মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে অর্থ প্রেরণকারীদের জন্য সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সেখানকার সংসদে একটি নতুন বিল পাশ হয়েছে, যেখানে ভারতের মতো দেশগুলিতে অর্থ প্রেরণের উপর ৩.৫% কর আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। এর ফলে যারা সেখান থেকে তাদের পরিবারের লোকদের অর্থ প্রেরণ করেন তাদের উপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।
ব্যবসা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ ভারতীয় প্রবাসীর জন্য উদ্বেগের খবর। মার্কিন সংসদে একটি নতুন বিল উপস্থাপন করা হয়েছে, যার অধীনে ভারতের মতো দেশগুলিতে অর্থ প্রেরণ (রেমিট্যান্স) এর উপর ৩.৫% কর আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। যদি এটি আইন হয়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সেইসব পরিবারের উপর যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।
নতুন প্রস্তাবটি কী?
এই বিলটিকে "ওয়ান বিগ, ব্য়ুটিফুল বিল অ্যাক্ট" বলা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাইরে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রেরিত অর্থের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে। আগে এর হার ৫% রাখার কথা ছিল, কিন্তু সংশোধনের পর এটি ৩.৫% এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তবে, এটি বর্তমান কর কাঠামোর অতিরিক্ত হবে।
এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য মার্কিন ফেডারেল বাজেটে কিছুটা স্বস্তি আনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করা বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো রেমিট্যান্স-নির্ভর দেশগুলির জন্য এটি একটা ধাক্কা হতে পারে।
ছোট ট্রান্সফারে বড় প্রভাব
ধরা যাক, কোনও প্রবাসী ভারতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার পরিবারকে ৮৩,০০০ টাকা (প্রায় ১,০০০ ডলার) পাঠায়। যদি এই প্রস্তাব আইন হয়, তবে তাকে প্রায় ২,৯০০ টাকা অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এই অর্থ প্রতি মাসে প্রেরিত অর্থের উপর বৃদ্ধি পাবে এবং বার্ষিক বড় অঙ্কে পরিণত হতে পারে। এই প্রস্তাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত H-1B, L-1, F-1 ভিসাধারী এবং গ্রিন কার্ডধারীদের উপর প্রভাব ফেলবে, যারা প্রায়শই তাদের পরিবারের আর্থিক সাহায্যের জন্য ভারতে অর্থ প্রেরণ করেন।
এদের মধ্যে সেইসব ছাত্ররাও রয়েছেন, যারা পড়াশোনার সাথে সাথে পার্ট টাইম কাজ করে তাদের বাবা-মাকে আর্থিক সাহায্য পাঠান। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত প্রবাসী পরিবার এই পরিবর্তনের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।
ভারতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স গ্রহীতা দেশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এটি ভারতের মোট বিদেশী রেমিট্যান্সের প্রায় ২৮%। এই অবস্থায় এই নতুন প্রস্তাব ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
গ্রামীণ এবং ছোট শহরগুলিতে লক্ষ লক্ষ পরিবার রয়েছে, যারা প্রবাসী ভারতীয়দের পাঠানো অর্থের উপর তাদের সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় চালান। কর বৃদ্ধির ফলে এই প্রয়োজনীয় ব্যয়ের উপর সরাসরি আঘাত পড়বে।
প্রবাসী ভারতীয়দের বাড়ন্ত উদ্বেগ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রস্তাব নিয়ে স্পষ্ট অসন্তোষ এবং উদ্বেগের পরিবেশ বিরাজ করছে। তাদের মনে হয় এই প্রস্তাব পরোক্ষভাবে প্রবাসী সম্প্রদায়কে আর্থিকভাবে শাস্তি দেয়, যখন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিছু ভারতীয় সংগঠন এই প্রস্তাবকে "অনুচিত এবং বৈষম্যমূলক" বলে আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ শুরু করেছে। তাদের যুক্তি হলো, এই কর কেবলমাত্র উন্নয়নশীল দেশের প্রবাসীদেরকে লক্ষ্য করে, যা জাতিগত এবং সামাজিকভাবেও উদ্বেগের বিষয়।
প্রবাসী ভারতীয়রা কী করবেন?
যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রবাসী ভারতীয়দের তাদের অর্থ প্রেরণের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন:
- ছোট ট্রান্স্যাকশন এড়িয়ে চলুন: বারবার কম পরিমাণে অর্থ প্রেরণের পরিবর্তে একবারে বেশি পরিমাণে অর্থ ট্রান্সফার করুন, যাতে করের বোঝা কম হয়।
- ডিজিটাল বিকল্প গ্রহণ করুন: ডিজিটাল ওয়ালেট, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং P2P ট্রান্সফার সিস্টেমের দিকে নজর রাখুন। কিছু বিকল্প কর এড়ানোর পথ দেখাতে পারে।
- পরিকল্পনা এবং পরামর্শ নিন: আর্থিক পরামর্শদাতাদের সাথে আলোচনা করুন যে কোন মাধ্যমে ট্রান্সফার সস্তা এবং নিরাপদ হবে।