মাসিক ২০,০০০ টাকা বেতনে অবসর পর EPF ও EPS থেকে কত পাওয়া যাবে?

🎧 Listen in Audio
0:00

মাসিক ২০,০০০ টাকা বেতনে ৩৫ বছর পর অবসরের পর কত পেনশন এবং তহবিল পাওয়া যাবে? জেনে নিন EPF এবং EPS থেকে অবসরের পর কত তহবিল এবং পেনশন পাওয়া যাবে।

EPF ক্যালকুলেটর: অবসর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যখন আপনি কাজ থেকে মুক্ত হয়ে নির্দ্বিধায় আপনার বাকি স্বপ্নগুলি পূরণ করতে চান। কিন্তু এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো টাকা, এবং এর জন্য কর্মচারী ভবিষ্যনিধি (EPF) একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। EPF এবং কর্মচারী পেনশন योजना (EPS) আপনার অবসরকে নিরাপদ করার একটি চমৎকার উপায়। যদি আপনার বেতন ২০,০০০ টাকা হয় এবং আপনি ২৫ বছর বয়স থেকে EPF এবং EPS-এর অবদান শুরু করেন, তাহলে ৩৫ বছর পর আপনি কত পেনশন এবং তহবিল পাবেন, তার হিসাব আমরা এখানে দেব।

EPF এবং EPS কি এবং এগুলি কীভাবে কাজ করে?

EPF (কর্মচারী ভবিষ্যনিধি) এমন একটি পরিকল্পনা যেখানে কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা উভয়েই প্রতি মাসে অবদান রাখেন। এই অবদান আপনার EPF অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং তার উপর সুদ পাওয়া যায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য EPF-এর সুদের হার ৮.২৫% নির্ধারিত হয়েছে। এতে জমা টাকা, সুদ এবং অবসরের পর প্রাপ্ত অর্থ সবই ট্যাক্স-ফ্রি। প্রতি মাসে আপনার বেতনের ১২% EPF-এ জমা হয়।

EPS (কর্মচারী পেনশন योजना) একটি পেনশন পরিকল্পনা, যার উদ্দেশ্য অবসরের পর প্রতি মাসে আপনাকে পেনশন প্রদান করা। এই পরিকল্পনার অধীনে নিয়োগকর্তার দ্বারা অবদান দেওয়া হয়। যখন EPF-এ ১২% কাটা হয়, তখন নিয়োগকর্তার ৮.৩৩% EPS-এ যায় এবং বাকি ৩.৬৭% EPF-এ যায়। তবে, EPS-এর সীমা ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, অর্থাৎ যদি আপনার বেতন ১৫,০০০ টাকা থেকে বেশি হয় তবে EPS-এ শুধুমাত্র ১৫,০০০ টাকার উপর ৮.৩৩% অবদান হবে।

EPF এবং EPS-এ আপনার বেতন থেকে কত অবদান যায়?

ধরে নিন আপনার বেতন ২০,০০০ টাকা। এর মধ্যে আপনার অবদান হবে:
২০,০০০ × ১২% = প্রতি মাসে ২০০০ টাকা EPF-এ।

নিয়োগকর্তার অবদান

২০,০০০ × ১২% = ২০০০ টাকা, যা দুটি ভাগে বিভক্ত:
EPS-এ: ১৫,০০০ × ৮.৩৩% = ১২৫০ টাকা (EPS-এর সীমা ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত)
EPF-এ: ২০০০ – ১২৫০ = ৭৫০ টাকা।
মোট EPF-এ: ২০০০ (আপনার) + ৭৫০ (নিয়োগকর্তা) = ২৭৫০ টাকা প্রতি মাসে।
EPS-এ: ১২৫০ টাকা প্রতি মাসে।

৩৫ বছর পর EPF থেকে কত তহবিল পাওয়া যাবে?

আপনি ২৫ বছরের এবং ৬০ বছর বয়সে অবসর নিতে যাচ্ছেন, অর্থাৎ আপনার কাছে ৩৫ বছর সময় আছে। প্রতি মাসে ২৭৫০ টাকা EPF-এ জমা হবে। বছরে এটি হবে:
২৭৫০ × ১২ = ৩৩,০০০ টাকা।
এই টাকা ৮.২৫% সুদের সাথে ৩৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই হিসেবে ৩৫ বছর পর আপনার কাছে প্রায় ৬৮.৯ লক্ষ টাকা জমা হবে। (Note: This calculation is an approximation and may differ based on the actual interest earned.)

EPS থেকে কত পেনশন পাওয়া যাবে?

EPS-এ প্রতি মাসে ১২৫০ টাকা জমা হচ্ছে। এই টাকা অবসরের পর পেনশনে রূপান্তরিত হয়। পেনশনের হিসাব এইভাবে হয়:
পেনশন = (সেবা কাল × গড় বেতন) ÷ 70
সেবা কাল: ৩৫ বছর
গড় বেতন: ১৫,০০০ টাকা (EPS-এর সীমা)
তাহলে পেনশন = (৩৫ × ১৫,০০০ টাকা) ÷ 70 = ৭,৫০০ টাকা প্রতি মাসে।

মোট মিলিয়ে কত লাভ হবে?

এখন দুটোকে যোগ করি:

EPF থেকে: ৬৮.৯ লক্ষ টাকা (এককালীন অর্থ)
EPS থেকে: ৭,৫০০ টাকা প্রতি মাসে পেনশন।

ধরে নিন আপনি অবসরের পর ২০ বছর বেঁচে থাকেন, তাহলে পেনশনের মোট টাকা হবে:
৭,৫০০ × ১২ × ২০ = ১৮ লক্ষ টাকা।

এইভাবে মোট তহবিল এবং পেনশন মিলিয়ে আপনার ৮৬.৯ লক্ষ টাকা লাভ হবে। তবে, মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আপনার অতিরিক্ত বিনিয়োগেরও প্রয়োজন হতে পারে।

বেতন বৃদ্ধি পেলে কত লাভ হবে?

যদি আপনার বেতন প্রতি বছর ৫% করে বৃদ্ধি পায়, তাহলে ৩৫ বছর পর EPF তহবিল ১.২ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ১০% বেতন বৃদ্ধি হলে এটি ২ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে। তবে, EPS-এর সীমা ১৫,০০০ টাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে, কিন্তু বেতন বৃদ্ধি পেলে পেনশন কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

বার্ধক্যের জন্য এই টাকা যথেষ্ট হবে কি?

৬৮.৯ লক্ষ টাকা এবং ৭,৫০০ টাকা মাসিক পেনশন এখন ঠিক মনে হতে পারে, কিন্তু ৩৫ বছর পর মূল্যস্ফীতির কারণে এই টাকা কম হতে পারে। যদি আপনি অবসরের পর ১ কোটি টাকা বা তার বেশি চান, তাহলে EPF ছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম এবং শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ করা উচিত। যদি আপনি প্রতি মাসে ২০০০-৩০০০ টাকা অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনার অবসর তহবিল দ্বিগুণ হতে পারে।

নোট: এটি কেবলমাত্র একটি আনুমানিক মূল্যায়ন। প্রকৃত তথ্য EPF-এর সুদের হার এবং বেতন বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

Leave a comment