মুম্বাই লোকালে যৌন হয়রানির শিকার মালাবিকা মোহনন

🎧 Listen in Audio
0:00

চলচ্চিত্র জগতের জাঁকজমকের পিছনে অনেক সময় এমন কিছু গল্প লুকিয়ে থাকে যা আমাদের চিন্তাভাবনায় ডুবিয়ে দেয়। সম্প্রতি ‘দ্য রাজা সাহেব’ এর মতো ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসা একজন অভিনেত্রী মুম্বাইতে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বক্তব্য দিয়েছেন।

মনোরঞ্জন ডেস্ক: স্বপ্নের নগরী হিসেবে পরিচিত মুম্বাই একদিকে যেমন তার উন্মুক্ততা, সুযোগ ও জৌলুসের জন্য পরিচিত, অন্যদিকে নারী নিরাপত্তা নিয়ে এই শহর বারবার সমালোচনার মুখে পড়ে। সম্প্রতি অভিনেত্রী মালাবিকা মোহনন এক অতীত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নারী নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছেন।

মালাবিকা, যিনি এখন হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী, তার কলেজ জীবনের এক অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যা তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল।

মুম্বাই লোকালে ঘটনাচক্রের উন্মোচন

মালাবিকা মোহনন হটারফ্লাইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার কলেজ জীবনের এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানিয়েছেন কিভাবে একটা স্বাভাবিক মুম্বাই লোকাল ট্রেনের যাত্রা তার কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেছেন, সে সময় আমার গাড়ি ছিল না, আমি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কলেজ যেতাম। সেদিন আমি ও আমার দুই বন্ধু প্রথম শ্রেণীর মহিলাদের কোচে যাত্রা করছিলাম।

রাত প্রায় ৯:৩০ টা। আমরা কথা বলছিলাম, এমন সময় এক অচেনা লোক ট্রেনের জানালার বাইরে থেকে ঝাঁকিয়ে বলল – ‘একটা চুমু দেবে?’ এ কথা শুনে তিনজন মেয়েই অবাক হয়ে গেছে। সে ব্যক্তি শুধু অশালীন আচরণই করেনি, বরং পাবলিক ট্রান্সপোর্টকেও অনিরাপদ করে তুলেছে।

মুম্বাই নারীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়

তার অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও বলতে গিয়ে মালাবিকা বলেছেন, মানুষ বলে মুম্বাই নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলির মধ্যে একটি, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা আলাদা। আমার সবসময় ভয় লাগতো যে কেউ না কেউ অশালীন মন্তব্য করবে, छেড়াছড়ি করার চেষ্টা করবে অথবা অন্য কোনও অসভ্য আচরণ করবে। যখন আপনার নিজের গাড়ি থাকে না, তখন আপনি অনিরাপদ থাকেন – এটাই কঠিন সত্য।

বর্তমানে অভিনেত্রীর নিজস্ব গাড়ি ও চালক আছে, কিন্তু তিনি মনে করেন যে বেশিরভাগ নারীর কাছে এমন সুযোগ নেই এবং তারা প্রতিদিন এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান।

কেন বারবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে?

এটা প্রথমবার নয় যখন কোনো অভিনেত্রী মুম্বাই লোকাল অথবা পাবলিক স্থানে অশোভন আচরণের অভিযোগ করেছেন। এর আগেও অনেক চলচ্চিত্র তারকা, যেমন স্বরা ভাস্কর, রাধিকা আপ্তে এবং সানিয়া মালহোত্রাও এ ধরণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। এটা স্পষ্ট করে যে, একজন নারী সাধারণ নাগরিক হোন অথবা পরিচিত হস্তি, যৌন হয়রানি বা অশালীন মন্তব্যের মতো ঘটনা থেকে কেউ বাদ পড়েন না।

নারীদের নিরাপত্তার জন্য সরকার ও রেলওয়ে অনেক পরিকল্পনা শুরু করেছে, যেমন সিসিটিভি ক্যামেরা, মহিলা কোচ এবং রেলওয়ে পুলিশ বাহিনী (আরপিএফ)-এর মোতায়েন। তবুও এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকা দেখিয়েছে যে এই পদক্ষেপগুলির মাঠ পর্যায়ে প্রভাব সীমিত। এ ধরণের ঘটনা রোধ করার জন্য প্রয়োজন:

  • নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া
  • লোকেদের মধ্যে যৌন শিষ্টাচারের শিক্ষা দেওয়া
  • আইনি ব্যবস্থা দ্রুত ও কার্যকর করা
  • জনসাধারণের স্থানে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো

মালাবিকা মোহনন এই ঘটনা শেয়ার করে সামাজিক দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন। প্রয়োজন এই যে, যখন পরিচিত হস্তিরা এ ধরণের বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তখন সমাজও তা গুরুত্বের সাথে শুনুক। তার এই পদক্ষেপ শুধু অন্যান্য নারীদের সচেতন করবে না, বরং তাদের নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার ও আওয়াজ তোলার জন্যও উৎসাহিত করবে।

Leave a comment