর গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ স্পষ্ট ছিল। তাদের দাবি, যেখানে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে অনেক দিন ধরে অবৈধভাবে মাটি খনন চলছিল। খনন মافিয়া কোনও অনুমতি ছাড়াই ট্রাক্টর ও শ্রমিকদের সাহায্যে রাতে মাটি খনন করত। লোকজনের অভিযোগ, এই মافিয়া-রা এতোটা নির্ভীক যে তাদের প্রশাসনের ভয় নেই, আইনের কোনও ভয় নেই।

যখন এই দুর্ঘটনাটি ঘটে এবং দুই শ্রমিক মাটিতে চাপা পড়ে মারা যায়, তখন খনন মافিয়া-রা তাদের ট্রাক্টর ছেড়ে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীদের দাবি, যদি প্রশাসন আগে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো আজ এই দুই জীবন বাঁচত। এখন গ্রামবাসীরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি করেছে যে, এই মافিয়া-দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে এবং কোনও দরিদ্র পরিবারের আলো এভাবে না নিভে যায়।

ক্ষতিপূরণ ও পীড়িত পরিবারের সাহায্যের দাবি উঠেছে

এই দুর্ঘটনার পর গ্রামের পরিবেশ অত্যন্ত দুঃখজনক হয়ে পড়েছে। যাদের জীবন গেছে, তারা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য ছিলেন। অমর সিংহ এবং নরেশের মৃত্যুতে তাদের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অমরের পিতা গোবিন্দ সিংহ এবং নরেশের পিতা প্রাগী তাদের ছেলেদের হারিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন।

গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছে যে, এই দরিদ্র পরিবারগুলিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, যাতে তারা কিছুটা স্বস্তি পায়। গ্রামবাসীরা বলছেন, এই শ্রমিকরা দিনমজুর ছিলেন। এখন তাদের চলে যাওয়ার পরে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? এই অবস্থায় সরকার ও প্রশাসনকে এগিয়ে এসে এই পরিবারগুলির আর্থিক সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা তাদের জীবন এগিয়ে নিতে পারে।

প্রশাসন তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছে, তদন্ত ও উদ্ধার কার্য চলছে

যেই মুহূর্তে দুর্ঘটনার খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে, এসডিএম ভূপেন্দ্র সিংহ তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। তিনি ঘটনার পুরো তদন্তের জন্য প্রভারী তহশিলদার রবীন্দ্র কুমারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। প্রশাসনের ধারণা, মাটির নিচে আরও লোক চাপা পড়ে থাকতে পারে, তাই উদ্ধার ও রক্ষাকার্য অব্যাহত রয়েছে।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে সিও অভয় নারায়ণ রায় এবং প্রভারী পরিদর্শক অনুরাগ অবস্থিও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেন। তবে, রাত হওয়ায় উদ্ধার কাজে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উপরন্তু, ঘটনাস্থলের কাছে ঘন জঙ্গল ছিল, যার ফলে মৃতদেহ উদ্ধার করতে অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগে।

Leave a comment