ভারতীয় বায়ুসেনা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি বৃহৎ ‘যুদ্ধাভ্যাস’ (সামরিক অনুশীলন) আয়োজন করেছে, যাতে রাফেল যুদ্ধবিমান এবং সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই অনুশীলনের উদ্দেশ্য হল ভারতীয় বায়ুসেনার প্রস্তুতি ও যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করা।
পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি বেড়ে উঠা উত্তেজনার মধ্যে, ভারতীয় বায়ুসেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাভ্যাসের আয়োজন করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘যুদ্ধাভ্যাস আক্রমণ’। এই যুদ্ধাভ্যাসে ভারতীয় বায়ুসেনার সবচেয়ে উন্নত এবং শক্তিশালী যুদ্ধবিমান, রাফেল এবং সুখোই-৩০, অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই অনুশীলন ভারতের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এর সময় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
কী ‘যুদ্ধাভ্যাস আক্রমণ’ এবং কেন এর সময় নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতীয় বায়ুসেনা জানিয়েছে যে এই যুদ্ধাভ্যাস একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ, যা বায়ুসেনার যুদ্ধ কৌশল এবং পরিচালনার ক্ষমতা আরও উন্নত করার জন্য সময়-সময় আয়োজন করা হয়। এই অনুশীলনের সময় বায়ুসেনার বিমানগুলি অনেক জটিল অপারেশনের অনুশীলন করছে, যার মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে হামলা, লক্ষ্যবস্তুতে সঠিক বোমা বিস্ফোরণ এবং শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার অনুশীলন।
যদিও, এই অনুশীলনের সময়কাল এবং এর প্রকৃতি বিবেচনা করে এটিকে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর যখন পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ, তখন বায়ুসেনার এই যুদ্ধাভ্যাস স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে ভারতীয় বায়ুসেনা তার প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার জন্য সক্রিয়।
রাফেল এবং সুখোই-৩০-এর শক্তিশালী সমন্বয়
এই অনুশীলনে রাফেল যুদ্ধবিমান এবং সুখোই-৩০-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছে। রাফেল বিমানগুলির ভূমিকা এই অনুশীলনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে সবচেয়ে নতুন এবং অত্যাধুনিক বিমানগুলির মধ্যে একটি। ভারত ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফেল বিমান কিনেছে এবং এখন এই বিমানগুলি ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
রাফেল একসাথে একাধিক মিশন সম্পন্ন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার ফলে এটি শুধুমাত্র শত্রুর বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম নয়, বরং এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করতে পারে। সুখোই-৩০ বিমান, যা ভারতীয় বায়ুসেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এই অনুশীলনেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুখোই-৩০-এর উচ্চ গতি, দীর্ঘ উড়ানের পাল্লা এবং ভারী অস্ত্র বহন করার ক্ষমতা রয়েছে, যা এটিকে যে কোনও যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। উভয় বিমানের সমন্বয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরের পরিস্থিতি
পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের বালাকোটে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে এয়ার স্ট্রাইক করেছিল, যা ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তির একটি বৃহৎ প্রদর্শন ছিল। এই আকাশ হামলা ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি এবং উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা তুলে ধরেছিল। তখন ভারতীয় বায়ুসেনা মিরাজ ২০০০-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল, কিন্তু এখন রাফেল বিমান যুক্ত হওয়ায় বায়ুসেনার শক্তি আরও বেড়েছে।
তদুপরি, ভারত সম্প্রতি S-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রও তার সামরিক শক্তিতে যুক্ত করেছে, যার ফলে শত্রুর আকাশ হামলার মোকাবেলা করার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সিস্টেম শত্রুর বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্য করে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম, যার ফলে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ স্তরে সুরক্ষিত হয়েছে।
কী এই অনুশীলন পাকিস্তানের জন্য একটি সতর্কবার্তা?
‘যুদ্ধাভ্যাস আক্রমণ’ এবং এই সময় বায়ুসেনার অত্যাধুনিক বিমানের প্রদর্শন পাকিস্তানের জন্য একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত হতে পারে। পাকিস্তানের সাথে সীমান্তে বেড়ে উঠা উত্তেজনাকে বিবেচনা করে, ভারতীয় বায়ুসেনার এই অনুশীলন শুধুমাত্র সামরিক প্রস্তুতি শক্তিশালী করার একটি উপায় নয়, বরং এটি পাকিস্তানকেও এই বার্তা দেয় যে ভারত তার সামরিক শক্তি অব্যাহত রাখবে এবং যে কোনও ধরণের আক্রমণের জোরালো জবাব দিতে প্রস্তুত।
এছাড়াও, এই অনুশীলনের সময় ভারতীয় বায়ুসেনা কেন্দ্রীয় এবং পূর্ব ভারতীয় অঞ্চল থেকেও তার অনেক বিমান অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি বায়ুসেনার সামগ্রিক শক্তি এবং তার কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করে।