ভারতের কৃষিতে ঐতিহাসিক সাফল্য: উৎপাদন, আয় ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত

ভারতের কৃষিতে ঐতিহাসিক সাফল্য: উৎপাদন, আয় ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত
সর্বশেষ আপডেট: 07-06-2025

ভারতে কৃষি এখন আর কেবলমাত্র জীবিকার উপায় নয়, বরং সমৃদ্ধির এক অপূর্ব মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ২০২৩-১৪ থেকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে কৃষিখাতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে বলে উঠে এসেছে।

ব্যবসা: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা গত ১১ বছরে এমন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ অর্জন করেছে যা দেশকে বিশ্বব্যাপী এক শক্তিশালী কৃষি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত কৌশলগত পরিবর্তন, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) সুদৃঢ়করণ এবং কৃষক ক্রেডিট কার্ড (KCC) যোনা প্রভৃতি ভারতীয় কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

সরকার সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০২৩-১৪ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত কৃষিখাতে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে যার প্রভাব কেবলমাত্র উৎপাদনেই নয়, কৃষকদের আয় এবং তাদের সমৃদ্ধিতেও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

উৎপাদনে রেকর্ড বৃদ্ধি

২০১৪-১৫ সালে ভারতের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ২৬.৫০ কোটি টন, যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে প্রায় ৩৪.৭৪ কোটি টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি প্রায় ৩১% বৃদ্ধি দর্শাচ্ছে, যা কৃষির নতুন পদ্ধতি, উন্নত বীজ, সেচ এবং ফসল ব্যবস্থাপনায় উন্নতির ফল। এই বৃদ্ধি ভারতকে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারের কৃষি বিভাগের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ‘বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত’ দর্শনের ফলে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এর অর্থ হল কৃষকরা এখন কেবল উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি দিয়েই সজ্জিত নয়, তাদের উৎপাদন বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও তৈরি করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দে পাঁচগুণ বৃদ্ধি

কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিভাগের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩-১৪ সালে এটি ছিল ২৭,৬৬৩ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে ১,৩৭,৬৬৪.৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি পাঁচগুণেরও বেশি বৃদ্ধি, যা দেখায় সরকার এই খাতকে শক্তিশালী করার জন্য ক্রমাগত সংস্থান সরবরাহ করেছে। এই বাজেট বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব বিভিন্ন কৃষি প্রকল্প, ঋণ সুবিধা, বীমা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক সেবায় পড়েছে।

MSP বৃদ্ধি কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তুলেছে

সরকার ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) -তেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩-১৪ সালে গমের MSP ছিল ১,৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, যা এখন ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে ২,৪২৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল হয়েছে। একইভাবে, ধানের MSP ১,৩১০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ২,৩৬৯ টাকা প্রতি কুইন্টালে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য আয়ের স্থিতিশীল উৎস সরবরাহ করে এবং বাজারে তাদের ফসলের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করে।

PM-কিসান যোজনার সুবিধা পেয়েছে কোটি কোটি কৃষক

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে চালু হওয়া প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা (PM-Kisan) ১১ কোটিরও বেশি কৃষকদের প্রায় ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিতরণ করেছে। এই যোজনার ছোট এবং সীমান্ত কৃষকদের অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হয়েছে এবং তাদের কৃষিকর্ম সুचारুভাবে চালু রাখতে পেরেছে।

KCC যোজনার মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক সহায়তা

কৃষক ক্রেডিট কার্ড যোজনা (KCC) -র আওতায় এ পর্যন্ত ৭.৭১ কোটি কৃষককে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই সুবিধা কৃষকদের কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সহজলভ্য করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এর ফলে কৃষকরা আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম, বীজ, সার এবং কীটনাশক ক্রয় করে উন্নত উৎপাদন করতে পারছেন।

ফসল ক্রয়ের উন্নতি এবং দাল, তিলहन-এর চাহিদা

খরিফ ফসল ক্রয় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৪-১৪ অর্থবছরে খরিফ ক্রয় ছিল ৪৬.৭৯ কোটি টন, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে ৭৮.৭১ কোটি টনে পৌঁছেছে। এছাড়াও, MSP-তে দাল ক্রয়ও বেড়েছে - ২০০৯-১৪ সালে ১.৫২ লক্ষ টন থেকে ২০২০-২৫ সালে বেড়ে ৮৩ লক্ষ টন হয়েছে। তিলहन ক্রয়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিবর্তন কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং পুষ্টি নিরাপত্তা শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।

কৃষিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বৈচিত্র্য

সরকার সেচ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, কৃষি ঋণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ করা এবং কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর দিয়েছে। এছাড়াও, বাজরা যোনা পারম্পারিক এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক কৃষিকেও উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

ডেয়ারি, মৎস্য চাষ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রেও সম্প্রসারণ ঘটেছে, যার ফলে কৃষকদের আয়ের অতিরিক্ত উৎস তৈরি হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে এবং কৃষি নির্ভরতা কমতে শুরু করেছে।

ভারতের কৃষিখাত: বিশ্ব নেতৃত্বের দিকে

সরকারের ধারণা, ভারত ‘অমৃত কাল’ -এ প্রবেশ করেছে এবং এর শক্তিশালী কৃষকরা দেশকে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য নেতৃত্বের দিকে নিয়ে যাবে। গত ১১ বছরে এই উন্নয়ন থেকে স্পষ্ট, ভারতের কৃষি এখন কেবলমাত্র দেশীয় চাহিদা পূরণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রপ্তানির ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

Leave a comment