দিল্লি নির্বাচন ২০১৫: আপের পরাজয়ের পেছনে কারণগুলি

🎧 Listen in Audio
0:00

২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে আপের পরাজয়ের পিছনে দুর্নীতির অভিযোগ, অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি, ‘শীশমহল’ বিতর্ক, সাধারণ মানুষের ছবির দুর্বলতা এবং সরকারবিরোধী ঢেউ প্রধান কারণ ছিল।

Arvind Kejriwal on Delhi Election Result 2025: দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে आम आदमी पार्टी (AAP) করুণ পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৫ এবং ২০২০ সালে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠনকারী দল এবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। ২৬ নভেম্বর ২০১২ সালে গঠিত এই দল দুর্নীতি বিরোধী রাজনীতি এবং স্বচ্ছতার দাবিতে এসেছিল, কিন্তু এক দশক পর জনতা আপকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আসুন জেনে নেই, আসলে আপের পরাজয়ের বড় কারণগুলি কী ছিল।

‘আম আদমি’ ছবি ধূসর হয়ে গেছে

অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে একজন সাধারণ নেতা হিসেবে চেনা যেত। আঁকড়ানো পোশাক, মফলার এবং সরল জীবন তার পরিচয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই ছবি দুর্বল হতে শুরু করেছে।

- মোটা দামি পফার জ্যাকেট পরে জনসাধারণের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকা
- ২৫,০০০ টাকার জ্যাকেট পরা নিয়ে প্রশ্ন উঠা
- ক্ষমতায় থাকাকালীন ভিআইপি সংস্কৃতির প্রসার

এই পরিবর্তন জনগণের মধ্যে তার ‘আম আদমি’ ছবি দুর্বল করেছে, যার ফলে তার মূল ভোটাররা তার থেকে দূরে সরে গেছে।

‘শীশমহল’ বিতর্ক জটিলতা বৃদ্ধি করেছে

ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বিজেপি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারি বাসস্থানের ছবি প্রকাশ করে তাকে ‘শীশমহল’ বলে অভিহিত করে। অভিযোগ উঠেছিল যে তিনি ৩.৭৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করে নিজের বাসস্থানের বিলাসবহুল সংস্কার করেছেন।

- বাড়িতে মোটা দামি অভ্যন্তরীণ সজ্জা, সোনা, জিম এবং জ্যাকুজি-র মতো সুযোগ-সুবিধা
- জনগণের টাকার অপব্যবহারের অভিযোগ
- সরলতা এবং সততা নিয়ে প্রশ্ন
যদিও কেজরিওয়াল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন, তবে জনগণের মনে সন্দেহ অবশ্যই জেগে উঠেছে।

দুর্নীতিবিরোধী ছবির আঘাত

অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাজনীতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবি করেছিলেন, কিন্তু তার নিজের দলের উপরই দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

- মদ নীতি ঘোটালী: আপ সরকারের নতুন মদ নীতিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে
- নেতাদের গ্রেফতার: অনেক আপ নেতার উপর ঘোটালার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে
- মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গ্রেফতার: মার্চ ২০২৪ সালে ইডি কেজরিওয়ালকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার করেছে

এটিই প্রথমবার যখন কোনও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে এই ধরণের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে তার সততা এবং নীতিশুদ্ধ ছবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি জনগণের ক্ষোভ বৃদ্ধি করেছে

২০১৫ এবং ২০২০ সালে কেজরিওয়াল বেশ কিছু বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু জনগণের মনে হয়েছে যে সেগুলি পূর্ণ হয়নি।

যমুনা পরিষ্কার অভিযান ব্যর্থ: ২০২৪ সালেও যমুনা নদী বিষাক্ত ফেনা দিয়ে ভরা ছিল
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ: স্মগ টাওয়ার এবং অ্যান্টি-স্মগ গানের মতো পরিকল্পনাগুলি কার্যকর হয়নি
কচুরি পাহাড় যথাস্থানে: দিল্লির গাজীপুর এবং ভালসোয়া কচুরি ডাম্পিং সাইটগুলি অপসারণের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ রয়ে গেছে
এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করতে আপের ব্যর্থতা জনগণকে হতাশ করেছে এবং নির্বাচনে তার প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জনতা কেন আপের মডেল প্রত্যাখ্যান করেছে?

সরকারবিরোধী ঢেউ: ১০ বছর একই সরকার থাকার কারণে জনতা পরিবর্তন চেয়েছিল
মোদি ফ্যাক্টর: বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নির্বাচনী কৌশল তৈরি করেছে, যা সফল হয়েছে
বিরোধীদের আক্রমণ: বিজেপি আপ সরকারের ত্রুটিগুলিকে নির্বাচনী ইস্যু করে তুলেছে
ইডি এবং সিবিআই তদন্ত: আপের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে

কি আপের রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে?

যদিও আপ এই নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেয়েছে, তবে দলটি এখনও পাঞ্জাবে ক্ষমতায় আছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরাজয়ের পর বলেছেন যে তিনি ‘সংবেদনশীল বিরোধী’র ভূমিকা পালন করবেন এবং জনগণের সেবা চালিয়ে যাবেন। এখন দেখার বিষয় হল আপ এই পরাজয় থেকে উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না, নাকি এটি তার রাজনৈতিক অবসানের সূচনা।

Leave a comment