ভারত-চীন সম্পর্কের ৭৫ বছর: সহযোগিতা, বাণিজ্য, এবং সীমান্ত বিবাদের চ্যালেঞ্জ

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারত-চীন সম্পর্কের ৭৫ বছর: সহযোগিতা, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির বিকাশ, কিন্তু সীমান্ত বিবাদ এখনও চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সুষম প্রতিযোগিতা অপরিহার্য।

ভারত-চীন: ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সম্পর্ক কেবল দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুটি প্রাচীন সভ্যতা ও এশিয়ার দুটি বৃহত্তম শক্তির বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিত্বও বহন করে। প্রায় তিনশ কোটি জনসংখ্যা এবং বিশাল ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে এই দুটি রাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর বড় বক্তব্য: "সংলাপই সমাধান"

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া ও অংশীদারিত্বের भावना রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "সুস্থ প্রতিযোগিতা হতে পারে, কিন্তু তা সংঘর্ষে পরিণত হওয়া উচিত নয়। আমরা সংলাপকে অগ্রাধিকার দিই, ঝগড়াকে নয়।"

কেবলমাত্র ৭৫ বছরের পুরোনো সম্পর্ক?

ভারত-চীন সম্পর্ক হাজার হাজার বছর পুরোনো। প্রাচীন কালে চীনা ভ্রমণকারীরা বৌদ্ধ জ্ঞানের সন্ধানে ভারতে এসেছিলেন এবং সিল্ক রোডের মাধ্যমে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়েছিল। ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডেলরিম্পলের 'দ্য গোল্ডেন রোড' গ্রন্থে এই সম্পর্কের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে।

উত্থান-পতন ও সংঘর্ষের মুহূর্ত

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ এবং ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ এই সম্পর্কে গভীর ফাটল সৃষ্টি করেছিল। তবে, ১৯৮০-এর দশকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয় এবং ১৯৯০-এর পর থেকে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

দ্রুত বর্ধমান বাণিজ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা

২০০০-এর দশকের প্রারম্ভে দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ২০২০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। ভারত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে এবং চীন থেকে ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও মেশিনারি আমদানি করে। প্রায় ৩০,০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করছে।

সীমান্ত বিবাদ এখনও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

লাদাখ ও ডোকলামের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে উত্তেজনার পরও দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে। সীমান্ত বিবাদ এবং কৌশলগত প্রতিযোগিতার পরেও সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভবিষ্যতের পথ: সংলাপ, সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতা

একবিংশ শতাব্দীকে এশিয়ার শতাব্দী বলা হয়। ভারত ও চীনের মতো দুটি উদীয়মান রাষ্ট্র যদি সংলাপ ও বুদ্ধিমত্তার সাথে এগিয়ে যায়, তাহলে কেবল এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই এটি শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায় – “সংলাপই স্থিতিশীল সম্পর্কের চাবিকাঠি।”

Leave a comment