নবীন নিশ্চল: তারকাখ্যাতি থেকে জেলের শাখা পর্যন্ত

🎧 Listen in Audio
0:00

বলিউডের জৌলুসের পিছনে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলি প্রায়শই বেদনা ও সংগ্রামে ভরা। এমনই একজনের নাম নবীন নিশ্চল, যার জীবন তারকাখ্যাতি থেকে শুরু হয়ে জেলের শাখা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আজ তার পুণ্যতিথিতে আমরা সেই অভিনেতার জীবনের অজানা দিকগুলি জানব, যিনি একসময় সুপারস্টারের মর্যাদা পেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ে ধ্বংস হয়ে গেছিলেন।

মি. ইন্ডিয়া থেকে তারকাখ্যাতি পর্যন্ত যাত্রা

১৮ই মার্চ ১৯৪৬ সালে লাহোরে জন্ম নেওয়া নবীন নিশ্চলের ভাগ্য তাকে মডেলিংয়ের জগৎ থেকে বলিউড পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। মি. ইন্ডিয়ার প্রাথমিক পর্বে জয়লাভ করার পর তিনি বিখ্যাত পরিচালক মোহন সেহগলের পরামর্শে পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন এবং স্বর্ণপদক জিতে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। রেখার সাথে 'সাওয়ান ভাদো' ছবি দিয়ে অভিষেক হয় নবীনের। রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। তার চমৎকার চেহারা এবং কেরামতি হাসি দর্শকদের পাগল করে তুলেছিল।

সফলতার অহংকার এবং ভুল সিদ্ধান্ত

'বুড়্ডা মিল গয়া', 'পরওয়ানা', 'নাদান' ইত্যাদি ছবি নবীনকে সুপারস্টার করে তুলেছিল। কিন্তু খ্যাতির নেশা এবং অহংকার তাকে কোথাও থাকতে দেয়নি। তিনি গুলজারের 'মেরে আপনে' এবং মনোজ কুমারের 'রোটি কাপড়া অর মকান' ইত্যাদি ছবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ সেগুলিতে অমিতাভ বচ্চনও ছিলেন, যাকে তিনি ছোটো শিল্পী মনে করতেন। কিন্তু সময় এমনভাবে ঘুরে দাঁড়ালো যে অমিতাভ 'সুপারস্টার অফ দ্য মিলেনিয়াম' হয়ে উঠলেন এবং নবীনের ক্যারিয়ার নেমে আসতে লাগলো।

প্রেম, প্রতারণা এবং ভাঙা সম্পর্ক

নবীনের ব্যক্তিগত জীবনও কম বিতর্কিত ছিল না। প্রথম স্ত্রী নীলু কাপুরকে ছেড়ে তিনি পদ্মিনী কাপিলার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান, কিন্তু পদ্মিনী তাকে ছেড়ে প্রযোজক প্রকাশ মেহরার কাছে চলে যান। দ্বিতীয় বিবাহ হয় গীতাঞ্জলীর সাথে, কিন্তু বিতর্ক তাকে ছেড়ে যায়নি। পারিবারিক কলহ এবং অভিযোগের ফলে ভাই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গীতাঞ্জলি আত্মহত্যা করেন এবং তার সুসাইড নোটে নবীন এবং তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। এই ঘটনায় নবীনকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

ছোট পর্দার আশ্রয় এবং সংগ্রামের সময়

চলচ্চিত্রে কাজ পাওয়া বন্ধ হলে নবীন ছোট পর্দার দিকে ধাবিত হন। 'দেখ ভাই দেখ', 'আহাট', 'ফরমান' ইত্যাদি ধারাবাহিকের মাধ্যমে তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার বিতর্কিত ইমেজ তাকে বেশি সুযোগ দেয়নি।

শেষ যাত্রা - চলন্ত গাড়িতে মৃত্যু

১৯ই মার্চ ২০১১ সালে হোলির দিন তিনি বন্ধুদের সাথে পুণে যাচ্ছিলেন। যাত্রাকালে হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তিনি সেখানেই মারা যান। হোলির সেই রং তার জন্য জীবনের শেষ রং হয়ে দাঁড়ায়।

এক অসম্পূর্ণ গল্প

নবীন নিশ্চলের জীবন একজন এমন তারকার গল্প যিনি তারকাখ্যাতির স্বাদ পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের ভুল এবং বিতর্কের কারণে সবকিছু হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার নাম আজও এক সংগ্রামী এবং বিতর্কিত জীবনের উদাহরণ হিসেবে স্মরণ করা হয়।

Leave a comment