ভারত আরও ৪০টি রাফেল যুদ্ধবিমান কিনছে: চীন-পাকিস্তানের উদ্বেগ বৃদ্ধি

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতীয় বায়ুসেনা সংক্রান্ত একটি প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকার ফ্রান্স থেকে আরও ৪০টি রাফেল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপটি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চীনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনার ক্ষমতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

India To Purchase Rafale Fighter Jets: ভারত আবারও তার প্রতিরক্ষা নীতিতে সাহসী ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও মারণাস্ত্র হিসেবে পরিচিত ৪০টি রাফেল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন ভারতের বায়ুসেনা পুরানো বিমানগুলি অবসরের কারণে সংকটের মুখোমুখি, অন্যদিকে চীন ক্রমাগত তার বায়ুশক্তি বৃদ্ধি করছে।

এই চুক্তি ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সরকার থেকে সরকার (G2G) স্তরে হবে এবং এর পিছনে উদ্দেশ্য কেবল সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, বরং কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখাও।

রাফেল: সেই অস্ত্র যাকে শত্রু ভয়ের সাথে মনে রাখে

রাফেল যুদ্ধবিমানের কোন পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। ড্যাসল্ট এভিয়েশন কর্তৃক নির্মিত এই বহু-কার্যকরী (Multirole) যুদ্ধবিমান আকাশে শত্রুকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ভূমিতেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।

ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই ৩৬টি রাফেল জেটের একটি স্কোয়াড্রন রয়েছে, যা অম্বালা এবং হাশিমারা এয়ারবেসে স্থাপন করা হয়েছে। তাদের আঘাত করার ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং মিশন প্রস্তুতি বিবেচনা করে, ৪০টি আরও বিমান কেনা একটি স্বাভাবিক এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত।

MRFA পরিকল্পনা এবং ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ রাফেল ক্রয়

ভারত দীর্ঘদিন ধরে MRFA (Multi-Role Fighter Aircraft) পরিকল্পনার অধীনে ১১৪টি যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনার উপর কাজ করছে। এই চুক্তি এখনও প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, এবং কোনও আনুষ্ঠানিক টেন্ডার জারি করা হয়নি।

এরই মধ্যে, ভারত সরকার ভারতীয় বায়ুসেনার তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ফ্রান্স থেকে সরাসরি ৪০টি রাফেল জেট কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে MRFA-প্লাস নাম দেওয়া হয়েছে, যা বায়ুসেনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্যকে বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভারত সফরের সাথে সংযুক্ত ইঙ্গিত

সূত্রের খবর, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এপ্রিলের শেষের দিকে ভারত সফর করবেন। এই সফরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফেল মেরিন এবং বায়ুসেনার জন্য ৪০টি রাফেলের চুক্তির আলোচনার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হতে পারে। রাফেল মেরিন যুদ্ধবিমান ভারতের INS বিক্রান্তের মতো বিমানবাহী জাহাজে স্থাপন করা হবে, যার ফলে নৌবাহিনীর আঘাত করার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।

কেন এই ক্রয় জরুরী হয়ে উঠেছে?

ভারতীয় বায়ুসেনা বর্তমানে ৩১টি স্কোয়াড্রন নিয়ে কাজ করছে, যখন তার কমপক্ষে ৪২.৫টি স্কোয়াড্রনের প্রয়োজন। প্রতি বছর পুরানো বিমান যেমন মিগ-২১ এবং মিগ-২৭ অবসরপ্রাপ্ত হচ্ছে, যার ফলে ক্ষমতায় হ্রাস পেয়েছে। বায়ুসেনার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন এবং পাকিস্তানের যৌথ চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে ভারতকে প্রতি বছর ৩৫-৪০টি নতুন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন।

এয়ার মার্শাল এ.পি. সিংও সম্প্রতি বলেছেন, আমাদের আমাদের বায়ুসেনাকে ভবিষ্যতের বিপদগুলির সাথে সজ্জিত করতে হবে, অন্যথায় আমাদের কৌশলগত ক্ষতি সহ্য করতে হবে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বড় অবদান

  • এইবার রাফেল চুক্তিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের উপরও বড় ফোকাস থাকবে। আশা করা হচ্ছে কিছু জেটের অ্যাসেম্বলিং বা পার্টস উৎপাদন ভারতে হবে, যার ফলে কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে না, বরং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।
  • এর সাথে সাথে, ফ্রান্সের কোম্পানি Safran-এর সাথে ভারতে হেলিকপ্টার ইঞ্জিন নির্মাণ নিয়ে আলোচনাও এই সফরে হতে পারে। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতাকে নতুন দিক দিতে পারে।
  • রাফেলের কোন শক্তি আছে যা ভারতকে এটি আবার কেনার জন্য বাধ্য করছে?
  • আঘাত করার ক্ষমতা: রাফেল SCALP, MICA এবং Meteor এর মতো ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত যা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত করতে পারে।
  • ইলেকট্রনিক যুদ্ধ: এর SPECTRA সিস্টেম শত্রুর রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারদর্শী।
  • সর্ব আবহাওয়া অপারেশন: রাত হোক, খারাপ আবহাওয়া হোক বা উচ্চতা হোক— রাফেল সব পরিস্থিতিতে উড়ান ভরতে সক্ষম।
  • দ্বৈত ভূমিকা: এই জেট একই মিশনে এয়ার সুপিরিয়রিটি এবং গ্রাউন্ড আক্রমণ উভয়ই করতে পারে।

চীন ও পাকিস্তান কেন উদ্বিগ্ন হচ্ছে?

চীন যেখানে J-20 এর মতো পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের মাধ্যমে তার বায়ুবাহিনীকে আপডেট করছে, সেখানে পাকিস্তান এখনও আমেরিকার F-16 এবং চীনের JF-17 এর মতো সীমিত ক্ষমতার বিমানের উপর নির্ভরশীল। রাফেলের দুটি স্কোয়াড্রন দিয়েই পাকিস্তান কৌশলগত ভারসাম্যে আঘাত পেয়েছিল—এখন ৪০টি আরও যুক্ত হলে পরিস্থিতি আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে।

কৌশলগত বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানী বলেন, রাফেল কেবলমাত্র প্রযুক্তিতে অতুলনীয় নয়, এর মানসিক প্রভাবও প্রতিবেশী দেশগুলির উপর পড়ে। রাফেল জেটগুলির ডেলিভারি ২০২৮ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০৩১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। এই সময়কালে ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সহায়তা অবকাঠামোর উপর দৃষ্টি দেবে।

ভারত সরকার আগামী বছরগুলিতে AMCA (Advanced Medium Combat Aircraft) এর মতো দেশীয় স্টিলথ প্রকল্পগুলিকেও গতি দিচ্ছে, কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত রাফেল ভারতীয় সুরক্ষা কাঠামোর মেরুদণ্ড হিসেবে থাকবে।

Leave a comment