প্রধানমন্ত্রী মোদী আমেরিকায় আগমন, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সাথে বাণিজ্য, বহিষ্কার এবং শুল্ক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। মোদীর চেষ্টা থাকবে শুল্ক যুদ্ধ রোধ এবং ভারতীয় প্রবাসীদের বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় উন্নতি সাধন।
মোদী-ট্রাম্প বৈঠক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার সন্ধ্যায় (ভারতীয় সময়ানুসারে বৃহস্পতিবার সকালে) আমেরিকায় আগমন করেন। ওয়াশিংটন ডিসির বিমানবন্দরে তাঁর জমকালো স্বাগত জানানো হয়। পরবর্তীতে, তিনি ব্লেয়ার হাউসে যান, যেখানে বহু সংখ্যক প্রবাসী ভারতীয় তাঁর সাথে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী আমেরিকার ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর তুলসী গাবার্ডের সাথেও দেখা করেন। তবে, এই দুই দিনের সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক, যা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে উঠতে পারে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
মোদী এবং ট্রাম্পের বৈঠকে বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হল বহিষ্কার এবং শুল্ক। প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী মোদী কি তাঁর ‘মাথাকঠিন’ বন্ধু ট্রাম্পকে এই বিষয়গুলোতে রাজি করাতে সক্ষম হবেন? এটা দেখার বিষয়।
বহিষ্কার নিয়ে ভারতের উদ্বেগ
সম্প্রতি আমেরিকা ১০৪ জন অবৈধ প্রবাসী ভারতীয়কে অমৃতসরে বহিষ্কার করেছে। বিশেষত, তাদেরকে আমেরিকান সামরিক বিমানে হাতকড়ি এবং শিকল দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছে। ভারতে এই অমানবিক আচরণের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সংসদেও বিরোধী দল এই বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ঘেরাও করে এবং বলেছে যে বহিষ্কার যথাস্থানে, কিন্তু এ ধরণের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
কি ট্রাম্প ভারতীয়দের বহিষ্কারের বিরোধিতা মেনে নেবেন?
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তিনি এই বিষয়টি ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরবেন, কিন্তু ট্রাম্পের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে এটি এত সহজ নয়। ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই ট্রাম্প অবৈধ প্রবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। আমেরিকা আগেও প্রবাসীদের বহিষ্কার করেছে, কিন্তু এবার যেভাবে সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে এবং শিকলে বেঁধে তাদের পাঠানো হয়েছে, তা অস্বাভাবিক।
সম্ভবত ভারত এই প্রক্রিয়াকে আরও সম্মানজনক করার জন্য আমেরিকার সাথে আলোচনা করবে। একটি বিকল্প হতে পারে বহিষ্কৃত ভারতীয়দের নিয়ে আসার জন্য ভারত নিজেই ফ্লাইটের ব্যবস্থা করবে। এই বিষয়ে কোনো সমঝোতা হবে কিনা তা দেখার বিষয়।
শুল্ক বিরোধ: ট্রাম্পকে রাজি করানোর প্রয়োজন ভারতের
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই মেক্সিকো এবং কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন। চীনের উপরও ১০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভারতের উপর এখনও কোন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়নি, কিন্তু ট্রাম্প ভারতকে ‘শুল্ক রাজা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, আমেরিকান পণ্যের উপর ভারতে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়, যখন আমেরিকান বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য বেশি উন্মুক্ত।
কি ভারত শুল্ক যুদ্ধ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে?
প্রধানমন্ত্রী মোদীর চেষ্টা থাকবে যাতে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। তাই তিনি ট্রাম্পকে রাজি করানোর পুরোপুরি চেষ্টা করবেন। তবে, ট্রাম্প সহজে রাজি হওয়ার মধ্যে নন। সম্ভবত ভারতকেও আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্কে কিছু ছাড় দিতে হতে পারে।
মোদী-ট্রাম্প বৈঠক: কি ফলাফল বেরিয়ে আসবে?
দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে এই বিষয়গুলো কতটা কার্যকরভাবে উঠে আসে এবং ট্রাম্পের আচরণ কেমন থাকে, তা দেখার বিষয়। যদি ভারত এই বিষয়গুলোতে কোনো ছাড় পেতে পারে, তাহলে এটি মোদী সরকারের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হবে। অন্যদিকে, যদি ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে ভারতকে অন্য বিকল্পের কথা ভাবতে হতে পারে।