ছত্তিশগড়ের বিজাপুর ও সুকমা জেলার সীমান্তে অবস্থিত কর্রেগুট্টা বনে নিরাপত্তা বাহিনী একটি অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়ে ৩১ জন কুখ্যাত নক্সালকে নিহত করেছে। এই অভিযান ‘কর্রেগুট্টা এনকাউন্টার’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
রায়পুর: ছত্তিশগড়ের বিজাপুর ও সুকমা জেলার সীমান্তে অবস্থিত কর্রেগুট্টা বনে নিরাপত্তা বাহিনী একটি বৃহৎ অভিযান চালিয়ে ৩১ জন কুখ্যাত নক্সালকে নিহত করেছে। এই ঐতিহাসিক অভিযান ‘কর্রেগুট্টা এনকাউন্টার’ নামে পরিচিত এবং গত দুই দশকের সবচেয়ে বড় নক্সাল বিরোধী সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনী শুধুমাত্র নক্সালদের ঘেরাও করে কৌশলগত লাভই নয়, এই অভিযানের লাইভ ভিডিওও প্রকাশিত হয়েছে, যা সমগ্র দেশকে নিরাপত্তা বাহিনীর বীরত্ব ও সতর্কতার এক ঝলক দেখিয়েছে। এই অভিযান নক্সাল নেটওয়ার্ককে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে এবং এলাকায় শান্তি স্থাপনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অপারেশন কর্রেগুট্টা: একটি পরিকল্পিত অভিযান
এই অভিযানটি CRPF-এর কোবরা ইউনিট, DRG (ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড), STF এবং স্থানীয় পুলিশ যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ মে রাত প্রায় ২ টার সময় অভিযান শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনী নক্সালদের আস্তানা ঘিরে ভোর ৫ টার সময় আক্রমণ করে। বনের ঢাল এবং গুহায় লুকিয়ে থাকা নক্সালরা ঘেরাও দেখে গুলিবর্ষণ শুরু করে, কিন্তু জওয়ানদের কৌশল এবং প্রযুক্তিগত শক্তির কাছে তারা টিকতে পারেনি।
অভিযানের সময় ড্রোন এবং বডি ক্যামেরা দিয়ে রেকর্ড করা ভিডিও এখন ভাইরাল হচ্ছে। এতে জওয়ানদের পাহাড়ে উঠতে এবং ঘন বনে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। গুলিবর্ষণ, বিস্ফোরণ এবং শেষ পর্যন্ত নক্সালদের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, সবই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। ভিডিও থেকে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে নক্সালরা কতটা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল এবং কত বড় স্টক জমিয়ে রেখেছিল।
মেলে উন্নতমানের অস্ত্র ও প্রচুর পরিমাণে সরঞ্জাম
এনকাউন্টার স্থল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, বিস্ফোরক এবং দুই বছরের খাবারের জোগান উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে আছে উন্নতমানের স্নাইপার রাইফেল, আমেরিকান মডেলের রাইফেল, IED তৈরির সামগ্রী, ওয়্যারলেস সেট, ড্রোন বিরোধী জাল এবং প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ। এটি থেকে স্পষ্ট যে নক্সালরা কর্রেগুট্টাকে স্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিল।
অভিযানের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে কীভাবে জওয়ানরা দুর্গম পাহাড় পার করে নক্সালদের ঘেরাও করেছে। একটি ছবিতে আহত জওয়ানকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া দেখানো হয়েছে, অন্য একটিতে ট্রাকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র লোড করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী দেখা যাচ্ছে। কিছু ছবিতে নক্সালদের তৈরি ভূগর্ভস্থ আস্তানার বৃহত্ত্ব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দেখা যায়।
নিহত নক্সালদের মধ্যে শীর্ষ নেতাও ছিলেন
এই মুঠভেড়ে অনেক ওয়ান্টেড নক্সাল কমান্ডার নিহত হয়েছে, যাদের উপর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। এদের মধ্যে DVCm স্তরের নক্সাল নেতা, একজন মহিলা উইং প্রভারী এবং দুইজন IED বিশেষজ্ঞও রয়েছে। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযান সম্পর্কে বলেছেন, এটি শুধুমাত্র একটি সামরিক সাফল্য নয়, বরং এটি ইঙ্গিত করে যে ভারত এখন অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদকে মূলোৎপাটন করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের জওয়ানদের বীরত্ব, প্রশিক্ষণ এবং জনগণের সহযোগিতাই আমাদের প্রকৃত শক্তি।
এই অভিযানের পর কর্রেগুট্টা এবং আশেপাশের গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান ভয় কমে আসছে। গ্রামের প্রবীণ লক্ষ্মণ পোডিয়ামী জানিয়েছেন, “আমরা প্রথমবার দেখলাম যে নক্সালদের বিরুদ্ধে এত বড় পরিসরে অভিযান চালানো হলো এবং তারা পালিয়ে গেল না, মারা গেল। এখন আশা করছি আমাদের জীবন স্বাভাবিক হবে।
