ভারতের কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্প ১৯৮০ সাল থেকে চলছে। এটি একটি স্বদেশী যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন যা রাফেল এবং পঞ্চম প্রজন্মের জেট বিমানে ব্যবহৃত হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় #FundKaveriEngine দ্রুত ট্রেন্ড করছে।
কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্প: ভারতের কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্প বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কারণ এটি দেশের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে স্বদেশীকরণের দিকে একটি বড় ধাপ। ১৯৮০-এর দশকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল স্বদেশী টার্বোফ্যান ইঞ্জিন উদ্ভাবন করা, যা ভারতের যুদ্ধবিমানের জন্য অপরিহার্য।
বিশেষ করে এটি তেজসের মতো হালকা যুদ্ধবিমানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, তবে এর ব্যবহার এখন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে রাফেলের মতো বিদেশী যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের পরিবর্তে কাভেরি ইঞ্জিন একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্পের সূচনা
কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্পের সূচনা ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)-এর অধীনে ১৯৮০-এর দশকে হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ৮১-৮৩ kN থ্রাস্টের একটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন তৈরি করা, যা তেজসের মতো যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা যাবে। ভারত এই ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ স্বদেশীভাবে উদ্ভাবন করতে চেয়েছিল যাতে বিদেশী ইঞ্জিনের উপর নির্ভরতা কমে। প্রকল্পের দায়িত্ব DRDO-এর জিটিআরই ল্যাব (Gas Turbine Research Establishment)-কে দেওয়া হয়েছিল।
কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্পের সামনে আসা চ্যালেঞ্জ
এই প্রকল্পের পথে অনেক প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক বাধা এসেছিল। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উন্নত অ্যারোথার্মাল ডায়নামিক্স, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী উপকরণের উদ্ভাবন। এছাড়াও ভারতকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং উপকরণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলির উপর নির্ভর করতে হয়েছিল, যা পারমাণবিক পরীক্ষার পরে নিষেধাজ্ঞার কারণে কঠিন হয়ে পড়েছিল। তহবিলের অভাব এবং দেশে উচ্চমানের পরীক্ষার সুযোগের অভাবও প্রকল্পকে প্রভাবিত করেছে। এই কারণে কাভেরি ইঞ্জিনের উন্নয়ন অনেকবার ধীর হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সাফল্য এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
সম্প্রতি কাভেরি ইঞ্জিন ড্রাই ভেরিয়েন্ট টেস্টিংয়ে সফলতা অর্জন করেছে, যা এটিকে প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে। এই ইঞ্জিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর ফ্ল্যাট-রেটেড ডিজাইন, যা উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ গতির অবস্থায় থ্রাস্ট লস কমায়।
এছাড়াও এতে টুইন-লেইন ফুল অথরিটি ডিজিটাল ইঞ্জিন কন্ট্রোল (FADEC) সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইঞ্জিনকে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। ইঞ্জিনে ম্যানুয়াল ব্যাকআপও রয়েছে, যা জরুরী অবস্থায় নিরাপত্তা বজায় রাখে।
কাভেরি ইঞ্জিনের ভারতের জন্য গুরুত্ব
যদি কাভেরি ইঞ্জিন পুরো ক্ষমতায় কাজ করে, তাহলে এটি ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনতে পারে। এটি রাফেলের মতো যুদ্ধবিমানের জন্য একটি শক্তিশালী বিকল্প হবে এবং ভবিষ্যতের পঞ্চম প্রজন্মের বিমান যেমন AMCA-র জন্যও প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন সরবরাহ করবে। এতে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশের উপর নির্ভরতা কমবে। এছাড়াও এতে প্রতিরক্ষা ব্যয়েও সাশ্রয় হবে এবং দেশের কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কাভেরি ইঞ্জিন প্রকল্পের দাবী
এই প্রকল্প নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় #FundKaveriengine ট্রেন্ড করছে। মানুষ সরকারের কাছে কাভেরি ইঞ্জিনের জন্য আরও তহবিল এবং সম্পদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে যাতে এই প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। এটি দেখায় যে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশী প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির প্রতি উৎসাহ এবং আশা বৃদ্ধি পাচ্ছে।