হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত খলনায়ক প্রয়াত অমরেশ পুরী আজ আর কোনো পরিচয়ের অপেক্ষা রাখেন না। গব্বরের পর যদি কোনো খলনায়ক থেকে থাকেন, তিনি হলেন মোগাম্বো। অমরেশ পুরীর মধ্যে এমন এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল যে, তিনি যে চরিত্রেই অভিনয় করতেন, সেটি সার্থক হয়ে উঠত। যদি আপনি তাঁকে মিস্টার ইন্ডিয়া-তে মোগাম্বোর ভূমিকায় দেখে ঘৃণা করে থাকেন, তবে তিনিই আবার "দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে"-তে সিমরনের বাবা হয়ে সকলের মন জয় করেছিলেন। অমরেশ পুরী ছিলেন একজন আদর্শ অভিনেতা যিনি প্রতিটি চরিত্রে মানানসই ছিলেন। একজন বাবা, বন্ধু এবং ভিলেন— তিনটি চরিত্রেই তাঁর দক্ষতা তাঁকে একজন মহান শিল্পী করে তুলেছিল। হিন্দি সিনেমা সম্ভবত এই মহান অভিনেতার অনুপস্থিতিতে অসম্পূর্ণই থেকে যেত।
অমরেশ পুরীর জীবন
অমরেশ পুরী ১৯৩২ সালের ২২শে জুন পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল লালা নিহাল সিং এবং মায়ের নাম বেদ কৌর। তাঁদের চার ভাই-বোন ছিল; চমন পুরী, মদন পুরী এবং বড় বোন চন্দ্রকান্তা এবং তাঁর ছোট ভাই হরিশ পুরী। অমরেশ পুরী ব্যায়ামের খুব অনুরাগী ছিলেন। অমরেশ পুরী ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি ভগবান শিবের ভক্ত ছিলেন।
অমরেশ পুরীর শিক্ষা
অমরেশ পুরী তাঁর শৈশবের শিক্ষা পাঞ্জাবে গ্রহণ করেন। পরবর্তী পড়াশোনার জন্য অমরেশ পুরী সিমলায় যান। তিনি সিমলার বিএম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে সর্বপ্রথম অভিনয়ের জগতে পা রাখেন। অমরেশ পুরী প্রথমে থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পরে তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। অমরেশ পুরীর থিয়েটারের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। এমনকি ইন্দিরা গান্ধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো মহান ব্যক্তিত্বরাও তাঁর নাটক দেখতেন। পদ্মবিভূষণ নাট্যকার ইব্রাহিম আলকাজীর সঙ্গে ১৯৬১ সালে ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং তিনি পরবর্তীকালে ভারতীয় থিয়েটারের একজন বিখ্যাত শিল্পী হয়ে ওঠেন।
অমরেশ পুরীর স্ত্রী
অমরেশ পুরীর স্ত্রীর নাম উর্মিলা দিভেকর। চলচ্চিত্রে আসার আগে অমরেশ পুরী কর্মচারী রাজ্য বীমা নিগম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকে কাজ করতেন। সেখানেই তাঁদের দুজনের প্রথম দেখা হয় এবং এই সাক্ষাৎ প্রেমে রূপ নেয়। প্রথমে দুজনের পরিবারই তাঁদের বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু পরে পরিবার তাঁদের মেনে নেয়। অবশেষে ১৯৫৭ সালের ৫ই জানুয়ারি সবার সম্মতিতে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অমরেশ পুরীর এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। অমরেশ পুরীর ছেলের নাম রাজীব পুরী এবং মেয়ের নাম নম্রতা পুরী।
অমরেশ পুরীর চলচ্চিত্র জীবন
অমরেশ পুরী ১৯৭১ সালে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ছিল প্রেম পূজারী। এরপর অমরেশ পুরী আরও কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেন, কিন্তু তিনি তেমন সাফল্য পাননি। যদিও অমরেশ পুরী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছিলেন এবং ধীরে ধীরে খলনায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেন। ১৯৮০-এর দশকে অমরেশ পুরী চলচ্চিত্র জগতে এক বড় নাম হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে ১৯৮৭ সালে শেখর কাপুর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘মি. ইন্ডিয়া’ অমরেশ পুরীর জীবনে নতুন দিক নিয়ে আসে। এই চলচ্চিত্রে অমরেশ পুরী মোগাম্বোর ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘শোলে’র গব্বরের পর যদি কোনো খলনায়ক এত খ্যাতি পেয়ে থাকেন, তবে তিনি হলেন মোগাম্বো। চলচ্চিত্রে তাঁর সংলাপ ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ সেই সময় সকলের মুখে মুখে ফিরত।
অমরেশ পুরী এখানেই থেমে থাকেননি, তিনি ‘নিশান্ত’, ‘গান্ধী’, ‘কুলি’, ‘নাগিনা’, ‘রাম লখন’, ‘ত্রিদেব’, ‘ফুল অউর কাঁটে’, ‘বিশ্বাত্মা’, ‘দামিনী’, ‘করণ অর্জুন’, ‘কয়লা’র মতো একের পর এক হিট চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। অমরেশ পুরী শুধু হিন্দি চলচ্চিত্রেই নয়, কন্নড়, পাঞ্জাবি, মালায়ালাম, তেলেগু এবং তামিল চলচ্চিত্র ও হলিউড সিনেমাতেও কাজ করেছেন। অমরেশ পুরী তাঁর জীবনে ৪০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
অমরেশ পুরীর প্রয়াণ
১২ই জানুয়ারি, ২০০৫ সালে ৭২ বছর বয়সে ব্রেন টিউমারের কারণে অমরেশ পুরীর মৃত্যু হয়। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে বলিউড জগৎ-সহ সারা দেশ শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। আজ অমরেশ পুরী এই পৃথিবীতে নেই। তবে তাঁর স্মৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আজও আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছে।