সিআইডি'র সাফল্য: ইডি সেজে কোটি টাকা প্রতারণার মূলহোতা গ্রেফতার

🎧 Listen in Audio
0:00

সিআইডি-র সাইবার ক্রাইম শাখা একটি বড় সাফল্য অর্জন করে সাইবার প্রতারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এই মামলাটি ১৪ মে দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে অভিযোগকারী জানিয়েছিলেন যে তাকে WhatsApp কলে ইডি কর্মকর্তা সেজে যোগাযোগ করা হয়েছিল।

রাঁচি: ঝাড়খণ্ডে সাইবার প্রতারণার একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে দুর্বৃত্ত প্রতারকরা নিজেদের প্রয়োগ নির্দেশালয় (ইডি)-এর কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে নির্যাতন করার পাশাপাশি ডিজিটাল গ্রেফতারের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা লুট করেছে। রাঁচিস্থিত সিআইডি-র সাইবার ক্রাইম টিম এই উচ্চ-প্রোফাইল প্রতারণা চক্রের পর্দাফাশ করে হিমাচল প্রদেশ থেকে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারের সাথে সাথে ডিজিটাল প্রতারকদের আন্তঃরাজ্যীয় নেটওয়ার্কের কথাও উঠে এসেছে, যা জম্মু থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত বিস্তৃত।

মনি লন্ডারিংয়ের নামে ভয়, তারপর ডিজিটাল গ্রেফতার

সাইবার ক্রাইম থানায় ১৪ মে দায়ের হওয়া এই মামলার সূচনা হয়েছিল একটি WhatsApp কল থেকে। কলকারী নিজেকে ইডি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে মনি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত করার হুমকি দিয়েছিল। এরপর ভিডিও কলের মাধ্যমে ডিজিটাল গ্রেফতারের নাটক রচনা করা হয়, যেখানে ভুক্তভোগীকে বলা হয় যে সে ক্যামেরার সামনে থাকবে এবং কোথাও বাইরে যাবে না, কারণ সে ‘তদন্তের আওতায়’ আছে।

এই মানসিক চাপের ফলে ভুক্তভোগী এক কোটি ৩৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও, তদন্তে জানা গেছে যে গত চার দিনের মধ্যেই চক্রটি একটি জাল অ্যাকাউন্টে ৩.১০ কোটি টাকা ক্রেডিট করে নিয়েছে।

মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতির নামে খোলা অ্যাকাউন্ট

গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত “মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতি”র নামে ইয়েস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। এই অ্যাকাউন্টটি প্রতারণার টাকা জোগাড় করার এবং পরে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করার জন্য ব্যবহার করা হত। ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে জানা গেছে যে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এই অ্যাকাউন্টে ব্যাপক অর্থ জমা হয়েছিল।

এই চক্রের কতটা ব্যাপক ছিল, তার ধারণা পাওয়া যায় ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে এই একটি অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত ২৭টি অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্য থেকে দায়ের হওয়ার ঘটনার মাধ্যমে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হরিয়ানা, কেরালা, রাজস্থান, অসম, দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্য। অর্থাৎ দেশের কোণে কোণে লোকেরা এই চক্রের শিকার হয়েছে।

আগেও গ্রেফতার হয়েছে

হিমাচল প্রদেশ থেকে ধরা পড়া অভিযুক্তের নাম সুভাষ চন্দ্র ওরফে সুভাষ শর্মা। এর আগেও এই মামলায় বি ইশাক আহমেদকে তেলেঙ্গানা থেকে এবং লালদুসঙ্গাকে মিজোরাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, একটি ATM কার্ড এবং আধার কার্ড উদ্ধার করেছে, যার মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

এই পুরো অপারেশনে রাঁচিস্থিত সিআইডি-র সাইবার ক্রাইম টিমের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সতর্কতার প্রশংসা করা হচ্ছে। টেকনিক্যাল সেলের সাহায্যে অভিযুক্তের অবস্থান খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, এই চক্রটি বহু স্তরে কাজ করে, যেখানে কল সেন্টার চালানো, জাল পরিচয়পত্র তৈরি এবং মানি মিউলস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পুলিশ এই ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেছে যে কোনও অজানা কল বা WhatsApp ভিডিও কলে যদি কেউ নিজেকে সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে অর্থ ট্রান্সফারের দাবী করে, তাহলে অবিলম্বে সতর্ক হয়ে ১৯৩০ নম্বরে অথবা সাইবার হেল্পলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

Leave a comment