গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI-171 উড্ডয়নের অব্যবহিত পরেই বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনায় ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে, যারা ৩ মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিমান দুর্ঘটনা: ১২ জুন ২০২৫ তারিখে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171-এর বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সমগ্র দেশ কেঁপে উঠেছে। উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এই দুর্ঘটনা ঘটে, বিমানটি একটি মেডিকেল হস্টেলের চত্বরে পড়ে যায়। এখন সরকার এবং নিরাপত্তা বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে।
উড্ডয়নের অব্যবহিত পরেই বিমানটি উচ্চতা হারিয়েছে
নিরাপত্তা বিমান সচিব সমীর কুমার সিনহা জানিয়েছেন যে, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 দুপুর ১:৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের পর বিমানটি মাত্র ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এরপরই পাইলট ‘মে ডে’ কল করেছিলেন এবং বিমানটি দ্রুত উচ্চতা হারাতে শুরু করে। মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি শহরের মেঘানীনগর এলাকায় অবস্থিত একটি মেডিকেল হস্টেলের উপর পড়ে যায়।
দুর্ঘটনার আগে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল না
সমীর সিনহা আরও স্পষ্ট করেছেন যে, এই বিমানটি দুর্ঘটনার আগে প্যারিস-দিল্লি-আহমেদাবাদ রুটের উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছিল এবং এই সময় কোনও ধরণের প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়নি। বিমানের সকল সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। তাই উড্ডয়নের অব্যবহিত পরেই বিধ্বস্ত হওয়া প্রশ্ন উত্থাপন করে।
এক মিনিটে জীবন বদলে গেল
ফ্লাইটে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে ২৪১ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। মাত্র একজন যাত্রী এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জীবিত রয়ে গেছেন। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর হস্টেলের চত্বরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে উপস্থিত ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে বিমানের কিছু অংশ হস্টেল ভবনের ভেতরেও ঢুকে গেছে।
উড্ডয়নের এক মিনিট পর ‘মে ডে’ সিগনাল
পাইলট যখন পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন, তখন দুপুর ১:৩৯ মিনিটে তিনি এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে ‘মে ডে’ সিগনাল পাঠিয়েছিলেন। ‘মে ডে’ কল তখন দেওয়া হয় যখন পাইলট মনে করেন যে বিমানে গুরুতর প্রযুক্তিগত বা কার্যকরী সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং তিনি সাহায্য চাইছেন। যদিও পাইলটের আর উদ্ধারের সুযোগ হয়নি এবং বিমানটি সরাসরি নিচে পড়ে গেছে।
তদন্তের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি
দুর্ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির অধ্যক্ষতা গৃহ সচিব করবেন এবং इसमें কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যুক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সামিল থাকবেন। এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
কমিটির তদন্তের পরিসর হবে:
- দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ
- বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)-এর পর্যালোচনা
- ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা রোধের উপায়
ড্রিমলাইনার বিমানের ব্যাপক তদন্ত শুরু
DGCA (নাগরিক বিমান চলাচল মহানির্দেশক)-এর নির্দেশে এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে থাকা সমস্ত বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের তদন্ত শুরু হয়েছে। ভারতে মোট ৩৪ টি ড্রিমলাইনার আছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার বিমানটিও এই শ্রেণির ছিল।
মন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন
নিরাপত্তা বিমান মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডু সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা নিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি নিজেই সড়ক দুর্ঘটনায় তার পিতাকে হারিয়েছেন, তাই তিনি দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলির বেদনা বুঝতে পারেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার দুর্ঘটনার শিকারদের সাথে আছে এবং দোষীদের ক্ষমা করা হবে না।