আজ, ১২ই ডিসেম্বর সাহেবজাদা ফতেহ সিং জীর জয়ন্তী পালিত হয়, যিনি গুরু গোবিন্দ সিং জীর ছোট পুত্র ছিলেন। সাহেবজাদা ফতেহ সিং খুব কম বয়সেই শিখ ধর্মের রক্ষা করার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর শাহাদাত শিখ ইতিহাসের সবচেয়ে পবিত্র এবং প্রেরণাদায়ক মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি হিসাবে মানা হয়। তাঁর জয়ন্তীতে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে সম্মান জানাই এবং তাঁর অদ্বিতীয় সাহস ও আত্মত্যাগ কে স্মরণ করি।
জীবন পরিচিতি
আজ, ১২ই ডিসেম্বর ১৬৯৯ সালে এক মহান আত্মার জন্ম হয়েছিল, যাঁর নাম শিখ ধর্মের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। সাহেবজাদা বাবা ফতেহ সিং জী, যিনি গুরু গোবিন্দ সিং জীর চার পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন, তিনি তাঁর ছোট্ট বয়সে ধর্ম ও সত্যের জন্য এমন এক বলিদান দিয়েছিলেন, যা আজও প্রতিটি শিখ এবং প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জীবিত আছে। তাঁর শাহাদাতের সময় বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর, কিন্তু তাঁর সাহস ও আত্মত্যাগ তাঁকে শিখ ধর্মের সবচেয়ে মহান শহীদদের মধ্যে একজন করে তুলেছে।
সাহেবজাদা ফতেহ সিং -এর জন্ম এবং প্রাথমিক জীবন
সাহেবজাদা বাবা ফতেহ সিং-এর জন্ম ১২ই ডিসেম্বর ১৬৯৯ সালে আনন্দপুর সাহিবে হয়েছিল। তিনি গুরু গোবিন্দ সিং জী এবং মাতা জীতোর ছোট পুত্র ছিলেন। তাঁর জীবনের শুরু থেকেই ছিল কষ্টের, কারণ সেই সময় ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের অত্যাচার চরমে ছিল। ১৬৯৯ সালেই গুরু গোবিন্দ সিং জী খালসা পন্থের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, এবং এই সময়ে শিখদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাই সাহেবজাদা জোरावर সিং এই কঠিন সময়ে তাঁদের পিতার নির্দেশে কঠোর সংগ্রাম করেছিলেন এবং ধর্ম রক্ষা করেছিলেন।
বাবা ফতেহ সিং -এর বলিদান এবং তাঁর সংগ্রাম
যখন শিখদের আনন্দপুর সাহেব থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হল, তখন সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাই সাহেবজাদা জোरावर সিং তাঁদের ঠাকুমা মাতা গুজরি-এর সাথে যাত্রা শুরু করলেন। এই সময় সরসা নদীতে আসা বন্যায় তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার শিখদের মূল দল থেকে আলাদা হয়ে যান। এর পর তাঁদের ধোঁকা দিয়ে মুঘল শাসক ওয়াজির খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যেখানে তাঁদের গ্রেফতার করে সিরহিন্দে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সিরহিন্দে তাঁদের এবং তাঁদের ভাইকে অনেক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। ঠান্ডা বুর্জ নামক দুর্গে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, যেখানে শীতকালে খুব ঠান্ডা থাকত এবং তাঁদের কোনো আরাম দেওয়া হত না। তা সত্ত্বেও, সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাই মুঘল শাসকদের দেওয়া রাজকীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে তাঁদের ধর্ম ত্যাগ করার বদলে সুখ-সুবিধা এবং রাজকীয় ভোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ছোট্ট শিশুর অতুলনীয় সাহস
এমনকি ছয় বছর বয়সেও, সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাই মৃত্যুর সামনে নিজেদের ধর্ম ত্যাগ না করে অত্যাচার সহ্য করার পথ বেছে নিয়েছিলেন। যখন তাঁদের এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা নিজেদের ধর্ম ছেড়ে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে শান্তিতে জীবন কাটাতে পারেন, তখন এই শিশুরা কোনো প্রকার দমনকারী শর্ত মানতে রাজি হননি। তাঁরা তাঁদের পিতা গুরু গোবিন্দ সিং জীর আদর্শে অটল ছিলেন এবং নিজেদের প্রাণের বিনিময়েও ধর্ম রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন।
২৬শে ডিসেম্বর ১৭০৫ সালে সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং সাহেবজাদা জোरावर সিংকে সিরহিন্দে শহীদ করা হয়। এই শাহাদাত শুধুমাত্র শিখ ধর্মের এক মহান ঐতিহ্য হয়ে ওঠেনি, বরং এটি মানবজাতির সর্বোচ্চ আদর্শকেও বাঁচিয়ে রাখার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তাঁদের শাহাদাত শিখ ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়
সাহেবজাদা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাইয়ের আত্মত্যাগ ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। এই শিশুরা যে সাহস ও সহনশীলতা দেখিয়েছিলেন, তা যেকোনো বড় চ্যালেঞ্জের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। তাঁদের বলিদান প্রমাণ করে যে সত্য ও ধর্মের পথে চলার জন্য কোনো প্রকার ভয় বা চাপ থাকতে পারে না। এই ছোট শিশুরা মহাত্মা গুরু তেগ বাহাদুর-এর নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং ন্যায় ও ধর্মের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন।
এক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে সাহেবজাদা ফতেহ সিং
সাহেবজাদা ফতেহ সিং-এর শাহাদাত আমাদের শিখিয়েছে যে আমাদের কোনো পরিস্থিতিতেই নিজের ধর্ম এবং নীতি থেকে সরে আসা উচিত না। এই মহান শহীদ শুধু শিখদের জন্য নয়, বরং পুরো মানবজাতির জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর আত্মত্যাগের গল্প প্রমাণ করে যে ধর্ম রক্ষার জন্য যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে এতটাই শক্তি থাকতে পারে যে সে মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে পারে।
আজও, সাহেবজাদা বাবা ফতেহ সিং এবং তাঁর ভাই সাহেবজাদা জোरावर সিং-এর শাহাদাত আমাদের উৎসাহিত করে যে আমরা যেন নিজেদের নীতিতে অটল থাকি, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন। তাঁদের বলিদান আজও আমাদের সকলের হৃদয়ে জীবিত আছে, এবং তাঁদের আত্মা আমাদের এটাই শেখায় যে সত্য ও ধর্মের পথে চলার জন্য আমাদের কখনও পিছপা হওয়া উচিত নয়।
```