‘স্টোলেন’: একটি বাস্তববাদী ক্রাইম-থ্রিলার যা নাড়া দেবে

🎧 Listen in Audio
0:00

‘স্টোলেন’ একটি বাস্তববাদী ক্রাইম-থ্রিলার যা মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়। পরিচালক করণ তেজপালের এই প্রথম ছবি, কিন্তু এর থিম, সংবেদনশীলতা এবং চলচ্চিত্রের সূক্ষ্মতা তার ভবিষ্যৎ সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়।

  • ছবির পর্যালোচনা: স্টোলেন
  • অভিনেতা: অভিষেক ব্যানার্জী, শুভম বর্ধন, মিয়া মেলজার, হরিশ খন্না
  • পরিচালক: করণ তেজপাল
  • শ্রেণী: হিন্দি, থ্রিলার, নাটক
  • দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট
  • সমালোচকদের রেটিং: ৩.৫/৫

মনোরঞ্জন: OTT প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্টোলেন’ ছবিটি একটি বাস্তববাদী ক্রাইম-থ্রিলার, যা মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়। পরিচালক করণ তেজপালের এই প্রথম ছবি, কিন্তু এর থিম, সংবেদনশীলতা এবং চলচ্চিত্রের সূক্ষ্মতা প্রমাণ করে যে তিনি আগামী দিনে একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আবির্ভাব হতে পারেন।

এই ছবিটি শুধুমাত্র একটি শিশু অপহরণের গল্প নয়, বরং এটি সামাজিক বৈষম্য, গুজবের প্রভাব, ব্যবস্থার উদাসীনতা এবং একজন মায়ের অবিচল সংগ্রামের প্রতিধ্বনি।

কাহিনী যা নাড়া দেয়

ছবিটি রাজস্থানের একটি ছোট রেলওয়ে স্টেশনে শুরু হয়, যেখানে একজন দরিদ্র নারী, ঝুম্পা (মিয়া মেলজার) তার নিরীহ শিশুকে নিয়ে একটি বেঞ্চে ঘুমিয়ে থাকে। অন্যদিকে, একজন উদ্বিগ্ন ও আত্মকেন্দ্রিক যুবক, গৌতম (অভিষেক ব্যানার্জী) তার শান্ত ও সহানুভূতিশীল ভাই রমণ (শুভম বর্ধন) কে স্টেশনে নিতে আসে।

একজন অচেনা নারী ঝুম্পার পাঁচ মাসের শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অভিযোগ ও সন্দেহের ধারাবাহিকতা শুরু হয়, এবং শীঘ্রই রমণ ও গৌতম এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের তদন্তের ধীরগতি ও অনুভূতিহীনতা দেখে রমণ ঝুম্পাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে গৌতম প্রথমে এড়িয়ে যেতে চায়। কাহিনীতে ব্যাপক মোড় আসে যখন এই তিনজনের ভিডিও ‘শিশু চোর’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এবং জনতা তাদের পিছনে লেগে যায়।

থ্রিল ও ইমোশনের গভীর মিশ্রণ

ছবির প্রথম দৃশ্যই দর্শকদের একটা অস্থিরতা নিয়ে বেঁধে দেয় এবং যত ঘটনা ঘটতে থাকে, কাহিনী থ্রিল ও ইমোশনের মধ্যে গভীরভাবে দোল খায়। একজন মায়ের অসহায়তা, দুই ভাইয়ের ভিন্ন চিন্তাভাবনা, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং সমাজের হিংস্র মানসিকতা—এগুলি সবই অত্যন্ত প্রভাবশালীভাবে পর্দায় ফুটে ওঠে।

করণ তেজপাল কাহিনীটিকে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও স্তরবদ্ধভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি দর্শকদের ভাবতে বাধ্য করেছেন যে আজও ভারতের অনেক অঞ্চলে দরিদ্রের কণ্ঠ কেন এত দুর্বল? কেন আমাদের ব্যবস্থা জাতি, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ন্যায়ের মাপকাঠি নির্ধারণ করে?

অভিনয়: ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি

অভিষেক ব্যানার্জী এই ছবির সবচেয়ে জটিল চরিত্র ‘গৌতম’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি প্রথমে একজন নিষ্ঠুর, কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ব্যক্তি মনে হন, কিন্তু কাহিনী এগোতে এগোতে তার রূপান্তর দেখার মতো। শুভম বর্ধন তার চরিত্রে সরলতা ও বিচক্ষণতার অসাধারণ মিশ্রণ দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, মিয়া মেলজার তার অভিনয় দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন। একজন মায়ের ভূমিকায় তার অভিনয় কাঁচা, বেদনাদায়ক কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি পুরো ছবির প্রাণ হয়ে উঠেছেন।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নের কথা বললে, ইশান ঘোষ এবং সচিন এস পিল্লাই ক্যামেরার মাধ্যমে অন্ধকার, নীরবতা এবং ভয়কে অত্যন্ত জীবন্ত করে তুলেছেন। স্টেশনের নির্জনতা, জনশূন্য পথ এবং বনের দৃশ্য ছবিতে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে, সুষ্মিত নাথের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর কাহিনীর সাথে সম্পূর্ণ মিল রেখে চলে, যা দৃশ্যগুলিকে আরও প্রভাবশালী করে তোলে।

পরিচালক করণ তেজপালের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো তিনি অতিরঞ্জিত না করে ছবিটিকে বাস্তবতার কাছাকাছি রেখেছেন। তিনি সমাজের অনেক কঠোর সত্যকে উপদেশাত্মক না করে পর্দায় তুলে ধরেছেন।

বার্তা ও চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধকারী কন্টেন্ট

‘স্টোলেন’ শুধুমাত্র একটি ক্রাইম-থ্রিলার নয়, এটি একটি সামাজিক সমালোচনাও। এই ছবিটি দেখায় কিভাবে আজকের ডিজিটাল যুগে গুজব সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে এবং কিভাবে একটা বিশেষ শ্রেণীর ব্যক্তি মিথ্যা অভিযোগের সহজ শিকার হয়ে পড়ে। ছবিটি শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নটি রেখে যায়: ন্যায় কি সবার জন্য একই রকম?

দেখবেন না দেখবেন?

যদি আপনি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত, আবেগপ্রবণ এবং সামাজিক উদ্বেগ নিয়ে তৈরি ছবি পছন্দ করেন, তাহলে ‘স্টোলেন’ আপনার জন্য একটি পারফেক্ট উইকেন্ড ওয়াচ হতে পারে। ৯০ মিনিটের এই ছবিটি কোনো বিভ্রান্তি ছাড়াই, কোনো অপ্রয়োজনীয় নাটক ছাড়াই আপনাকে চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধ করবে।

Leave a comment