ছত্তিসগড়ের দুর্গ জেলার ভিলাই এলাকা থেকে এক অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে দেনমোহরে মোটরসাইকেল না পাওয়ায় এক নারীকে তার স্বামী শুধুমাত্র মারধরই করেননি, বরং শাশুড়ির সাথে মিলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার সময় “তিন তালাক”ও দিয়েছে। পীড়িতা পুলিশকে জানিয়েছেন যে তার শাশুড়ি কাঁচি দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং স্বামী ‘তালাক, তালাক, তালাক’ বলে তাকে দরজা দিয়ে বের করে দিয়েছে।
৪ বছর আগে হয়েছিল বিয়ে, এখন ভেঙে গেল সম্পর্ক
পীড়িতা নুসরত বেগম (পরিবর্তিত নাম) এর বিয়ে ২০২১ সালে ভিলাইয়ের বাসিন্দা শাহিদ আলীর সাথে মুসলিম রীতিনীতিতে হয়েছিল। বিয়ের সময় মেয়ের পিতা তার সামর্থ্যের বাইরে নগদ টাকা, সোনা এবং গৃহস্থালীর সামগ্রী দেনমোহর হিসেবে দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোভ থেমে থাকেনি। কয়েক মাস পরেই মহিলাকে মোটরসাইকেল আনার দাবি করা শুরু হয়। যখন পীড়িতা তার পিতার আর্থিক অবস্থার কথা বলে অসমর্থতা প্রকাশ করেন, তখন স্বামী এবং শাশুড়ির নির্যাতন শুরু হয়।
শাশুড়ি কাঁচি দিয়ে আক্রমণ করেছে, স্বামী বলেছে তালাক-তালাক-তালাক
পীড়িতার দাবি, গত বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার মোটরসাইকেলের দাবিকে কেন্দ্র করে বিবাদ শুরু করে। শাশুড়ি রান্নাঘরে রাখা কাঁচি দিয়ে আক্রমণ করে এবং নারীর বাহুতে গভীর আঘাত হয়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা আসে, কিন্তু স্বামী রাগে সবার সামনে বলে – তালাক, তালাক, তালাক… এখন তুই আমাদের বাড়ির মহিলা নয়।
এরপর পীড়িতাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। আহত অবস্থায় নারী Somehow তার পৈতৃক বাড়ি বিলাসপুরে পৌঁছে, যেখান থেকে পরিজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশে FIR দায়ের, তদন্ত শুরু
ঘটনার খবর পেয়ে বিলাসপুর মহিলা থানায় পীড়িতার পক্ষ থেকে FIR দায়ের করা হয়েছে। এতে দেনমোহর নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা এবং তিন তালাকের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধারা ৪৯৮A (দেনমোহর নির্যাতন), ধারা ৩২৪ (জীবন সংশয়মূলক আক্রমণ), এবং মুসলিম নারী (বিবাহ অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৯ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত স্বামী এবং তার মা পলাতক, কিন্তু পুলিশ তাদের ধরার জন্য ভিলাইয়ে অভিযান চালাচ্ছে।
পীড়িতা বললেন- ন্যায়বিচার চাই, নয়তো আত্মহত্যা করবো
হাসপাতালে ভর্তি পীড়িতা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে বলেছেন: আমি এই সম্পর্ককে বাঁচানোর জন্য সব কিছু সহ্য করেছি। কিন্তু এখন আমার শরীরে আঘাত এবং আত্মায় ক্ষত রয়েছে। আমার ন্যায়বিচার চাই, নয়তো আমি আত্মহত্যা করবো। মহিলা কমিশন এবং অনেক সামাজিক সংগঠনও এই বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার তিন তালাককে অপরাধ ঘোষণা করেছে, যার জন্য ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবুও সমাজে এখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যা দেখায় যে আইনের আওতা এখনও প্রত্যেক ঘরে পৌঁছেনি।