ফেডারাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর সাবেক পরিচালক জেমস কমি-র উপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথিত হত্যাযজ্ঞের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টী নোয়েম করেছেন।
ওয়াশিংটন: আমেরিকার রাজনীতি আবারও বিতর্কের ছায়ায় আচ্ছন্ন। এবারের ঘটনা জড়িত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে, যাঁর বিরুদ্ধে কথিতভাবে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এফবিআই-এর সাবেক পরিচালক জেমস কমির উপর। এই বিতর্কের সূত্রপাত একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে, যেখানে সমুদ্র সৈকতে কিছু শামুকের উপর '৮৬ ৪৭' লেখা দেখা গেছে। এই সংখ্যাগুলির অর্থ কী এবং এটি কি সত্যিই একটি হিংস্র ইঙ্গিত ছিল, এ নিয়ে আমেরিকায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
কী ঘটেছে সম্পূর্ণ বিষয়টি?
সম্প্রতি জেমস কমি ইনস্টাগ্রামে সমুদ্র সৈকতের একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন, যেখানে কিছু শামুকের উপর "৮৬ ৪৭" লেখা ছিল। এই ছবিটি পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনেকেই এটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একটি গোপন হুমকি হিসেবে দেখেছেন। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টী নোয়েম এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দাবি করেছেন যে '৮৬' শব্দটিকে আমেরিকান স্ল্যাং-এ 'হত্যা' বা 'শেষ করে দেওয়া' বোঝায়, যখন '৪৭' ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে।
ক্রিস্টী নোয়েম এক্স (পূর্বে টুইটার) -এ লিখেছেন, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কমি পুবলিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হত্যার দাবি করেছেন। এটি একটি গুরুতর বিষয় এবং আমরা এই হুমকিটিকে উপেক্ষা করতে পারি না। ডিএইচএস এবং সিক্রেট সার্ভিস বিষয়টির গভীরতার সাথে তদন্ত করছে।
কমির কী ব্যাখ্যা?
বিতর্কের পরে বাড়তে থাকা চাপের মুখে জেমস কমি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টটি সরিয়ে ফেলেছেন এবং এই পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি সমুদ্র সৈকতে হাঁটছিলাম এবং আমার কিছু শামুকের উপর এই সংখ্যাগুলি দেখা গেছে। আমার কাছে এটি একটি সাধারণ এবং আকর্ষণীয় ছবি মনে হয়েছে, তাই আমি এটি শেয়ার করেছি। আমার একেবারেই ধারণা ছিল না যে এই সংখ্যাগুলি কোনও রাজনৈতিক বার্তা বা হিংসার ইঙ্গিত হিসাবে গ্রহণ করা হবে।
কমি আরও লিখেছেন, আমি যে কোনও ধরণের হিংসার কট্টর বিরোধী। আমি কখনোই এ ধরণের চিন্তাধারার সমর্থন করতে পারি না। যদি কারও এতে কষ্ট পেয়ে থাকে, তাহলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই কারণেই আমি সেই পোস্টটি অবিলম্বে সরিয়ে ফেলেছি।
ট্রাম্পের উপর আগেও হামলা হয়েছে
এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর ইতিমধ্যেই বহুবার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে পেনসিলভেনিয়ার একটি সমাবেশের সময় ট্রাম্পের উপর গুলি চালানো হয়েছিল, যেখানে গুলি তার কান ছুঁয়ে গিয়েছিল। এই হামলায় তিনি ধাক্কা খেয়েছিলেন, কিন্তু এটি দেখায় যে তার নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান।
জেমস কমির পোস্ট নিয়ে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক হয়ে উঠেছে। ফেডারাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইউনাইটেড স্টেটস সিক্রেট সার্ভিস (ইউএসএসএস) উভয়ই ঘটনার তদন্ত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও জনসাধারণের ব্যক্তি দ্বারা সন্দেহজনক প্রতীক বা ইঙ্গিত ব্যবহার করা গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়, বিশেষ করে যখন বিষয়টি রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে জড়িত।
এই বিষয়টি আমেরিকান সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। একটি শ্রেণী এটিকে জেমস কমির নিরপরাধ ভুল বলে মনে করছে, অন্যদিকে অন্যরা এটিকে একজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ইচ্ছাকৃত ইঙ্গিত বলে মনে করছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিতর্ক জোরেশোরে চলছে। কেউ কেউ "৮৬" শব্দের আসল অর্থ এবং তার ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।